Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দপুর ইউনিয়নের শাহবাজ গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি নিহত হন। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে এসে ড্রয়িং রুমে ঢুকে খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান। খুনিদের পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ জামায়াত বা উগ্রপন্থ’ীদের সন্দেহ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে দ্রুত খুনিদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। ৪৮ বছর বয়সী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। ২০১৫ সালে তিনি বিশেষভাবে আলোচনায় আসেন নিজ এলাকার এক প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে গুলি করার কারণে। এ ঘটনার পর তিনি দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন। ওই স্কুলছাত্রের বাবা তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে অন্য একজন মামলা দায়ের করেন। এ মামলার কারণে তিনি আত্মগোপন করেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে গাইবান্ধায় নিয়ে যায়। পরদিন আদালত তার জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ায় ৮ নভেম্বর তিনি অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করেন। ২৪ দিন কারাভোগের পর তিনি মুক্তিলাভ করেন। ওদিকে স্কুলছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় গত বছর ১০ এপ্রিল পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত শুনানি শেষে তাকে স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেন।
আলোচিত-সমালোচিত যা-ই হন, একজন সংসদ সদস্যের এভাবে নিহত হওয়া কেবল দুঃখজনক নয়, উদ্বেগজনকও বটে। দেশের আইনশৃঙ্খলা কতটা শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে, এ ঘটনা থেকে তার সম্যক পরিচয় লাভ করা যায়। সংসদ সদস্যেরই যদি কোনো নিরাপত্তা না থাকে, তিনি যদি দুর্বৃত্তের গুলিতে এরূপ মর্মান্তিকভাবে নিহত হন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, সেটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আসলে দেশে কোনো মানুষেরই ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। ঘাতক-সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের বাড় ও দৌরাত্ম্য এটাই বেড়েছে যে, মানুষ কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ বোধ করছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মানুষ নিহত হচ্ছে, কিংবা মানুষের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্য নানাবিধ কারণে মানুষ আক্রান্ত ও নিহত হচ্ছে। এই সঙ্গে চলছে গুম, অপহরণ, উঠিয়ে নেয়া, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও রাহাজানি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধ দমনে তৎপর থাকলেও অপরাধগুলো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান, গ্রেফতার, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধÑ কোনো কিছুই সন্ত্রাসী হামলা, হত্যাকা- ইত্যাদি রোধ করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলার এহেন পরিস্থিতি এর আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষ বিচলিত, শঙ্কিত ও আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। উন্নয়ন হোক, কিংবা অর্থনৈতিক কার্যক্রম হোক, তার প্রধান পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা ও নিশ্চিত নাগরিক নিরাপত্তা। দেশে আজ বিনিয়োগ নেই, ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে ভয়াবহ মন্দা। এর বড় কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা হলেও অবনত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নাগরিক নিরাপত্তার অভাবও কম দায়ী নয়। এই সঙ্গে আছে বিচারপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা ও আইনের শাসনের ঘাটতি। সার্বিক বিবেচনাতে বলা যায়, দেশে এক নজিরবিহীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এখন প্রধান জাতীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য যেমন রাজনৈতিক সুস্থিরতা দরকার, রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার, তেমনি দরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং সব ক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সন্দেহ নেই, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের নিহত হওয়ার ঘটনা মানুষের মধ্যে অনিরাপত্তাবোধ আরো বিস্তৃত করে দেবে। মানুষ আরো হতাশ, আরো আতঙ্কের গভীরে নিমজ্জিত হবে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, স্বাধীনতার পর সংসদ সদস্য হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এর বহু বছর পর ২০০৫ সালে হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া নিহত হয়েছিলেন। এর এক দশক পর সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিহত হলেন। আমাদের দেশে কোনো হত্যাকা-েরই দ্রুত বিচার হয় না। এ কথা সংসদ সদস্য হত্যার বিচার সম্পর্কেও সমান প্রযোজ্য। দ্রুত তদন্ত ও বিচার হলে হত্যাকা-ের ঘটনা অনেক কম ঘটত বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। আমরা আশা করতে চাই, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ঘাতকদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দ্রুত বিচার আদালতের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি দলকে ব্লেম গেমের পথ পরিহার করতে হবে। ব্লেম গেম তদন্তকে বিভ্রান্ত ও পথহারা করতে পারে। বিচার প্রক্রিয়াকে করতে পারে বিলম্বিত।



 

Show all comments
  • মোঃ আজম আলী ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    ভাই দেশের জে অবসতা। আমরা বিদেশে অনেক নিরাপদে আছি।দেশে আর জাইতে মনে চাই না।কি করবো।পরিবার আচে বলেই জেতে হয়।জাই হোক দেশে আয়িন ভালো হোক। মানুষ নিরাপদে থাকুক।ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:১৬ এএম says : 0
    আমরা সবাই আজ নিরাপত্তা হীনতার চরম পর্যায়ে চলে গেছি। এর থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হলে সকল মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন