Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খ্রিষ্টীয় নববর্ষ

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিষ্টীয় ২০১৭ সালের প্রথম দিন। গতকাল একটি বছরকে আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে ২০১৬ সাল। আমরা জানি, কাল নিরবধি, অবিভাজ্য। তারপরও আমরাই কালকে আমাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছি। কাল পরিক্রমায় আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণ করতে এবং আগামীর জন্য সুষ্ঠু-সুন্দর পরিকল্পনা করতে, যাতে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্য যতটা সম্ভব নিশ্চিত হয়, সে জন্যই এই কাল বিভাজন। তাই যখন কোনো বছর চলে যায় তখন আমরা সেই বছরের হিসাব-নিকাশ করতে বসি এবং আগামী বছরে কি করা উচিত বা করা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি। এই মূল্যায়ন ও ভাবনা ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীক, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রমাগ্রগতির জন্য জরুরি ও অপরিহার্য, ২০১৬ সালের মূল্যায়নে আমরা বলতে পারি, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বছরটি মিশ্রভাবেই কেটে গেছে। সেখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দুই-ই আছে। তবে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার মাত্রাই বেশি। ব্যক্তিজীবন অনেকেরই ঝড়-ঝাপটার মধ্য দিয়ে গেছে। জাতীয় জীবনে যে নানামুখী শঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা বিদ্যমান, তাতে ব্যক্তিজীবনে প্রকৃতপক্ষে কারোই ভালো থাকার কথা নয়। রাজনীতিতে অনেকদিন ধরেই একটা বন্ধ্যাত্ব ও অস্থিরতার আশঙ্কা চলমান রয়েছে। বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক অবস্থাও নানা বিপর্যয়ের শিকার। আসলে রাজনীতি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল না হলে অর্থনীতি স্থিতিশীল ও অগ্রসর হতে পারে না। জননিরাপত্তাও নিশ্চিত হতে পারে না। দেশের মানুষের জীবন এতটাই অনিরাপদ যে, অতীতে এ রূপ শঙ্কাতঙ্ক কখনোই দেখা যায়নি। সন্ত্রাসী হামলা, গুম, খুন, তথাকথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, কে কখন এ সবের শিকার হবে, কেউ  বলতে পারে না। সত্য বটে, রাজনৈতিক সঙ্কটকে কেন্দ্র করে গেল বছরে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমবতাস্থায়, এটাই আশা করার কথা যে, বিনিয়োগ-শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরদার হবে। তা হয়নি। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই অবনমন লক্ষ্য করা গেছে। অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভ রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে অধঃগতি দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারের প্রচার-প্রচারণায় উন্নয়নের জোয়ার চলছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা তেমন প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। জননিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ বলে প্রতিভাত হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলা, ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ওপর হামলা থেকে শুরু করে গুম-খুনের তা-ব, আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা মানবাধিকারের লংঘন, বিচারহীনতা ও আইনের শাসনের ঘাটতিতে দেশে বসবাসের উপযোগিতা মারাত্মকভাবে নমিত হয়েছে, হ্রাস পেয়েছে। দেশেই কেবল নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এনিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও বিচলন লক্ষ্য করা গেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা ঘটন-অঘটন ঘটেছে গতায়ু ২০১৬ সালে। যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জয়, সিরিয়া কেন্দ্রিক যুদ্ধ ও বিদ্রোহীদের পশ্চাদপসরণ, ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল, ফ্রান্সসহ কতিপয় দেশে সন্ত্রাসী হামলা, তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিতাড়ন ইত্যাদি নানা কিছু ঘটেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে আগের অবস্থাই-ই কমবেশি অব্যাহত দেখা গেছে। তবে তেলের ব্যাপক দরপতনে আরও একটি মন্দার আশঙ্কার কথা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন। বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের মেরুকরণের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন দেশে বিশেষত, ইউরোপ-আমেরিকায় বর্ণবাদী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতাবাদীদের উত্থান বিশ্বে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন কি বিদ্যমান সংঘাতময় পরিস্থিতি বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারেÑ এমন আশঙ্কা বিভিন্ন মহল থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। এরূপ অনেক কিছুই গেল বছর বপন বা অঙ্কুরিত হয়েছে, যা এ বছর দৃশ্যগ্রাহ্য হয়ে উঠতে পারে। আসলে বিশ্বে ভালো কোনো খবর নেই। শান্তি, নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন ও বিকাশের প্রত্যাশা বড় রকমের হুমকির মধ্যে পতিত হয়েছে। কিভাবে এই দুর্ঘটের অবসান ঘটবে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেই সেটা গভীরভাবে ভাবতে হবে। আজকের বিশ্বকে বলা হয়, গ্লোবাল ভিলেজ। কোনো ইতিবাচক ঘটনা ঘটলে যেমন তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া অন্যত্র পড়ে, তেমনি নেতিবাচক কিছু ঘটলেও পড়ে।
বলা হয়, গতস্য শোচনা নাস্তি। এ জন্য একথা বলা হয় যে, মানুষকে, মানব সমাজকে ও বিশ্ব সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব রাখে বলেই সব নেতিবাচক প্রভাবকে এড়িয়ে যেতে হবে। শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও বিকাশের লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশের অবস্থা কোনো দিক দিয়েই সন্তোষজনক নয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবিক, সামাজিক, সংস্কৃতিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক ধরনের হতাশা জমাট বেঁধে আছে। এ অবস্থার ইতিবাচক ও উদ্দীপনাময় পরিবর্তন সাধন অত্যাবশ্যক।  এ ব্যাপারে রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই প্রধান। তাদেরই রাজনৈতিক অবচলাবস্থা দূর করে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা ও গণতন্ত্রের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে হবে। রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরলে, গণতন্ত্র নিরাপদ ও কার্যকর হলে অর্থনীতিতে তার সুবাতাস পড়তে বাধ্য। অপার সম্ভাবনাময় এই দেশ নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। সর্বত্র আইনের শাসন নিশ্চিত হলে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, আপনা-আপনিই পিছু হটে যাবে। আইন-শৃংখলার উন্নতি হবে এবং নাগরিক নিরাপত্তাও ফিরে আসবে। স্বাভাবিকভাবেই চলতি বছর আমরা শুভ দিনের প্রত্যাশা করি। রাজনীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সবাইকে জাতীয় স্বার্থ ও কল্যাণের পক্ষে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সর্বোচ্চে স্থান দিয়ে  দেশ-জাতির সেবায় ব্রতী হতে হবে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করতে হবে। আমরা যদি পরিশুদ্ধ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হই, জনকল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইÑ তবে পথের বাধা অতিক্রম করা মোটেই কঠিন হবে না। আজকের দিনে আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, আগামী দিনগুলো আমরা সকলের জন্য শুভ, কল্যাণময় ও নিরাপদ করে তুলবো। পরিশেষে আমরা খ্রিষ্টীয় এই নববর্ষে আমাদের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সর্বস্তরের  মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন