Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশ

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

করোনা অতিমারি পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় আমাদের জাতীয় অর্থনীতি এক চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। এহেন বাস্তবতায় পূর্বঘোষিত কৃচ্ছ্রতা নীতি অনুসরণসহ কর্মসংস্থানের অনুকুল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমুহ যথাসম্ভব দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ(এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বাজেটে ঘোষিত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধিত আকার নির্ধারণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচিসমুহ যথাশীঘ্র বাস্তবায়ণ শুরু করার নির্দেশনা দেন। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দসহ সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বৈশ্বিক সংকট বিবেচনায় রেখে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ আপাতত স্থগিত রেখে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প, কর্মসংস্থান ও শ্রমঘন প্রকল্প এবং যে সব প্রকল্পে জনবলের ঘাটতি রয়েছে সে সব প্রকল্প অগ্রাধিকার হিসেবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে যর্থাথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে সংশোধিত বাজেট একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে পারে।

অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ক্রমবর্ধন থেমে নেই। প্রতিবছরই আগের বছরের উন্নয়ন বাজেটের আকারকে অতিক্রম করে চলেছে। তবে বাজেট যথাসময়ে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ ফেরত দিতে হয়, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প অর্থের অভাবে আলোর মুখ দেখতে পায়না। প্রধানমন্ত্রী মূলত এ ধরণের বাস্তবতার আলোকেই সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশনা বা অনুশাসন প্রকাশ করেছেন। সভা শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সংশোধিত বাজেট এবং তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে বিবৃতি দেন। এ সময়ে কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প বরাদ্দ স্থগিত করা হলেও বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে ১৩৩টি নতুন প্রকল্প সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের সর্বোচ্চ(প্রায় ৪ শতাংশ) বরাদ্দ প্রাপ্ত দু’টি খাত হচ্ছে, যোগাযোগ ও পরিবহন এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি। বলাবাহুল্য, এ দুই খাতের বিশাল বরাদ্দের স্বচ্ছ ও সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ ও তদারকি নিশ্চিত করার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিক ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নির্ধারিত প্রকল্পগুলোতে সব ধরণের আমলাতান্ত্রিক অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের প্রবণতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে এক ধরণের বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করছে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে মানুষের আয়বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক সরকারি প্রকল্পগুলো কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাতে পারে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে, উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দুষ্টচক্রের কুপ্রভাব সম্পর্কে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে সচেতন থাকতে হবে। সংশোধিত বাজেটের আকার কমলেও কর্মসংস্থান ও সংস্কারমূলক প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন কর্মপ্রবাহ সৃষ্টির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক। প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু দুষ্টচক্রের কালোহাত যেন প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিতে না পারে, সে দিকে নজর রাখাও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে কিংবা আইএমএফ’র চাপে স্বল্প সময়ে বার বার বিদ্যুত ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির খড়গ যেন সামগ্রিক উৎপাদনশীলতাকে শ্লথ করে দিতে না পারে, সে দিকটিকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের বিশাল অংশ বাস্তবায়ন করতে না পারা এবং শেষদিকে যেনতেন উপায়ে অর্থ ব্যয়ের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে কোনো আশঙ্কাকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সামগ্রিক বাস্তবতার নিরীখে সংশোধিত বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থপ্রবাহ সৃষ্টির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।



 

Show all comments
  • Rezaul Karim ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:৪৩ এএম says : 0
    ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • aman ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:৪৪ এএম says : 0
    সবকিছুতে যদি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগে তাহলে অন্যরা মন্ত্রীপরিষদের সদ্স্যদের পদত্যাগ করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Kma Hoque ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:৪৫ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে যর্থাথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে সংশোধিত বাজেট একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন