পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশীদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে ভারতীয় মাদক ও চোরাকারবারিরা বিএসএফএর গুলি বা হত্যাকাণ্ডের শিকার না হলেও সীমান্তে বাংলাদেশের কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করে। নিরপরাধ নারী ও শিশুও বিএসএফ’র গুলির নিশানা থেকে বাদ যায়না। বিএসএফ’র গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানির লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য সীমান্তে বিএসএফ’র নির্মমতার প্রতীক হয়ে রয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বিএসএফ তা প্রতিপালন করছে না। গত দেড় দশকে ভারতের প্রত্যাশিত সবকিছুই দিয়েছে বাংলাদেশ। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। উপরন্তু সীমান্তে বিএসএফ হত্যাকাণ্ডের মাত্রা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতা থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর বিনিময়কালে ভারতীয়রা সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ মারনাস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বের সব অঞ্চলেই যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্থল বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের জন্য বৈধ-অবৈধ উপায়ে সাধারণ মানুষের সীমান্ত পারাপারের ঘটনা ঘটে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থল ও নৌসীমা ও মেক্সিকো সীমান্তে হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করে সীমান্তরক্ষিদের হাতে ধরা পড়তে দেখা গেলেও বাংলাদেশ সীমান্তের মত গুলি করে হত্যার ঘটনা খুবই বিরল।
প্রায় অভিন্ন সামাজিক বাস্তবতা এবং বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশের হাজার কিলোমিটারের স্থল সীমান্তে পারাপারের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। সীমান্তরক্ষীদের কাজ মাদক-অস্ত্রসহ অবৈধ চোরাচালান বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারসহ আইনগত প্রক্রিয়ায় সাজা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্ত বিএসএফ কোনো নিয়মের ধার না ধেরে সীমান্তে বাংলাদেশীদের নির্যাতন ও হত্যা করছে। গ্রামে হানা দিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। রৌমারি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষিরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশের কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে এসে হামলা চালাতে গিয়ে বড় সংঘর্ষ এবং ট্রাজিক পরিনতির শিকার হওয়ার নজিরও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিএসএফ’র হত্যা নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় নেতাদের প্রতিশ্রুতির পর ২০১৮-১৯ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমে এসেছিল। এক রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ১৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৩৮ জন বাংলাদেশী বিএসএফ’র সীমান্ত হত্যার শিকার হয়েছিল। তবে করোনা শুরুর আগে ২০২০ সালে জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে বিএসএফ’র গুলিতে ১৫ জন বাংলাদেশী নিহত হওয়ার খবর বেরিয়েছিল। সীমান্তে বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সাথে ভারতের বৈরি আচরণ ছাড়া কিছুই নয়। বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র মিষ্টি খাওয়া, রাখি বন্ধনের মাধ্যমে সুসম্পর্ক দেখানো হলেও নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। শুধু তাই নয়, সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে বিভিন্ন সেচ প্রকল্প, রাস্তা এবং উন্নয়ন কাজে বিএসএফ’র বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিতর্কিত সীমান্ত আইনের কারণে সীমান্ত ভাঙনে বাংলাদেশ ভূমি হারাচ্ছে। সরকারের উচিৎ সীমান্তে নদীভাঙন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। অব্যাহত গুলিবর্ষণ, হত্যাকান্ড, লুণ্ঠন-বর্বরতার বিরুদ্ধে বিজিবির শক্ত অবস্থান এবং সরকারের জোরালো কূটনৈতিক ভমিকা প্রয়োজন। বিএএসফ দেশের মানুষের জানমাল নিয়ে যেমন খুশি তেমন করবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা কোনোভাবেই চাই না সীমান্তে আবার রৌমারি সীমান্তের মতো কোনো ধরনের ঘটনা ঘটুক।
সীমান্তে বিএসএফ’র বর্বরতার প্রতিকার এবং এর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোদাগাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিএসএফ সদস্যরা স্থানীয় রাখালদের মারধর করে গরু-মহিষ লুটে নিতে চাইলে রাখালদের প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাতের মুখে বিএসএফ সদস্যরা দুটি রাইফেল ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সীমান্তে বিএসএফ’র নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করা শুরু করেছে। শুধু সীমান্তের সাধারণ মানুষই নয়, দেশের সবার উচিৎ বিএসএফ’র নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এগিয়ে আসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।