Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেদখল জমি উদ্ধার করে বিক্রি করা যেতে পারে

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২ মার্চ, ২০২৩

বিভিন্ন সংস্থার আয়ত্ত্বাধীন সরকারি জমির মধ্যে বিশাল অংশই নানাভাবে বেদখল হয়ে আছে। প্রভাবশালী মহলের দখল প্রক্রিয়া এবং সরকারের তরফ থেকে পুনরুদ্ধারের অভিযান চলমান থাকায় ঠিক কি পরিমাণ ভূমি বেদখল রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই। তবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও পুনর্দখলের নামে এক ধরনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আইনগত প্রক্রিয়ায় দখল উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত জমি সংরক্ষণ বা জনস্বার্থে ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ফেলে রাখা বা খালি জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা সহজেই দখল করে নিয়ে স্থাপনা নিমার্ণ করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় তদারকি ও নজরদারির অভাবে দশকের পর দশক ধরে বেদখলে থাকা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক আয়োজন ও ঢাকঢোল পিটিয়ে সফল অভিযান পরিচালনার পর দু’এক বছরের মধ্যেই তা পুনরায় বেহাত হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের দখল উচ্ছেদ থেকে শুরু করে রেলওয়ে ও ঢাকার ফুটপাত, অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদের ক্ষেত্রে বার বার একই ধরনের দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা গেছে।
নদনদী ও জলাভূমিগুলো পরিবেশ ও ভূপ্রকৃতিগতভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণের ফলে সারাদেশে শত শত নদনদী বুকে পলি জমে সংকীর্ণ খালে পরিনত হয়েছে। এসব নদীর চর ও পাড়ের জমিগুলো অবৈধ দখলের শিকার হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও রেলমন্ত্রনালয় এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন জমি ও সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা বা সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিদ্যমান আইন ও পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়টি অগ্রাহ্য করে বছরে ৪৬ হাজার একর জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে ঢাকার আশপাশের শতকরা ৯০ শতাংশ জলাভূমি ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। ঢাকার চারপাশের নদী এবং শহরের ভেতরে থাকা খাল ও নি¤œভূমিগুলো ভরাট ও বেদখল হওয়ার পরিনতি এখন শহরের বাসিন্দাদের ভোগ করতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যাওয়া এবং স্যুয়ারেজ লাইনগুলোতে অচলাবস্থার মূল কারণ অবৈধভাবে খাল ও নদী দখল, ভরাট এবং অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ। এ কারণে ইতিমধ্যেই ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম দূষিত, বসবাসের অযোগ্য এবং ভূমিকম্প ও পরিবেশগতভাবে উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার ও উচ্ছেদ অভিযানের ক্ষেত্রে পরিবেশগত নিরাপত্তা ও দুর্যোগ-ঝুঁকির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, রাজউক ও আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে প্রায় প্রতিবছরই কয়েকবার সরকারি জমি উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালিত হতে দেখা যায়। এসব অভিযান এখন আর সাধারণ জনগণের কাছে আস্থা বা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছেনা। ২০১৯ সালে বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার চারনদীর সীমানা নির্ধারণ ও সীমানা পিলার বসানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। সে সময় প্রকাশিত রিপোর্টে ২০১০ সাল থেকে এক দশকে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা থেকে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬১২.২২ একর সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল, যদিও নদীগুলোর দুইপাড়ে ২২০ কিলোমিটার সীমানা নির্ধারণ ও দখল পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি জমি উদ্ধার হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে তিনবছর অতিক্রান্ত হলেও অবস্থা খুব একটা বদলায়নি। যে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধার করা হয়েছে সে সব জমি সংরক্ষণ ও জনস্বার্থে ব্যবহারে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সঠিক চিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়না। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জবরদখলে থাকার সরকারি জমি পুনরুদ্ধারে একটি বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি সেখানে নানা বাঁধাবিপত্তি ডিঙিয়ে সরকারি জমি উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করে সফল হয়েছেন বলে জানা যায়। আমরা আশা করব তিনি ঢাকায়ও সফল হবেন। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে পুনরুদ্ধার হওয়া জমির যথাযথ সংরক্ষণ, জনস্বার্থে ব্যবহার নিশ্চিত করতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। পতিত, খাস, উদ্ধারকৃত জমিগুলো কৃষি ও খামারের জন্য লীজ দেয়া যেতে পারে, শর্তসাপেক্ষে বিক্রীও করা যেতে পারে। দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। সরকারের হাতে টাকা নেই। সরকার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছে। এমতাবস্থায় বেদখলী জমি উদ্ধার করে বিক্রী করে সরকার লাভবান হতে পারে। এতে জমি উদ্ধারের নামে বার বার কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় থেকেও রেহাই পাওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে, অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর দুই পাড়ের জমি পুনরুদ্ধারের পর সেখানে রাস্তা, গাড়ি পার্কিং, উন্মুক্ত পার্ক, ইকো পার্ক ও সরকারি মালিকানাধীন স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন