পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইট, রড, সিমেন্ট প্রভৃতি নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারি প্রকল্পসমূহের কাজে অনাকাঙ্খিত ধীরগতি নেমে আসে, এমন কি অনেক প্রকল্পের কাজ ঠিকাদাররা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, সরকারি অর্থছাড়ে বিলম্ব, নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চমূল্য, ঠিকাদারদের বকেয়া বিল পরিশোধ না করা ইত্যাদি কারণে চলমান প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার এক হাজার ১৬টি প্রকল্পের বেশির ভাগের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশের কাজ এখন প্রায় বন্ধ। প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে বা যথাসময়ে শেষ না হলে কী হয়, সেটা কারো অজানা নেই। সময় বাড়ে, ব্যয় বাড়ে এবং প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। অন্যদিকে ঠিকাদাররাও অহেতুক ঝুলে থাকে প্রকল্পের সঙ্গে। তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ নির্মাণ শিল্প সমিতির সভাপতি ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, চলমান প্রকল্পগুলোর সবই ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দ পাওয়া। করোনা ও যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এমতাবস্থায়, অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, কাঁচামালের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ঠিকাদারদের পক্ষে নির্ধারিত বরাদ্দে কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়। ঠিকাদারদের দিক থেকে বারবারই শিডিউল অভ রেট সংশোধন এবং বকেয়া বিল পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের অনুরোধ গ্রাহ্যতা পেয়েছে। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি ঠিকাদারদের জন্য ইট, রড, সিমেন্ট, বিটুমিনসহ ২৩ ধরনের নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ও সময়োযোগী। ঠিকাদাররা স্বভাবতই সস্তুষ্ট। তারা অবশ্য মনে করে, দাম যতটা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, ততটা বাড়ানো হয়নি। ভবিষ্যতে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
বাস্তবতা তো এই, কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজই হচ্ছে। ইতোমধ্যে আরো যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তাদের কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। সরকারি এক হাজার ১৬টি প্রকল্পের বর্ণিত হাল উদ্বেগজনক। যা হোক, অবশেষে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ানোর ফলে সঙ্গতকারণেই ধারণা করা যায়, অচিরেই প্রকল্পগুলোর কাজ পুরোদমে শুরু হবে। শুরু হলে উন্নয়নে গতি আসবে। দ্রুত শেষ হবে কাজ এবং উপকার প্রত্যাশীরা উপকার লাভ করবে। উন্নয়ন কাজ হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে। বহুলোক কাজ পাবে। তাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এই দুর্দিনের বাজারে তার প্রয়োজন প্রশ্নাতীত। উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোত। টেকসই উন্নয়ন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তরান্বিত করে। করোনা ও যুদ্ধ বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতির মতো আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে। মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ঘাটতি, ডলার সংকট, উচ্চ খাদ্যমূল্য ইত্যাদি এই আঘাতেরই ফল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বারবার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা বলছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছেন। গত পরশুও এক স্মরণসভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, তার সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহামারি ও যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যদিয়ে চললেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে প্রাণবন্ত আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করবে তাতে দ্বিমত নেই।
আশা করা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে ঠিকাদাররা অনুপ্রাণিত হবে, ফেলে রাখা কাজে দ্রুত হাত দেবে এবং ধীরগতির কাজে গতি আনতে সচেষ্ট হবে। কাজে গতি আনলেই হবে না, কাজ যেন মানসম্পন্ন হয়, সেটাও তাদের নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা কাজের জন্য যে টাকা পায়, তা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। অনেকে অবশ্য আশংকা করছে, সরকারিভাবে ইট, রড, সিমেন্ট ইত্যাদির দাম বাড়ানোতে সরকারি ঠিকাদাররা লাভবান হলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বেসরকারি আবাসনখাতে। সরকারনির্ধারিত দামে নির্মাণ উপকরণ কিনতে হলে ফ্ল্যাটের দাম বেশি পড়বে, যা ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। আমাদের বেসরকারি আবাসনখাতও খুব ভালো অবস্থায় নেই। নানা সমস্যায় খাতটি জর্জরিত। এ খাতের কথাও ভাবতে হবে। এ দেশে একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়, একবার কোনো জিনিসের দাম বাড়লে আর কমে না; বাড়তেই থাকে। এক্ষেত্রেও তা হতে পারে। তাই নির্মাণ উপকরণের দাম যাতে যথেচ্ছ বাড়তে না পারে; সরকারি দামে স্থিতিশীল থাকে, সেটা সর্ব প্রযতেœ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।