পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পদ্মায় পানি নেই। তিস্তার মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ফারাক্কা পয়েন্টে পানি আসছে না। উজানে চর পড়ে গেছে। গঙ্গার পানি ভাগাভাগির যে চুক্তি আছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে, তাতে বলা হয়েছে, ফারাক্কা পয়েন্টে যে পানি আসবে, তাই দু’ দেশের মধ্যে বণ্টন হবে। ফারাক্কা পয়েন্টে পানি না আসায় বণ্টনের প্রশ্ন তাই উঠছে না। এর মানে হলো, চুক্তি মোতাবেক গঙ্গায় পানির হিস্যা বাংলাদেশ পাচ্ছে না। এ পর্যন্ত কোনো বছরই পায়নি। শুকনো মওসুমে প্রতি বছরে পদ্মায় পানিসংকট চরমে ওঠে। দিগন্ত বিস্তৃত চর জাগে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে মানুষ হেঁটে এপার-ওপার যাতায়াত করে। দু’ দেশের মধ্যে চুক্তির পরও বাংলাদেশ গঙ্গার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিস্তার নিয়ে তো কোনো চুক্তিই নেই। চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে। ভারত নানা অজুহাতে চুক্তি আটকে রেখেছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও ব্যারেজ পয়েন্টে পানি সমান্য। পুরো নদী এখন রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী।’ তবে অনেক ‘বাঁক’ই পানিশূন্য। পদ্মা-তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চলের কোনো নদীতেই পানি তেমন একটা নেই। কোথাও তির তিরে পানি বইছে, কোথাও বুক জুড়ে বালু-মাটি। ইনকিলাবে খবর ছাপা হয়েছে, দিনাজপুরের ১১ নদী এখন মরা খাল। পানি নেই। নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। জয়পুরহাটের ৬ নদীতে পানি নেই, সেচ ব্যহত হচ্ছে। গোটা বরেন্দ্র অঞ্চল এখন খরার কবলে। এ অঞ্চলের ২২ জেলা ধুকছে খরায়। নদনদী পানিশূন্য পত্রিকান্তরে প্রকাশ, নঁওগার ৭ নদী শুকিয়ে কাঠ। বোরো আবাদ গভীর সংকটে।
এই হলো দেশের একটি অঞ্চলের হাল অবস্থা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থাও এর চেয়ে ভালো নয়। বলা যায়, পুরো দেশেই চলছে অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপ। শীতে ও অব্যবহিত পরে সচরাচর এমন বৃষ্টিশূন্য হতে দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু সংকটই এর মূলে। শুকনোর সময় নদনদী, খালবিল ও জলাশয়ে পানি এমনিতেই কমে যায়। বৃষ্টি একেবারেই না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এবার আমরা সেরকম একটা অধিক অবনত পরিস্থিতিরই সম্মুখীন। আগে শুকনোর সময় পানি কমলেও পানির প্রাকৃতিক আধারগুলো একদম পানিহীন হয়ে পড়তো না। গত অর্ধশত বছর ধরে ভারত অভিন্ন নদনদীর পানি একতরফাভাবে ছিনিয়ে নেয়ায় ইতোমধ্যে অনেক নদী মরে গেছে, অনেক নদী খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মা-তিস্তার মতো বড় নদীতেই যেখানে পানি নেই, সেখানে এদের শাখা-উপশাখাতে পানি থাকবে কীভাবে? এককালে নৌপথই ছিল যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের প্রধান অবলম্বন। এখন পানি না থাকায় নৌপথ মাত্র কয়েকহাজার কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। নদনদী, খালবিল, জলাশয় কেবল পানির উৎসই ছিল না, ছিল মাছেরও উৎস। এখন পানি না থাকায় ও পরিধি কমায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। দেশীয় মাছের অনেক প্রজাতিই এখন হারিয়ে গেছে। নদনদী, খালবিল সেচের পানির প্রধান জোগানদার। এসব উৎসের পানি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি সেচের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ভূগর্ভ থেকে নির্বিচারে বিপুল পরিমাণে পানি ওঠানোর কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ভূমিধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শংকা বাড়ছে।
নদনদী, খালবিল এবং তাদের পানি আমাদের জীবনযাত্রার ধারা, কৃষি উৎপাদন, মৎস্যপ্রাপ্তি, যাতায়াত, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির জন্য কতটা প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য, তা বলে শেষ করা যাবে না। নদনদী, খালবিলসহ পানির সব আধার রক্ষা করার বিকল্প নেই। এদিকে আমাদের নজর ও উদ্যোগ মোটেই উল্লেখযোগ্য নয়। অভিন্ন নদনদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমাদের গরজ আছে বলেই মনে হয় না। বিষয়টি ভারতের সদিচ্ছার ওপর আমরা ছেড়ে দিয়েছি, যে সদিচ্ছা ভারত কখনোই দেখাবে না। জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে এরূপ অবহেলা দুর্ভাগ্যজনক। ভারতের সঙ্গে আমাদের পানির মামলা অবশ্যই জোরদার করতে হবে। এই সঙ্গে সংবৎসর প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রস্তাবিত গঙ্গা বাঁধ ও তিস্তা বাঁধ প্রকল্প যতদ্রুত সম্ভব হাতে নিতে হবে। দরকার হলে আরো প্রকল্প নিতে হবে। এবার অনাবৃষ্টি, খরা, জ্বালানি সংকট, ডলার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে বোরো আবাদসহ ফলমূল, শাকসবজির আবাদ ব্যহত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ধানের মধ্যে বোরোর আবাদ সবচেয়ে বেশি। এ আবাদ কোনো কারণে কম হলে দেখা দিতে পারে খাদ্যসংকট। সারা বিশ্বেই খাদ্যসংকটের আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশে খাদ্যপরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। ভরা মওসুমেও চালের দাম বাড়ছে। মাছ, গোশত, তরিতরকারি, শাকসবজির দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এমন কোনো পণ্য বা জিনিস নেই, যার দাম প্রতিনিয়ত না বাড়ছে। সামনে পবিত্র রমজান মাস। ওই সময় পণ্যমূল্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে! বোরো আবাদ উৎপাদন বাড়াতে হলে সেচের পানি ও সার নিশ্চিত করতে হবে। সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করতে হবে। এজন্য বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ, তেলপাম্পের জন্য তেল নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে তেলচালিত (ফার্নেস অয়েল) বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন সচল রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। অন্যদিকে একই কারণে ডিজেল আমদানি ব্যহত হলে তেলচালিত সেচপাম্প চালু রাখাও অসম্ভব হতে পারে। এর অর্থ, বোরোর উৎপাদন ব্যহত হবে। যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা সরকারকে এখনই করতে হবে। জ্বালানিতেল আমদানিতে প্রয়োজনীয় ডলার যোগান দিতে হবে। নদনদীতে পানি কমে যাওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ বাড়ানোর একটা সুযোগ এসেছে। নদী ও চরে আবাদ এমনিতেই হয়। এবার তা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর প্রকৃতি ও পরিধি ঠিক রেখে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হলে উৎপাদন বাড়বে, জাতীয় উৎপাদনে যা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।