পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণব্যয় ও বাস্তবায়নের সময় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। গত বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ব্যয় বৃদ্ধির দু’টি প্রস্তাবে ২৭০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এ নিয়ে এই প্রকল্পটি তিনদফা ব্যয়বৃদ্ধি করা হলো। শুরুতে ২০১১ সালে প্রকল্পটির প্রাক্কলন ব্যয় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল। দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতি এবং নকশায় বড় ধরনের ত্রুটির কারণে পর পর দুই দফায় একই সাথে সময় এবং ব্যয়বৃদ্ধির ফলে এ পর্যন্ত প্রকল্পের খরচ শতকরা ৫৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকায় উঠেছে। তিন অংশে বিভক্ত ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ দেয়া হয় ভারতীয় কোম্পানি সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানা লিমিটেডের যৌথ কোম্পানি এবং চীনের নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে। তবে ইতিমধ্যে প্রকল্পের নকশায় বড় ধরনের ভুল সংশোধন ছাড়াও প্রকল্পের আকার সম্প্রসারণের অজুহাত তুলে ব্যয়বৃদ্ধিকে জায়েজ করা হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোথাও কোথাও পাইলিং-এর কাজও শেষ হয়নি। অস্বাভাবিক ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াও প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি ও যানজটের সামাজিক-অর্থনৈতিক মূল্য আরো অনেক বেশি।
তৃতীয় বিশ্বের নি¤œ আয়ের একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণব্যয় বিশ্বের যে কোনো উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। অথচ এখানে শ্রমিকের মজুরি আন্তর্জাতিক বাজার বা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে অনেক কম। অনেক বেশি মূল্যে অবকাঠামো নির্মিত হলেও বাস্তবায়নের সময়কাল এবং কাজের মান দুই ক্ষেত্রেই অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যায়, গত এক দশকে বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণব্যয় ২৫ গুণ বেড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে যেখানে ভারতে ব্যয় হয় গড়ে ১০ কোটি টাকা, চীনে ১০ কোটি টাকা, ইউরোপে ২৯ কোটি টাকা, সেখানে বাংলাদেশে ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৫৪ কোটি টাকা। তবে ফোরলেন ফ্লাইওভারের হিসাব আলাদা। সর্বশেষ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বৈদেশিক ঋণে এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এভাবেই সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশে পরিণত হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের এই ব্যয়বাহুল্যের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
অবকাঠামো খাতের প্রায় প্রতিটি মেগা প্রকল্পেই অস্বাভাবিক ব্যয়বৃদ্ধি, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বার বার সময়বৃদ্ধি ও সময় ক্ষেপণের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। তবে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প সময়মত বা নির্ধারিত সময়ের আগেই বাস্তবায়নের উদাহরণও আছে। এ থেকে বোঝা যায়, স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হলে নির্ধারিত ব্যয়ে ও সময়ে অবকাঠামো নির্মাণ আমাদের দেশে অসম্ভব নয়। যেখানে চীনা ও ভারতীয় কোম্পানিগুলো নিজ দেশে তুলনামূলক অনেক কম খরচে ও কম সময়ে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে যৌথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা যথাসময়ে এবং প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চারলেন প্রকল্প, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রকল্পসহ প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই অস্বাভাবিক হারে ব্যয়বৃদ্ধি ও সময় বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণব্যয় ৭০০ কোটি টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এরপরও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নির্মাতা ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির দায়ভার বহন করতে হয় অবকাঠামো ব্যবহারকারী সাধারণ জনগণকেই। নির্মাণচুক্তি লঙ্ঘন করে ফ্লাইওভারের টোলের হার শুরু থেকেই দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে বেখেয়াল। দুই দফা সময় বৃদ্ধি শেষে গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে আরো এক বছর পেরিয়ে গেছে। আরো ২৭০ কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হলেও কাজ কবে শেষ হবে সে নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। মেগাপ্রকল্পের নামে জনভোগান্তি এবং হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয়-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।