Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খরা পরিস্থিতি : খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশে ভয়াবহ খরা পরিস্থিতি চলছে। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাব খাদ্য উৎপাদনসহ পুরো পরিবেশে পড়ছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পরিস্থিতি আগামী ৫ থেকে ৬ মাস চলতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে গত তিন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়নি। অনাবৃষ্টিতে কেটেছে। সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে কম-বেশি স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এ বছর তা হয়নি। এতে কৃষি চরম ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বোরো চাষের মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা বোরো ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। খরার এই প্রভাব শুধু বোরো চাষে নয়, সামগ্রিকভাবে মৌসুমী ফল-ফসল থেকে শুরু করে মৎস্য চাষেও পড়ছে। অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিজমি ও খাবার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলা উচ্চ খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ উপরিভাগের পানির উৎস নদী-নালা, খাল-বিলে পানি কমে গেছে। এতে ফসলাদি উৎপাদনের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়ছে। এ পানি উত্তোলন করতে গিয়ে সেচের বাড়তি খরচ জোগাতে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হবে। সার্বিক এ পরিস্থিতিতে আগামীতে খাদ্য উৎপাদনের পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না।

বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুঁকির মধ্যে যে কয়টি দেশ রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিগত কয়েক বছর ধরে তার আলামত পরিদৃষ্ট হচ্ছে। ছয় ঋতুর দেশে গ্রীস্ম ও বর্ষা প্রধান হয়ে উঠেছে। শীতের সময় কোথাও তীব্র কোথাও শীত থাকে না। শীত তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। বসন্ত সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অবস্থায় থাকলেও এখন গ্রীস্মের মতো অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা ত্রিশ সেন্টিগ্রেডের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বসন্তেই গ্রীস্মের তাপ অনুভূত হলে গ্রীস্মে যে গরম অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে, তা বলা বাহুল্য। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন খাদ্যশস্য উৎপাদনে আঘাত হানছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার যে কথা বলা হচ্ছে, তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই খরা দেখা দেয়ায় উৎপাদন ব্যাহত ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। যেখানে পানির অভাবে বোরোর চারা মরে যাচ্ছে, সেখানে উৎপাদন হবে কিভাবে? কৃষক যে সেচ বা পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করবে, সেই সক্ষমতাও তার সীমিত। একদিকে বিদ্যুৎ সংকট, অন্যদিকে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিতে তাদের পক্ষে খরচ কুলিয়ে উঠা অসম্ভব। আসন্ন গরমে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করা হবে বলে পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। কীটনাশক আমদানি কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আরও ৬ মাস খরা পরিস্থিতি বিরাজ করলে কী হবে, কৃষিখাত যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। এ পরিস্থিতির মধ্যেও যারা উৎপাদন করছে, তাদের উৎপাদন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। চালের দাম কমার পরিবর্তে হু হু করে বেড়ে চলেছে। বোরো উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে, চালের দাম আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের হাত থাকে না। এটা প্রকৃতি প্রদত্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, খরা, ফসলহানিসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। আবার এটাও বলা হয়ে থাকে, কোনো জনপদে প্রাকৃতিক বিপর্যয় তখনই ঘটে, যখন সে জনপদের মানুষের মধ্যে অতিমাত্রায় পাপ, অপরাধ ও অন্যায় দেখা দেয়। প্রাকৃতিক এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এক্ষেত্রে, মানুষের মধ্যে হুঁশ ফিরে আসা জরুরি। চলমান যে খরা পরিস্থিতি চলছে, তা প্রকৃতিগতভাবেই হচ্ছে। তবে তা মোকাবেলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনাবৃষ্টির অন্যতম কারণ প্রকৃতি ধ্বংস করা। আমাদের দেশে নির্বিচারে খাল-বিল, নদী-নালা, পাহাড়, প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নদ-নদী নাব্য হারিয়ে মরে যাচ্ছে। পানি সংকটকে তীব্র করে তুলছে। চলমান খরা পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কিংবা তার চেয়ে অধিক খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। খাদ্য উৎপাদন যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় এবং কৃষকরা স্বাচ্ছন্দে কৃষি উপকরণসহ সহজে সেচ সুবিধা লাভ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের উচিৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন