পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মুসলমানের অত্যাবশ্যকীয় প্রতিপালনীয় এবাদতের অন্যতম হচ্ছে হজ। বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হজ পালনের উদ্দেশ্যে নানাভাবে সউদি আরব গমন করে থাকেন। গন্তব্যের রকমফের ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একেক দেশ থেকে হজ পালনের খরচ একেক রকম। বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে বিগত দুই বছর সীমিত আকারে হজ পালনের সুযোগ রাখা হলেও সউদি সরকারের সাথে চুক্তি অনুসারে এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার মানুষ হজ পালনের সুযোগ পাবেন। তবে ডলার সংকটের অজুহাতে তুলে পবিত্র হজ পালনের খরচও এবার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে এ বছর হজের সর্বনি¤œ প্যাকেজ মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। কোরবানির খরচ হিসাব করলে তা ৭ লাখ টাকার উপরে দাঁড়াবে। গত বছরের চেয়ে দেড় লক্ষাধিক টাকার বেশি খরচ ধরা হয়েছে এবার। করোনা অতিমারির আগের(২০১৯) সাথে তুলনা করলে এবারের হজ খরচ প্রায় দ্বিগুণ। সউদি আরব হজের খরচ না বাড়ালেও ডলার সংকটের কারণে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধিসহ ডলার ও সউদি রিয়েলের সাথে টাকার মূল্যমানের অবনমনকে খরচ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
চুক্তি অনুসারে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের হজে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও অস্বাভাবিক খরচ বৃদ্ধির কারণে হজ নিবন্ধনে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ নিবন্ধন শুরু হলেও প্রথম ধাপের জন্য নির্ধারিত ১৫ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র সাড়ে ১৩ হাজার মানুষ আগামি জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য হজের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। অগত্যা সময়সীমা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। বিভিন্ন হজ এজেন্সিতে প্রাথমিকভাবে হজের জন্য নিবন্ধিত হওয়ার পরও খরচ বৃদ্ধির কারণে অনেকে টাকা তুলে নিয়ে ওমরা পালনের নিয়ত করছেন বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। দুই বছর আগেও যেখানে একলাখ টাকায় ওমরা পালন করতে সউদি আরব যাওয়া যেত এ বছর বিমান টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটের কারণে ওমরা হজের খরচও প্রায় দ্বিগুনে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন বিমান সংস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ বিমানও যথেচ্ছভাবে ঢাকা-জেদ্দা ফ্লাইটের খরচ বাড়িয়েছে। ডলার সংকটের কারণে দেশে টাকা পাঠাতে না পারা এবং টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় গাল্ফ এয়ার ও এমিরেটস্এ টিকিটের মূল্য গত দুইমাসে দেড়শ থেকে ৩শ ডলার বেড়ে গেছে। এ সময়ে ঢাকা-জেদ্দা রুটে বিমান বাংলাদেশের ভাড়া ২শ ডলার বাড়ানো হয়েছে। এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য মেনে নিয়েও হজে যাওয়ার নিয়ত বাদ দিয়ে আগামি রমজান মাসে ওমরা পালন করতে সউদি আরব যাওয়ার চিন্তা করছেন অনেকে। এতেও নির্ধারিত মূল্যে টিকিট না পাওয়াসহ নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন ভুক্তভোগিরা।
বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশ থেকে সউদি আরবে হজযাত্রায় হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। করোনাকালের আগ পর্যন্ত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে ৫০ বছর ধরে হজের খরচের উপর বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। জাহাজ ও স্থলপথের বদলে আকাশপথে হজযাত্রায় উৎসাহিত করতেই এই ভর্তুকি ঘোষণা করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে হজের ভতুর্কি বন্ধ করে সে টাকা মুসলমান ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাখাতে ব্যয় করতে সুপ্রীম কোর্টের একটি নির্দেশনার সুযোগে ২০১৯ সাল থেকে তা বন্ধ করে দেয় সে দেশের সরকার। এরপরও ভারত থেকে হজ পালনের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ মুসলমান জনসংখ্যাবহুল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই হজের ব্যয় সম্ভবত সর্বোচ্চ। প্রতিবছরই হজের সময় ফ্লাইট জটিলতা, টিকিট সংকটসহ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় হাজিদের। এখন অস্বাভাবিক ব্যয়বৃদ্ধির কারণে হজের কোটা পুরণ করা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রথমত হজের এয়ার টিকেটের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা ও যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অত্যাধুনিক জাহাজে এবং ভারত-পাকিস্তান হয়ে স্থলপথে হজযাত্রার পথ সুগম করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশের একটি বড় শিপিং কোম্পানি অনেক কম খরচে বহুতল জাহাজে মাত্র ৮দিনে চট্টগ্রাম-জেদ্দা নৌ ফ্রেইট চালুর প্রস্তাব করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনীহা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। হজ যাত্রা নিয়ে বিভিন্ন এভিয়েশন কোম্পানির সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি ও হজযাত্রীদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে হলে হজের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৌপথ ও রেলপথে হজে যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবতে হবে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কতিপয় এভিয়েশন কোম্পানি, হজ এজেন্সির সিন্ডিকিটেড মুনাফাবাজি ও সরকারি নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে হজ গমনেচ্ছুরা ফরজ এবাদত থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে না। নৌপথে হজযাত্রী পাঠানোর বিকল্প প্রস্তাব সম্পর্কে একটি সমন্বিত ত্বরিৎ সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।