পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের দেশে কয়েক শ্রেণীর নাগরিক বসবাস করে। যেমন, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, অতিদরিদ্র এবং ভিক্ষুক। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের দৃষ্টি কোন শ্রেণীর দিকে বেশি? স্বভাবতই ভিক্ষুক, তার পর অতিদরিদ্র। দেশকে উন্নত ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে এই দুই শ্রেণীর অবসায়ন দরকার। এজন্য তাদের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, দুই শ্রেণীর মানুষ ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থার মধ্যে থাকে। দিন আনে দিন খায়। ভিক্ষুক দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে কিছু পেলেও অতিদরিদ্ররা সাধারণত ভিক্ষা বৃত্তিতে জড়াতে চায় না। তারা যা আয় করে তা দিয়েই চলার চেষ্টা করে। ২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, পভার্টি লাইন বা দারিদ্র্যসীমা ধরা হয় যাদের দৈনিক আয় ১.৯ ডলার বা ২০৯ টাকার মতো (১ ডলার ১১০ টাকা ধরে)। এর নিচে গেলেই অতিদরিদ্র হিসেবে গণ্য হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশের ২০.৫ শতাংশ বা সাড়ে তিন কোটি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, যাদের দৈনিক আয় ২০৯ টাকার নিচে। তবে চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ণের কারণে এ সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, যার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকার অতিদরিদ্র শ্রেণীকে সহায়তা জন্য সামাজিক বেষ্টনি হিসেবে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এই শ্রেণীর দারিদ্র্য ঘোচে না। যে তিমিরে রয়েছে, সেই তিমিরেই থেকে যায়। কোনো রকমে টিকে থাকে। তারা অতিদরিদ্র থেকে নি¤œবিত্তে পরিণত হতে পারে না। বর্তমান সরকার অঙ্গীকার করেছিল, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ থেকে ‘অতিদারিদ্র্য’ দূর করা হবে। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হয়নি।
দুই.
উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে মাথাপিছু আয় প্রতিদিন ন্যূনতম ৩.২ ডলার হতে হয়। মধ্য আয়ের দেশ হতে হলে ন্যূনতম ৫.৫ ডলার আয় হতে হয়। আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে যাচ্ছি বলে বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন মাথাপিছু ন্যূনতম ৩.২ ডলার হওয়া বাঞ্চনীয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই আয় কি সবাই করতে পারছে? যেখানে সাড়ে তিন কোটির মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, সেখানে যে তারা তা আয় করতে পারছে না, বলা বাহুল্য। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে, প্রত্যেক নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন জরুরি। এর মান হিসেবে ধরা হয়, মাথাপিছু প্রতিদিনের ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করা, নিয়মিত তিনবেলা খাওয়া, সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো এবং চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর মতো সক্ষমতা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারি মানুষের মৌলিক এই চাহিদাসীমায় পৌঁছানোর সক্ষমতা অর্জন করলেই কেবল মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব। সাধারণত একটি দেশের উন্নতি শুরু হয় দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করা শুরু থেকে। এটি অনেকটা উল্টো পিরামিড আকৃতির। নিচের দারিদ্র্য কমে উপরের দিকে উঠে যাওয়া। আমাদের দেশে ঘটছে উল্টো। উপরের শ্রেণী ফুলেফেঁপে উঠছে, আর নিচের দিকের মানুষ শুকিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, উল্টো পিরামিডের অর্ধেকে এসে থেমে গেছে। নিচের দিকের মানুষগুলো অনেকটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। নি¤œবিত্তরা দরিদ্র হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তরা নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। কেবল অটুট রয়েছে ধনীশ্রেণী। ধনীশ্রেণী বাদ দিলে বাকি মানুষের জীবনযাপন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। জীবনধারণের যেসব ভোগ্যপণ্য রয়েছে, তা জোগাড় করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে গিয়ে তারা হিসাব মিলাতে পারছে না। যে আয় করে, সে আয়ের মধ্যে কিছুই করতে পারছে না। তাদের আয় বাড়ছে না, ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। যে প্রতিকার করার কাজ সরকারের, সে তা করতে পারছে না। সাধারণ মানুষকে যেন সে অকূল সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহজ করার কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে সরকার এত পাওয়ারফুল, সেই সরকার নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারছে না। এর মধ্যে তার উন্নয়নের সাফল্যের প্রচার চলছে সমানতালে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের এ আচরণ যে ‘কাটা গায়ে নুনের ছিটা’, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের শান-শওকত দেখলে বোঝার উপায় নেই, তারা জনগণের সেবক। রাস্তা দিয়ে যখন তারা কোটি কোটি টাকার গাড়িতে করে চলাফেরা করে, তখন কে বলবে তারা জনসেবক? অথচ ঘটনা ঘটার কথা উল্টো। জনগণ শান-শওকতে চলবে আর জনসেবকরা চলবে সাধারণভাবে। রাস্তায় চলতে গিয়ে এখন অনেক সাধারণ মানুষ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের অত্যাধুনিক গাড়ি দেখে জিজ্ঞেস করে, এসব গাড়িতে কারা চড়ে? গাড়ির স্টিকার দেখে বুঝতে পারে, এসব গাড়িতে চলাফেরা করে সরকার ও প্রশাসনের লোকজন। অজান্তেই তাদের দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। আসারই কথা। তাদের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে, সেখানে তাদেরই সেবকরা রাজার হালে চলাফেরা করছে। জনগণকে পেছনে ফেলে সেবকরা এগিয়ে যাচ্ছে। সে কালের জমিদারদের মতো। প্রজার কি হাল, তা তাদের দেখার বিষয় না। তাদের সুখ-শান্তিই মুখ্য। এর ব্যত্যয় ঘটলেই প্রজার ওপর নেমে আসত নিপীড়ন। আধুনিক কালে এসে এর শুধু ধরন বদলেছে। শাসকদের শান-শওকত সাধারণ মানুষের ওপর চাবুক হয়ে পড়ছে। সরকারের কাছে এখন একটাই অজুহাত, আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তাই আমাদের দেশেও বেড়েছে। এই দোহাই দিয়েই বসে আছে। তাহলে, এত যে উন্নয়নের কথা বল হচ্ছে, তার ফলাফল কি?
তিন.
অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে সাধারণ মানুষ যে জীবনযাপন নিয়ে দিশেহারা, তা বোঝার জন্য কোনো জরিপের প্রয়োজন নেই। আশপাশের মানুষজনের কাছে খোঁজ নিলেই জানা যায়। এক সময় স্বচ্ছন্দে চলা মানুষটি এখন লজ্জায় তার দুরবস্থার কথা বলতে পারেন না। না বললেও, বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি ভালো নেই। এরকম অসংখ্য মানুষ রয়েছে। কেউ আয় দিয়ে চলতে পারছে না। কেউ বেতন ঠিকমতো পাচ্ছে না। কেউ বেকার হয়ে পড়েছে। সন্তানের ন্যূনতম চাওয়া পূরণ করতে না পারার কষ্ট বুকে ধারন করে চলেছে। উপার্জিত আয় দিয়ে চলতে না পেরে অনেকে ধার দেনা করে চলছে। ধার শোধ করে পুনরায় ধার করছে। তারা এক ধরনের অসম্মানজনক জীবনযাপন করছে। আজ কোনো রকমে চলতে পারলেও আগামীকাল কিভাবে চলবে, এ দুঃশ্চিন্তায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্যও থাকছে না। এভাবে অনেকে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মধ্যবিত্তরা ধার করতে না পেরে নানা খাতের খরচ কমিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। খরচ বাঁচাতে অনেকে বিয়ে-শাদী কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলছে। একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে, এই দুর্মূল্যের বাজারে ন্যূনতম দেড়-দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে যাওয়া। শুধু সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ নয়, নিত্যদিনের অনেক খরচ কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে খাবারের পরিমানও কমিয়েছে। নি¤œবিত্ত অনেক পরিবার তিনবেলার জায়গায় কোনো রকমে দুইবেলা খাচ্ছে। নি¤œ থেকে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার গোশত বাদ দিয়েছে। সন্তানের চাহিদা মতো খাবার জোগান কমিয়ে দিয়েছে। যারা ডিজিটালে অভ্যস্ত তাদের অনেকে মোবাইল ডাটা কেনা ছেড়ে দিয়েছে। কারো কাছে সৌখিন, কারো কাছে প্রয়োজনীয় এই মাধ্যম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত মাসে প্রায় পৌনে দুই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারি কমে গেছে। মূল কারণ, ডাটা কেনার ব্যয় সাশ্রয় করা। যাদের নিতান্তই প্রয়োজন, তারা নিয়মিত ডাটা না কিনে স্বল্পমূল্যে কিনে প্রয়োজন মেটাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধাক্কাই বটে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে নাজুক, তা পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যায়। অনেকে বলছেন, দেশে টাকা নেই। সরকার নিদারুন অর্থ সংকটে ভুগছে। ব্যাংকের আমানতে ধস নেমেছে। ইতিহাসের সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। আমানতকারিরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে না। তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যাদের ব্যাংকে সঞ্চয় ছিল, তারা তা তুলে চলছে। অন্যদিকে, অর্থ সংকট কাটাতে আইএমএফ-এর কাছে ৩০ শর্তে মাত্র সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোনের জন্য সরকারকে হাত পাততে হয়েছে। অথচ এই পরিমান অর্থ এক হলমার্কই দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়ে গিয়েছিল। মাস কয়েক আগে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ভুয়া দলিলপত্র দেখিয়ে নিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই অর্থের কি হলো, তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো চরম তারল্য সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে, বছরে যেখানে গড়ে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার হয়ে যায়, সেখানে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে গিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে এবং এই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ দেশের বিশাল চাহিদার তুলনায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা তো কোনো টাকাই নয়। এই টাকা পেতে সরকারকে কতই না দেনদরবার করতে হয়েছে। এদিকে, এই ঋণের কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের উৎপাদন খাতে ধস নামা শুরু হয়েছে। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তারা সংবাদ সম্মেলন করে উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা বলছেন। টিকে থাকার জন্য তদের কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্টের উৎপাদন কমে গেছে বলে এফবিসিসিআই জানিয়েছে। কীটনাশক আমদানি করতে না পারায় আসন্ন বোরো মৌসুমে কাক্সিক্ষত ফসল না পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় সংকুলানের জন্য লোকবল কমাচ্ছে। নীরবে কর্মী ছাঁটাই করছে। যাদের রাখছে, তাদের বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানও সংকুচিত হচ্ছে। ছাঁটাইয়ের কারণে কর্মরতরা যেমন বেকার হচ্ছে, তেমনি নতুনদেরও সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসবের মূলে ডলার সংকটকে দায়ী করা হলেও এটিই একমাত্র কারণ নয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। সংকটে সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার, পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনার অভাবকে তারা দায়ী করছেন।
চার.
মানুষের চলমান দুর্দশা লাঘবের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা। এখন পর্যন্ত বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সরকার যেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীকে যা খুশি তা করার ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো যখন-তখন দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অজুহাত হিসেবে বিশ্ববাজারে দামবৃদ্ধি এবং সরবরাহের অপ্রতুলতার অজুহাত দিচ্ছে। দামবৃদ্ধির কোনো নিয়মনীতি নেই। এক লাফে পণ্য প্রতি দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে তা কতটা বেড়েছে, তার কোনো হিসাব বা মাপকাঠি নেই। হিসাব থাকলে সাধারণ মানুষ জানতে পারত। সে অনুযায়ী ন্যায্যতার বিচারে পণ্য ক্রয় করতে পারত। এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর মধ্যে ন্যায্যতা, মানবতা, সততা ও ন্যায়নীতি বলে কিছু নেই। তারা লুটতরাজে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য না থাকলেও যতটুকু আছে ততটুকুই লুটে নিচ্ছে। সরকারও বাজারে ন্যায্যতা, ন্যায়নিষ্ঠা, আইনের শাসন ও সততা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে সাধারণ মানুষের কাছে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, তাদের জন্য সরকার নেই। তাদের এই কঠিন সময়ে সরকারকে পাশে পাচ্ছে না। নিবন্ধের শুরুতে কয়েক শ্রেণীর মানুষের কথা উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে অতিদরিদ্রদের জন্য সরকার খাদ্য সরবরাহের কিছু ব্যবস্থা করেছে। এটা সবসময়ই থাকে। তবে এই শ্রেণীর সাথে যে এখন নি¤œ ও মধ্যবিত্তরাও চলে এসেছে যারা আত্মসম্মানবোধের কারণে লাইনে দাঁড়াতে পারছে না, তাদের দিকে সরকার তাকাচ্ছে না। সরকারের দৃষ্টি ধনী শ্রেণীর দিকে যারা পারস্পরিক স্বার্থের সাথে জড়িত ও অতিদরিদ্রের দিকে যা সরকারের রুটিন ওয়ার্ক। মাঝের শ্রেণী যে ধুঁকছে, এ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। অথচ সমাজের মেরুদ-ই এই মাঝের শ্রেণী। তারা যদি নিঃশেষ বা ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে সমাজের মেরুদ- বলে কিছু থাকে না। তাদের জন্য সরকারের বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। তারা যা আয় করে তার মধ্যে যাতে চলতে পারে, অন্তত এ ব্যবস্থাটুকু করতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে সুশাসন ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা এমন বড় কিছু নয়। সরকার পারে না, এমন কিছু নেই। সরকারের উচিৎ ব্যবসায়ীদের সর্বস্বার্থ সংরক্ষণ না করে, ভোক্তাদের স্বার্থ কিছুটা রক্ষা করা। ব্যবসায়ীবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি ভোক্তাবান্ধব হওয়া জরুরি। এখানে সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।