Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছাত্রলীগের অধঃপতন ও সন্ত্রাস থামাবে কে?

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার প্রতিটি আঙিনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া তা-ব এবং সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের কারণে বছরের পর বছর ধরে সংগঠনটি সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। অব্যাহত অপকর্মে বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে এক সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অবিভাবকত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিতর্কিত কর্মকা-ের দায়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারের পাশাপাশি বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের বেপরোয়া অপরাধমূলক কর্মকা- বন্ধে এসব ব্যবস্থা কোনো ফল দেয়নি। এরপরও বুয়েটে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। করোনার সময় সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণ থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রলীগ নেত্রীর হাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রীর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ-হুঁশিয়ারি কোনো কাজে আসেনি। ধর্ষণে সেঞ্চুরি উদযাপন থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসে পিটিয়ে শিক্ষার্থী হত্যার মতো ঘটনার পরও অপরাধের সহযোগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের অপকর্ম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হওয়ার কারণেই তাদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি সম্পর্কে জনমনে একটি বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। জাতির এই মেরুদ-কে ভেঙ্গে দিতেই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে অনৈতিক-বিতর্কিত বিষয়াবলীর যথেচ্ছ চর্চা চলছে। যদিও শিক্ষা কারিকুলাম এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ও বিশেষ ছাত্র সংগঠনের অপরাধমূলক তৎপরতা এককথা নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষাঙ্গণগুলো জাতির নেতৃত্ব গঠন, শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক আমলাসহ দক্ষ পেশাজীবী শ্রেণী গড়ে তোলার পাদপীঠ। সব রাজনৈতিক দল ও মতের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে এখানে একটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ জনমত গড়ে ওঠে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ছাত্রলীগের গৌরবময় ভূমিকা ছিল। আজকের ছাত্রলীগের কর্মকা-ের সাথে সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্যকে মেলানো যায় না। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে জাতীয় নেতৃত্বে গৌরবময় ভূমিকা পালনকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে বর্তমান ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকা-ে লজ্জিত ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের ঘৃণ্য অপকর্মে দেশের পুরো শিক্ষাঙ্গণ অস্থির, অনিরাপদ ও শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চশিক্ষাঙ্গণে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজত্ব সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অশনিসঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে। মফস্বল থেকে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা একদিকে উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছে না, অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-নির্যাতনে অতিষ্ট ও হতাশ হয়ে মাদক, আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হত্যা-ধর্ষণের মতো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থার মধ্যে সীমিত থাকায় সারাদেশে তারা বেপরোয়াভাবে অপরাধমূলক কর্মকা- চালাতে মোটেও ভয় পায় না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সিটবাণিজ্য, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে অপহরণ, ছিনতাই-ডাকাতিসহ মারাত্মক সব অপরাধের সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে পড়ছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ি পেরিয়ে ন্যূনতম বেতনের একটি চাকরি জোটাতে বছরের পর বছর ধরে জুতার তলা ক্ষয় করতে হয়, সেখানে ছাত্রলীগের নেতা সেজে ছাত্রাবস্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এবং অজ¯্র অভিযোগ সত্ত্বেও বিচারের বাইরে থাকার বাস্তবতার কারণেই ছাত্রলীগ কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন, বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করা, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়া, ভিন্নমতের শিক্ষক ও প্রশাসনের উপর আধিপত্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মকা- সামগ্রিকভাবে একটি বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কোনো বিশেষ ঘটনা গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হওয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর কথিত সাংগঠনিক ব্যবস্থা, বহিষ্কার কিংবা লোক দেখানো মামলায় তাদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগকে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ছাত্রলীগের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রলীগকে দিয়ে বিরোধীদলের আন্দোলন দমন করার মতো রাজনৈতিক হঠকারিতা এবং পুলিশকে সরকারের দলীয়বাহিনী হিসেবে ব্যবহার অব্যাহত থাকলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। দেশে উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত পরিবেশ, শিক্ষাঙ্গণের নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে বাঁচাতে হলে ছাত্রলীগের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • shuaib ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৭ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর উচিত এ সংঘঠনটি বিলুপ্ত করে দেওয়া। কিন্তু এ সাহস কোথায়!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন