পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুতর অর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রতিরক্ষা যোগাযোগ, বিমান ও পর্যটনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৭টি মন্ত্রণালয়ে এক বছরে ৩২ কোটি টাকারও বেশি নয়-ছয় হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি বিধি-বিধান না মেনে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। অনিয়মের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা- কলিকাতা-ঢাকা আন্তর্জাতিক রুটে বাস পরিচালনার ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনসহ নানাভাবে সরকারের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী বৈঠকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।
দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার যে অভাব রয়েছে তা এ প্রতিবেদনে কিছুটা হলেও উঠে এসেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সরকারি বিধি-বিধান তথা টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ না করে অনিয়মের মাধ্যমে সরাসরি নগদ টাকায় মালামাল ক্রয় করা। যথাযথ বিধি-বিধান মোতাবেক না চলার কারণে আর্থিক অনিয়মের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে যোগাযোগ খাত। অনুরূপভাবে অনিয়মের কারণে এবং অবৈধভাবে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাতের মাধ্যমে এবং নিম্নমানের পাট ক্রয় ও উৎপাদন হ্রাসের কারণে এবং নানাবিধ উপায়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। অনিয়মের তালিকায় রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণলয় ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বলা যায়, সরকারের অধিকতর দায়িত্বশীলগণ এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত। এতে তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি রয়েছে। যেসব অভিযোগ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাকে হাল্কাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। কেন এবং কি কারণে অথবা কোন বাস্তবতায় এসব অনিয়ম হতে পেরেছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, টাকা তা যেখান থেকেই আসুক তার মালিক জনগণ। জনগণের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি বা ছিনিমিনি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ক্রয় নিয়ে অভিযোগ অনেক দিনের পুরোনো। এনিয়ে ইতোপূর্বে বিশ্বব্যাংকও কথা বলেছে। তারপরও দুর্নীতির অবসান হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বর্তমান সরকারের কোন কোন মহলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এবছর যেসব খাতের কথা উঠে এসেছে কেবল সেগুলোই নয়, আরো অনেকখাত নিয়েই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আর্থিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ রয়েছে।
গত কয়েকদিনে সরকারের কয়েকটি খাতের আর্থিক দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি। তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে রিজার্ভ চুরি হয়ে গিয়েছে। প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা যাচ্ছে অসম চুক্তিতে ভারত থেকে ঋণ আনা হচ্ছে। সরকার একদিকে উন্নয়নের কথা বলছে, অন্যদিকে চলছে লুটপাট। আর এই অসঙ্গতির সমন্বয় করতেই বোধকরি জনগণের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে একের পর এক কর ও ভ্যাটের বোঝা। বাড়ানো হচ্ছে গ্যাসের দাম। কার্যত যে পরিমাণ অর্থ লোপাটের কথা এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো রোধ করা গেলে জনগণের উপর বাড়তি চাপ পড়ত না। মনে রাখতে হবে টাকা জনগণের। সুতরাং এ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। আলোচ্য প্রতিটি ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা এবং লোপাট হওয়া অর্থ ফেরত পাবার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।