Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুটিয়ে যাওয়া শিশু

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৫ এএম

শিশুদের পুষ্টির সমস্যা দুই ভাবে হতে পারে। একটি অধিক খাদ্য গ্রহনের কারনে মুটিয়ে যাওয়া ও অপরটি অপুষ্টি, অর্থাৎ পুষ্টির অভাব। আর বর্তমানে, বিশেষ করে শহরের বাচ্চাদের যে সমস্যাটি বেশি হচ্ছে, সেটি হচ্ছে স্থুলতা (ওবেসিটি) বা অতিরিক্ত ওজন। তবে এটি খাদ্য পুষ্টির কারণ ছাড়াও অন্যান্য কিছু কারণেও হতে পারে।

বাচ্চার ওজন নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক মা জিজ্ঞেস করেন, আমার বাচ্চার ওজন কি অতিরিক্ত। কিংবা এই বয়সে বা এই উচ্চতায় ওজন কত হলে ঠিক? এর খুব সহজ উত্তর দেওয়া সম্ভব না। আমরা পুষ্টির মাত্রার কিছু মাপকাঠি ব্যাবহার করি। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট বয়স, উচ্চতা আর ওজনের সাপেক্ষে সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত বৃদ্ধি চার্ট (গ্রোথ চার্ট) ব্যাবহার করা। এছাড়া বাহুর চামড়ার পুরুত্ব, কোমরের মাপ নির্ধারণ প্রভৃতিও রয়েছে। তবে এই লেখায় আমি আলোচনা করব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়, বিএমআই সম্বন্ধে। এই বিএমআই দিয়ে দুই বছরের ঊর্ধ্বে যে কোন লোকের স্থুলতা কিংবা ওজনহীনতা নির্ধারণ করা যায় খুব সহজে।

আসুন দেখে নিই বিএমআই কিভাবে বের করা যায়। এর জন্য প্রথমে আপনার লাগবে শিশুর ওজন (কেজি’তে)। তারপর উচ্চতা মাপতে হবে মিটার এককে। (১ ইঞ্চিতে মোটামুটি ২.৫ সেমি, এবং ১ মিটার হচ্ছে ১০০ সেমি)।

১. ধরি, একটি ৫ বছরের মেয়ে বাচ্চার উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট (অর্থাৎ ১০৫ সেমি বা ১.০৫ মিটার), এবং ওজন ২০ কেজি। এখন বিএমআই বের করতে গেলে ওজনকে ভাগ দিতে হবে মিটার উচ্চতার বর্গ দিয়ে।
২. অর্থাৎ, বিএমআই = ওজন/ (মিটার উচ্চতা)ক্ষ্ম। তাহলে এই বাচ্চাটির বিএমআই হবে ২০/(১.০৫)ক্ষ্ম = ১৮.১৪

৩. এরপর আমরা এই বিএমআই কে শিশুদের (আঠারো বছর পর্যন্ত শিশু) জন্য নির্ধারিত বিএমআই চার্টে (ছেলে, মেয়ের জন্য আলাদা) ফেলে দেখব বয়সের তুলনায় তার অবস্থান কোথায়। অনেকেই জেনে থাকবেন, বয়স্কদের শুধু বিএমআই মাপার পরেই বলে দেওয়া যায় তার ওজনের অবস্থান কেমন। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে চার্ট ছাড়া পূর্ণাঙ্গ মন্তব্য করা ঠিক না।

৪. বিএমআই চার্টের ৯৫ তম সেন্টাইলের উপরে হলে আমরা স্থুল বলি। ৮৫-৯৫ পর্যন্ত বেশি ওজন, ৫-৮৫ পর্যন্ত স্বাভাবিক আর ৫ এর নিচে হলে কম ওজন।

৫. স্থুলতা কেন হয়? সচরাচর বেশী ক্যালরির খাওয়া দাওয়া এবং কম পরিশ্রম এর জন্য দায়ি। অর্থাৎ উচ্চতার অনুপাতে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, খাবারে স্নেহজাতীয় এবং শর্করাধিক্ক ওজন বাড়িয়ে দেয়। হালের ফাস্ট ফুড, ভাজা-পোড়া, সফট ড্রিংকস, বিরিয়ানি জাতীয় খাবার এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। এর পাশাপাশি শারীরিক খেলাধুলা কম করা, হাটা-চলা কম করা, অতিরিক্ত ‘মনিটর আসক্তি’ এগুলো মোটেও ভালো অভ্যাস নয়। এসব কারন ছাড়াও কিছু হরমোনের রোগ, সিনড্রোম, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্থুলতা হতে পারে।

৬. স্থুলতা আমাদের দেহে অনেক সমস্যাই করে থাকে। এই বাচ্চাদের উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ঘুমের মাঝে শ্বাসকষ্ট, পিত্ত পাথর, যকৃতে চর্বি, বিভিন্ন বৃক্কে সমস্যা এমনকি বয়স হলে প্রজননে সমস্যাও হতে পারে। এই বাচ্চাগুলো প্রায়ই হীনমন্যতায় ভুগতে পারে, পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে অনেকে।

এদের চিকিৎসার আগে প্রথমেই আমরা দেখি স্থুলতার কারণ। যদি কোন শারীরিক হরমোন বা অন্য কোন সমস্যা না পাওয়া যায় তখন আমরা মা বাবাকে কিছু উপদেশ মেনে চলতে বলি। এর মধ্যে রয়েছে আশ্বস্ত করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অনুশীলন এবং ঘরের বাইরের খেলাধুলাতে উৎসাহ দেওয়া। মনিটর আসক্তি অর্থাৎ টিভি, মোবাইল, ট্যাব এগুলো বাচ্চাদের জন্য নানাদিক থেকে ক্ষতিকর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে শিশু এবং মা-বাবার মনে জোর। আমি চেষ্টা করলেই আমার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, এই সংকল্প স্থুলতা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় সহায়।

ডাঃ আহাদ আদনান,
রেজিস্ট্রার (শিশু বিভাগ),
আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা। ০১৯১২২৪২১৬৮।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন