Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎপাদন খাতকে টিকিয়ে রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ডলার ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে কীটনাশক আমদানির অপ্রতুলতার কারণে কৃষিখাতে কাক্সিক্ষত ফসল পাওয়া যাবে না বলে বলা হয়েছে। এছাড়া রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য খাতে উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু এসব খাতই নয়, অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনেও ভাটা পড়েছে। এর জন্য ডলার সংকটে এলসি খোলার সীমাবদ্ধতার কারণকে মূলত দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে উৎপাদন খাতের নেতিবাচকতা তুলে ধরছে। উৎপাদন খাতের এ প্রবণতা দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলবে বলে ব্যবসায়ী মহল মনে করছে।

ডলারের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি দায় মেটাতে অপারগ হওয়ায় মূলধনী কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের আমদানি নিশ্চিত করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনীতির অন্যতম মেরুদÐ কৃষিখাতের উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ততা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে খাদ্যনিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ধানসহ কৃষি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য পেস্টিসাইড, হার্বিসাইডসহ রাসায়নিক পণ্যের আমদানি বন্ধ থাকায় আগামী মৌসুমে দেশের খাদ্য ও কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে তুলা আমদানিতে প্রতিবন্ধকতার কারণে টেক্সটাইল ও গার্মেট শিল্পে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এবার ডলার সংকটের কারণে ইস্পাত, সিমেন্টসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আবশ্যিক শিল্পোৎপাদনে বড় ধরণের ঘাটতির আশঙ্কার কথা বলেছেন উদ্যোক্তরা। এ থেকে উত্তরণে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহŸান জানানো হয়েছে। অন্যথায় দেশে সরকারের চলমান উন্নয়নের গতিধারা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল হচ্ছে উৎপাদন খাত। এ খাতে ব্যাঘাত ঘটলে গভীর সংকট দেখা দেয়। উৎপাদন কমে যাওয়ার সাথে বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে এ খাতে ব্যয় সংকোচন নীতির আওতায় নীরবে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। কর্মরতদের বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যথাসময়ে সংকট মোকাবেলা করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে না পারায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের পরিস্থিতি অনুধাবন করে এখন থেকেই আমাদের সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।


অর্থনৈতিক দুরবস্থার ক্ষেত্রে ডলার সংকট ও বিশ্বমন্দাই একমাত্র কারণ নয়। সংকটের মধ্যেই কিভাবে টিকে থাকা যায়, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। আমাদের পরিকল্পনা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি রয়েছে। অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তারা ভালো করে জানেন পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ডলার ক্রাইসিস থেকে শুরু করে উৎপাদকরা যে সংকটের মধ্যে পড়েছে, তা কিভাবে সামাল দেয়া যায়, তা নিয়ে তাদের চিন্তা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একবার উৎপাদন খাত ভেঙ্গে পড়লে তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার গার্মেন্ট খাতকে সুরক্ষা দেয়ার নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়ায় এ খাতটি এখনও ভালভাবে টিকে আছে। শুধু এ খাতের দিকে মনোযোগ দিলেই হবে না, অন্যান্য উৎপাদন খাতের দিকেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। অন্ততপক্ষে উৎপাদন কমে যাওয়ার চেয়ে চলমান উৎপাদন কিভাবে ধরে রাখা যায়, এ ব্যাপারে সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমিত সুবিধার মধ্যেই উৎপাদন খাত টিকিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়াসহ প্রধান প্রধান সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে, এ খাতে ধস নামলে তা সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করবে।



 

Show all comments
  • ফারুক ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:৩৮ এএম says : 0
    পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যথাসময়ে সংকট মোকাবেলা করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • WjyHYHB ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:৪২ এএম says : 0
    Medicines information sheet. Drug Class. prednisone Some what you want to know about meds. Get here.
    Total Reply(0) Reply
  • Kma Hoque ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:৩৪ এএম says : 0
    উৎপাদন খাতকে টিকিয়ে রাখতে পারলে ডলারের সঙ্কট কেটে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইনু ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:৩৪ এএম says : 0
    সীমিত সুবিধার মধ্যেই উৎপাদন খাত টিকিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়াসহ প্রধান প্রধান সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে, এ খাতে ধস নামলে তা সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সোহাগ রনি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:৩৫ এএম says : 0
    একবার উৎপাদন খাত ভেঙ্গে পড়লে তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার গার্মেন্ট খাতকে সুরক্ষা দেয়ার নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়ায় এ খাতটি এখনও ভালভাবে টিকে আছে। শুধু এ খাতের দিকে মনোযোগ দিলেই হবে না, অন্যান্য উৎপাদন খাতের দিকেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। অন্ততপক্ষে উৎপাদন কমে যাওয়ার চেয়ে চলমান উৎপাদন কিভাবে ধরে রাখা যায়, এ ব্যাপারে সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন