Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবদুল হামিদ যেসব সরকারি সুবিধা পাবেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৮ পিএম

দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। আজ রোববার নতুন প্রেসিডেন্ট পদে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই পদে আর কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই হতে যাচ্ছেন দেশের পরবর্তী ২২তম প্রেসিডেন্ট।
একই সঙ্গে বঙ্গভবনের বর্তমান বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের বিদায়ের সুরও বেজে গেছে। দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী অবসরভাতা, চিকিৎসার সুবিধাসহ অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন তিনি। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট কী কী সুবিধা পান, তা বলা হয়েছে প্রেসিডেন্টের অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনে। এই আইনের তথ্য বলছে, কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে কমপক্ষে ছয় মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করলে অথবা মেয়াদ শেষ হলে মৃত্যুর আগপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসরভাতা পাবেন। ‘দি প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৫ (মে ২০১৬ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী বর্তমানে প্রেসিডেন্টেতর মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে অবসরের পর মো. আবদুল হামিদ মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসরভাতা পাবেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আইনানুযায়ী, কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ হতে অবসরে গিয়ে অবসরভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসরভাতা এবং প্রেসিডেন্টের অবসরভাতার মধ্যে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। প্রেসিডেন্ট অবসরভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তাঁর বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপতœীক স্বামী তাঁর প্রাপ্য অবসরভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন। অবসরভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে প্রাধিকার অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিক গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানাতে হবে। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসরভাতার তত গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকার সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আংশিক বছরকে পুরো বছর হিসেবে গণনা করা হবে। কোনো ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করে অথবা অবসরভাতা গ্রহণ না করে মারা গেলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।
অন্যান্য যেসব সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ অবসরে যাওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্যান্য কিছু সুবিধাও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। আইনানুযায়ী তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, যার মোট বাৎসরিক পরিমাণ সময়ে সময়ে সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন ও সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত এর বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তখন তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন। আইনানুযায়ী, চিকিৎসাসুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন। কী কী কারণে একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট অবসরভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন না, তা–ও উল্লেখ আছে আইনে। এগুলো হলো প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব শেষে এমন কোনো দপ্তরে, আসনে, পদে বা মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করে নির্ধারিত তহবিল (সংযুক্ত তহবিল) থেকে বেতন বা অন্য কোনো সুবিধা পেলে প্রেসিডেন্টের অবসরভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে না। অবসরভাতার প্রাধিকার পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধের দায়ে দ-িত হলেও ওই সব সুবিধা পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অসাংবিধানিক পন্থায় বা অবৈধ উপায়ে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উচ্চ আদালত ঘোষণা করলেও সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট ওই সুবিধা পাবেন না।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে আসা মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট দায়িত্বও পালন করেন। প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন শেষে তিনি রাজধানীর কোথায় থাকবেন, তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ