২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি এলকোহল সেবনের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন আগেই কিশোরগঞ্জে কয়েকজন এটি সেবন করে ভেজালের কারনে মৃত্যু করন করে। এর আগেও নরসিংদি, গাইবান্ধা সহ কয়েকটি এলাকায় একসাথে অনেক মানুষ মৃত্যু বরণ করে। তাই এর ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে সাধারনের সতর্ক হতে হবে। স্পিরিট বা মেথিলেটেড স্পিরিটে অধিক মাত্রায় ইথাইল এলকোহল বা ভেজাল হিসাবে মিথাইল এলকোহল, এলডিহাইড, পাইরিডিন ইত্যাদি মেশানো থাকে যার মাত্র ৫০ মিলি সেবন করলেই মানব শরীর ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। প্রথম ঘন্টায় কিছু না হলেও ৬ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রক্তের সুগার কমে যায়, রক্তচাপ কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, পেট ব্যথা, রক্ত বমি, শ্বাস কষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, অন্ধত্ব, মাথা ঝিম ঝিম, খিচুনী, কমা ও পরে রুগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই রুগীদের খুবই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে এন্টিডট ইথানল বা ফোমেপিজল শিরায় দিতে হয় যাতে আর কোন বিষাক্ত মেটাবোলাইট তৈরী হতে না পারে আর ইতোমধ্যে তৈরী হওয়া মেটাবোলইট ও মিথানল শরীর থেকে বের করতে হলে হেমোডায়ালাইসিসের কোন বিকল্প নাই।
এলকোহলের প্রথম চুমুক পান করার পর এটি রক্তবাহিত হয়ে সরাসরি মানুষের ব্রেনের কোষে চলে যায়। এলকোহল ব্রেন কোষ থেকে বিশেষ রাসয়ানিক পদার্থ নি:সরণ করে এবং এর গতিপথ ধীর করে দেয় যা বিভিন্ন বার্তা বা সংকেত পাঠিয়ে থাকে। এর ফলে যে কোনো এলকোহল সেবনকারীর মুড বা মনের অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। এলকোহল রিফ্লেক্স ধীর করে দেয় এবং ভারসাম্য নষ্ট করে থাকে। এলকোহল সেবনকারী সরাসরি কিছু চিন্তা করতে পারে না, যার ফলে পরবর্তীতে প্রয়োজনে কোনো কিছু মনে নাও আসতে পারে। আর মনে আসলেও তা পরিপূর্ণতা পায় না। কারণ এলকোহলের প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদী মেমরীতে কোনো কিছু জমা হতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
এলকোহল সেবন করলে মাথা ব্যথা, মুখ লাল হয়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাশিং, বমি বমি ভাব, নাড়ির স্পন্দন দ্রুত হয়ে যেতে পারে যদি সেফোটিটান, মেট্রোনিডাজল অথবা টিনিডাজোল ঔষধ গ্রহণ করা হয়। ডক্সিসাইক্লিন অথবা নিনিজলিড ঠিক ভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাই এলকোহল সেবনের আগে অথবা ক্রমাগত এলকোহল সেবন করলে ডাক্তারকে অবশ্যই আগে জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রচুর এলকোহল পানের কারণে আপনার ইমমিউন রেস্পন্স ধীর গতির হবে এবং রোগের বা সংক্রমনে বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে দাড়াবে। বিষন্নতানাশক ঔষধ সেবনকালে এলকোহল পান করলে লক্ষণগুলো আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত বা প্রচুর পরিমাণে এলকোহল পান করলে আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে। আর যখন উচ্চ রক্তচাপের কোনো রোগী এভাবে এলকোহল পান করতে থাকবে তখন তার অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। লিভার সব ধরনের গৃহীত এলকোহলকে ভেঙ্গে থাকে। এভাবে লিভার অনেক টক্সিনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে অত্যধিক মদ্যপানের কারণে লিভার ফ্যাটি হয়ে যায় এবং ফাইব্রাস টিস্যু তৈরী হয়। ফলে রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তাই লিভার কোষ বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তা পায় না। যেহেতু লিভার কোষ ধীরে ধীরে মারা যায়, তাই লিভারের স্কার হয় এবং লিভার আগের মত কাজ করে না এবং এক সময় লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি এবং ডায়াবেটিসঃ স্বাভাবিক অবস্থায় অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরী করে এবং অন্যান্য রাসয়ানিক পদার্থ যা অন্ত্রকে সাহায্য করে গৃহীত খাদ্য বিশ্লেষণ বা ভেঙ্গে ফেলার জন্য যাতে খাদ্য দ্রব্য হজম হতে পারে। কিন্তু এলকোহল গ্রহণের ফলে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের অভ্যন্তরে রাসয়ানিক পদার্থ থাকে। এলকোহলের টক্সিনের সাথে তারা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। এভাবে বছর ঘুরলেই দেখা যাবে, অগ্ন্যাশয় আর ইনসুলিন তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে ডায়াবেটিস দেখা দিবে। আর এভাবে এলকোহল বা মদ্যপান চলতে থাকলে অগ্লাশয়ে বা লিভারের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
ঔষধ গ্রহণে সতর্কতাঃ অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে এসিটামিনোফেন, এস্পিরিন এবং আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ঔষধ সেবনকালে সামান্য এলকোহল সেবনে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এসব ঔষধ অপব্যবহার করলে কিডনী, লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এলকোহল সেবনকালীন সময়ে এন.এস.এ.আই.ডি গোত্রভুক্ত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করলে পাকস্থলী থেকে রক্তপাত হতে পারে। সামান্য এলকোহল সেবনে কিছু মহিলার গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অত্যাধিক এলকোহল পান করলে মাসিকের সমস্যা হতে পারে এবং অভুলেশন সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এলকোহল স্বাভাবিক সেক্স কমিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম যৌন উত্তেজনা বেশী থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেটি আর থাকে না। পুরুষদের স্পার্মের মান কমায়। টানা এলকোহল সেবন করলে যৌন অকার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এলকোহল গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমায়, যখন গর্ভবতী হওয়ার জন্য আই.ভি.এফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এবং জি.আই.এফ.টি (গ্যামেট ইন্ট্রা ফেলোপিয়ান ট্রান্সফার) জাতীয় চিকিৎসা গ্রহণকালীন সময়ে। মোট কথা এলকোহল সফলভাবে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। এলকোহল স্ট্রোকের রোগীদের ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বিশেষ করে যেসব ঔষধ দেওয়া হয় আরেকটি স্ট্রোককে বাধা দান করার জন্য। রক্ত পাতলা করার ঔষধ যেমনঃ ওয়ারফেরিন একটি উদাহরণ। স্ট্রোকের কারণে আরও বেশী সংবেদনশীল হয়ে যায় এলকোহলের প্রতিক্রিয়া যেমনঃ ঘুম, ভারসাম্য, কথা জড়িয়ে আসার মত বিষয়গুলো। হেমোরেজিক বা রক্তপাত জনিত স্ট্রোক হলে কয়েক সপ্তাহের জন্য কোন ভাবেই এলকোহল সেবন করা যাবে না। এলকোহল পান মুখের ক্যান্সার ছাড়াও গলা, স্বরতন্ত্র এবং ইসোফেগাস বা খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। গবেষকরা দেখেছেন এলকোহল সেবনের কারণে ত্বকের ক্যান্সারও হতে পারে।
অতএব, জীবনে ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দঘণ মুহুর্ত অথবা শখ করেও এলকোহল বা মদ্যপান করতে যাবেন না। এলকোহল আপনাকে শুধুমাত্র কিছুক্ষণের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন করে বাস্তব জগৎ থেকে দুরে রাখে এবং আপনার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।