২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আজকের শিশুরা হবে আগামী দিনের কর্ণধার। শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়, সুন্দর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সকল কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাহলে শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে আর সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন পাবে।
গবেষণায় দেখা যায়, তিন বছর ও তার কম বয়সী শিশু যারা দিনের বেলায় বেশি টিভি দেখে রাতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং সঠিক সময় ঘুমায় না। আমরা অনেকেই জানি, পিতা-মাতারা বেশির ভাগ তাদের শিশুদের ঘুমানোর জন্য টিভি’র ওপর নির্ভর করে। এ কথা বলেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির পেডিয়া ট্রাইসিয়ান ড. দিমিত্রি ক্রিস্টাকিস। তিনি “দা এলিফ্যান্ট ইন দা লিভিং রুম” গ্রন্থের লেখক। তার অভিমত- ঘুমানোর আগে টিভি দেখলে ঘুমানো কঠিন হয়। ঘুম আসতে চায় না। এ কথা বিজ্ঞান সমর্থন করে। ড. দিমিত্রির সহকর্মী ড. ডারসি থম্পসন (যিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত) এক গবেষণা পরিচালনা করে দেখেছেন, তিন বছর ও তার কম বয়সী শিশুরা ঘুমানোর আগে টিভি দেখলে তাদের ঘুম না হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ড. দিমিত্রি ও থম্পসন আরেকটি জাতীয় স্বাস্থ্য জরিপ ডাটা পরীক্ষা করে দেখেছেন, শতকরা ২৭ জন কিশোর-কিশোরীর ঘুমাতে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই এবং শতকরা ৩৪ জনের পাতলা ঘুম হয়। তারা ২০০০ শিশুর ওপর এই সমীক্ষা চালিয়েছেন যাদের বয়স ৪ থেকে ৩৫ মাস। তারা তাদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। তারা ওই ২০০০ শিশুর বাবা-মায়ের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। তাদের মতে, তাদের ঘুম হওয়া বা কম ঘুম হওয়া বা মোটেই ঘুম না হওয়া নির্ভর করে। তারা কত সময় ধরে টিভি দেখে তার ওপর। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন ১২ মাসের বেশি বয়সীরা গড়ে প্রতিদিন ০.৯ ঘণ্টা টিভি দেখে। ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সীরা গড়ে ১.৬ ঘণ্টা এবং ২৪ মাস থেকে ৩৫ মাস বয়সী শিশুরা গড়ে দৈনিক ২.৩ ঘণ্টা টিভি দেখে।
ড. থম্পসন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন- প্রত্যেক শিশুর নিয়মিত গভীর ঘুমের প্রয়োজন। আবার ঘুমের পরিমাণও ৬-৭ ঘণ্টা হওয়া উচিত। তার মতে নিরবচ্ছিন্ন এবং ব্যাঘাতহীন ঘুম অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সুরক্ষা দেয়। টিভি বেশি দেখলে যেমন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি ঘুম না হলে বেশি বেশি টিভি আসক্ত করে। ঘুম আসে না বলেই টিভি দেখে। ঘুমানোর আগে টিভি দেখার অভ্যাসটারও বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ড. থম্পসন আরো বলেন, ঘুমানোর আগে শিশুরা যেসব ভায়োলেন্ট বা যারা তাদের বয়স উপযোগী নয় এমন ছবি দেখে, তবে তারও প্রতিক্রিয়া হয় ঘুমের ওপর। এতেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ড. দিমিত্রি বলেন, আপনার শিশুর যদি ঘুমের সমস্যা হয় বা থাকে, তাহলে পর্যবেক্ষণ করুন, ওটা টিভি দেখার অভ্যাসের জন্য হচ্ছে কি না। টিভি দেখার অভ্যাস থাকা সত্ত্বেও যদি ঘুমের ব্যাঘাত না হয় তাহলে টিভি দেখতে দিন। এ কথা সমর্থন করে, ড. ন্যান্সি যিনি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, আমি পিতা-মাতাদের পরামর্শ দিই, তারা যেন তাদের সন্তানকে দিনের বেলায় ২ ঘণ্টা টিভি দেখতে দেন। এই ২ ঘণ্টার মধ্যে কম্পিউটার, ভিডিও গেম ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু ঘুম পাড়ানোর জন্য টিভি দেখাবেন না। এতে বয়সী শিশুরাও ঘুমের সমস্যায় থাকবে।
ড. ম্যানার্ড বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন, কেন বাবা-মায়েরা শিশুদের টিভি’র সামনে বসিয়ে দেন ঘুমাতে যাওয়ার আগে। কারণ তারা সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি করে না বেড়িয়ে এক জায়গায় বসে থাকবে। কিন্তু তারা বোঝেন না যে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাদের মস্তিষ্কে যে পরিবর্তন প্রয়োজন, টিভি দেখলে তা হয় না। ফলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হয়। ড. ম্যানার্ড পিতা-মাতাদের পরামর্শ দেন- ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি দেখতে দেবেন না, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। স্কুলে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারবে না। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করবে না। আপনার বড় কোনো ছেলে বা মেয়ের ঘুমের সমস্যা আছে? তাহলে নিম্নবর্ণিত পরামর্শ গ্রহণ করুন
* প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং তা পালন করুন।
* আপনার শিশুর নির্বিঘœ ঘুমের সময় বেঁধে দিন। ঘুমানোর আগে ভালো ঘুমের জন্য সামান্য গরম পানিতে গোসল করতে বলুন। শোয়ার আগে কিছু পড়তে বা গল্প করতে বলুন।
* রাতে খাবার পর কিছু বিনোদনমূলক কাজ করতে দিন। কোনো পরিশ্রমজনিত কাজ দিলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।
* রাতের ঘুমের আগে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে।
* রাতে শোয়ার আগে ক্যাফেইনযুক্ত কোনো পানীয় দেবেন না। ঘুমের ব্যাঘাত হবে।
* তার শোয়ার ঘরের তাপমাত্রা যেন আরামদায়ক হয়। অধিক গরমও না, বেশি ঠা-াও না।
* ঘুমানোর ঘর যেন অন্ধকার থাকে। তবে মৃদু আলোর বাতি জ্বেলে রাখা যায়। যেমন- নীল বা লাল রঙের বাল্ব।
* ঘর যেন চার দিক শব্দমুক্ত হয়।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।