পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিনদিন পেরিয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অসংখ্য প্রাণের স্পন্দন শোনা যাচ্ছে। বিলম্বিত ও অপ্রতুল উদ্ধারকার্যে এখনো বেরিয়ে আসছে মুমূর্ষু-জীবন্ত মানুষ ও শিশুদের দেহ। তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত শহরগুলোতে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কেই প্রায় ৬ হাজার ভবন ধসে গেছে। ধসে যাওয়া এসব ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা সহজসাধ্য কোনো বিষয় নয়। এরদোয়ান প্রশাসনের পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়া মানুষের স্বজন ও সাধারণ অধিবাসীরা নিদারুণ কষ্ট নিয়ে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট নিজেও ত্বরিৎ-তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে না পারার দায় স্বীকার করেছেন। এমন আকস্মিক ভূমিকম্প বিপর্যয়ে যখন রাস্তা, বিমানবন্দর, রেললাইন, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়, তখন যত উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রই হোক না কেন, কোনো একক রাষ্ট্রশক্তির পক্ষেই তা সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে নিঃশেষিত প্রায় সিরিয়ার পাশে প্রতিবেশী ও উন্নত দেশগুলো না দাঁড়ালে সিরীয় সরকারের পক্ষে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়ানো হয়তো সম্ভব ছিল না। সিরিয়া ও তুরস্কের এই কঠিন দুর্দিনে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক দেশের উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ শুরু করেছে। যুদ্ধের প্রতিপক্ষ বৈরী দেশগুলোও যখন মানবিক দায় থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তখন সউদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের ধনী মুসলিম দেশগুলোকে প্রত্যাশিত ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বিশ্ববাস্তবতায় পারস্পরিক বৈরিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের ১৩টি সদস্য দেশ নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটে ৩ শতাধিক সদস্য ইতোমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশ তুরস্কের এই বিপর্যয়ে বাংলাদেশও তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ চিকিৎসক দল মিলে অর্ধশতাধিক সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের সহায়তা মিশন এরই মধ্যে তুরস্কে পদার্পণ করেছে। সেই সাথে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও মানবিক বিপর্যয়ে সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য বৃহষ্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের বৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানও তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধারকর্মী পাঠিয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা ছাড়া হাজার হাজার ভবন, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও কলকারখানা ধসে যাওয়ার ক্ষতি পূরণে তুরস্ক ও সিরিয়ার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে দাঁড়িয়েছে। লাখ লাখ মুসলমানের মানবিক বিপর্যয়ের সময় সউদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত ও যথাযথ ভূমিকা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়।
জাতিগত ও ভৌগোলিক বিভাজন নির্বিশেষে মুসলমানরা পরস্পরের ভাই। পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও দায়বদ্ধতা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। বিপদের সময় সেই দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার সমৃদ্ধ দেশগুলোর শেখদের রাজকীয় বিলাসী জীবন ও চমকে দেয়ার মতো উন্নয়ন তৎপরতা তাবৎ বিশ্বের জন্য বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছে। সম্প্রতি সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপে আগের যে কোনো ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের তুলনায় চার-পাঁচগুণ বেশি অর্থ খরচ করা হয়েছে। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকটে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে যখন মানবিক সংকট দেখা যাচ্ছে, তখন কাতারের ব্যবসায়ী ও রাজপরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবেরদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ৬-৭ বিলিয়ন ডলার খরচে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের মতো ফুটবল ক্লাব কিনে পশ্চিমা গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন! তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও পুনঃনির্মাণ খাতে শত শত কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নিরীখে সউদি আরব, কাতার, কুয়েত, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো দেশ তাদের পাশে দাঁড়ালে খুব দ্রুতই পুনর্বাসন ও পুননির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হতে পারে। বিশ্ব সম্প্রদায় যখন সব বৈরিতা ভুলে তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা আশা করব সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোও সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।