পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক খাত যখন নিজস্ব গতি ও স্থিতিশীল বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে, তখন একটি সংঘবদ্ধ চক্র রফতানি চালান থেকে পণ্য চুরি করে ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট করে দিতে তৎপর রয়েছে। তৈরী পোশাক কারখানা মালিক ও রফতানিকারক সমিতি(বিজিএমইএ)’র সভাপতি এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আবারো বিষয়টি খোলাসা করে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বন্দরে পরিবহনকালে কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য চুরির বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা চাইলেও তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বছরের পর বছর ধরে এ কাজে লিপ্ত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য চুরি করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেও চুরি থেকে বিরত হয়নি। গত ৩ রা ফেব্রুয়ারি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক চুরির সাথে জড়িত চক্রের অন্যতম হোঁতা শাহেদসহ চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ইতিপূর্বেও গার্মেন্ট চোর চক্রের এই শাহেদের নাম উঠে আসলেও আইনগত দুর্বলতা এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশের সন্দেহজনক ভূমিকার কারণে গ্রেফতারের পরও সহজেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো একই অপকর্মে জড়িত হতে পেরেছে। দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্ট চুরির সাথে জড়িত কথিত শাহেদের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়।
হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বার বার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর এক সময় চুরির কারণে বাজার হারানোর আশঙ্কার মধ্যে পড়েছিল বিজিএমইএ। বিজিএমইএর দাবির প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে প্রধান করে বিজিএমইএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চুরি প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কাভার্ড ভ্যান মালিকদের সমিতির সভাপতির এক মন্তব্য থেকে জানা যায়, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র চালকদের সঙ্গে মিলে রাস্তায় কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে মালামাল চুরি করছে, অনেক সময় কার্টনের ওজন ঠিক রাখতে পণ্য সরিয়ে সেখানে ঝুট, মাটি-আবর্জনা ভরে দিচ্ছে।’ এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে গুরুতর অসাধুতার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে রফতানিকারকদের জরিমানাও গুণতে হচ্ছে। সেইসাথে দেশের বদনাম এবং গার্মেন্ট ক্রেতাদের সাথে অনাস্থার সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। বিজিএমইএ’র সুপারিশক্রমে মহাসড়কে চুরি বন্ধে সিসি ক্যামেরা বসানো ও জিপিএস সিস্টেম কার্যকর করার উদ্যোগের সাথে সাথে বিভিন্ন সময়ে দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলে এতদিনে রফতানির গার্মেন্ট চুরি বন্ধ হতে পারতো।
গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি বন্ধ করতে অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যারসহ ১৪২৭টি সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত শতাধিক ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে বলে খবরে জানা যায়। পরিবহন থেকে গার্মেন্ট পণ্য চুরি ঠেকাতে ইতিপূর্বে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছিল। সে সব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, পণ্য পরিবহনের সময় গার্মেন্টে কারখানার নিজস্ব ট্রাক/কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করা, এজেন্সির পরিবহন ভাড়া করা হলে চালকের পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি রাখা এবং ছবি বন্দরে সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছে অনলাইনে পাঠিয়ে দেয়া, সম্ভব হলে এস্কট করে পণ্য বন্দরে পৌঁছানো, জিপিএস সিস্টেমে পরিবহনকে মনিটরিং করা, বৈধ ও প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির গাড়ী ব্যবহার ইত্যাদি। এসব সুপারিশ নি:সন্দেহে সময়োপযোগী ও আমলযোগ্য। তবে সব সময় সব কারখানা মালিকদের পক্ষে এসব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা দায়িত্ব এড়াতে পারেনা। প্রায় দুই দশক ধরে মহাসড়কে পণ্য চুরি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া শাহেদ একা নয়, আরো শাহেদ থাকতে পারে। তার সহযোগীদের সাথে একশ্রেণীর ড্রাইভার ও গার্মেন্ট কর্মচারিদের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। বলাবাহুল্য, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা না থাকলে পণ্য চুরি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। পুলিশ ঠিক থাকলে ও দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হলে মহাসড়কে পণ্য চুরি সহজেই বন্ধ করা সম্ভব। সেই সাথে গার্মেন্ট চোরদের ধরে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।