২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
২২ বছরের মিষ্টি চেহারার মল্লিকা (ছদ্মনাম)। ইউনাইটেড হসপিটালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের (অবস ও গাইনি) বহির্বিভাগে আসে। সে লাজুক, উদ্বিগ্ন ও বিষণœ ছিল, কারণ গত ৮ বছর যাবৎ তার ক্রমাগত অল্প বিস্তর প্রস্রাব ঝরে পড়ছিল। ৮ বছর আগে সন্তান প্রসবের সময় খুব কষ্টকর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ প্রসব বেদনার পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে সেই শিশু কিছুক্ষণ পরে মারাও যায়। এর পর থেকেই তার সামান্য সামান্য প্রস্রাব ঝরতে থাকে যা পরে বাড়তে থাকে। মূলত এ জন্য তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। শেষে বাবার বাড়িতে তার স্থান হয়। সেখানে সে অখুশি ছিল। কেউ তাকে সঙ্গ দিত না এবং সে ঘরের কোনো কাজেও অংশ নিতে পারত না, কারণ তার শরীর থেকে ক্রমাগত প্রস্রাবের গন্ধ আসত।
আমরা মল্লিকার পরীক্ষা করে দেখি ও তার যোনি প্রাচীরের অগ্রভাগে ৪ সেন্টিমিটারেরও বড় একটি ক্ষত পাই। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় টেস্ট করার পর, এই ক্ষত মেরামত ও নিরাময়ে তার সার্জারী করা হয়।
অপারেশনে ৩ ঘণ্টার মত সময় লাগে যাতে খুব সামান্য রক্তপাত হয়। একটি ক্যাথেটার বা মূত্রনিষ্কাশন নল ২১ দিন একটানা তার মূত্রাশয়ে মূত্র নিষ্কাশনের জন্য রাখা হয়েছিল। ক্যাথেটারটি অপসারণ করার পরে, মূত্রনালিতে সামান্য সমস্যা দেখা যায়, যার জন্য তাকে একটি বিশেষ পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয় যা বেশ সহজ; তাকে নিয়মিত এই ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। বাড়িতে ফিরে যাবার এক মাস পর সে হাসপাতালে আসে, তার ফলোআপ পরীক্ষায় সে একেবারেই সুস্থ ছিল।
এটি হলো সত্য ঘটনা অবলম্বনে একজন মল্লিকার দুঃখের কাহিনী। আমাদের দেশে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অনেক মল্লিকা আছে, যারা সংকোচ ও অজ্ঞতার কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউএনএফপিএর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, সত্তর হাজারেরও অধিক নারী এই ধরনের সমস্যা ভেসিকো ভেজাইনাল ফিস্টুলা (ঠবংরপড় ঠধমরহধষ ঋরংঃঁষধ) এবং রেক্টো ভেজাইনাল ফিস্টুলা (জবপঃড় ঠধমরহধষ ঋরংঃঁষধ) তে আক্রান্ত। প্রায় ১ হাজারের মত রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এদের মাঝে শতকরা পঁচাশি জন অপারেশনের পর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। এছাড়াও প্রস্রাবের চাপ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন আর্জেন্সি ইনকন্টিনেন্স যখন রোগী প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে পারে না বা স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স যখন কাশি হাঁচি, হাসি বা অন্যান্য সাধারন চাপেও রোগীর প্রস্রাব ঝরে পড়ে ও পড়তেই থাকে। ট্রেনিং পায়নি এমন দাই দিয়ে সন্তান প্রসব করানোর কারণে, পোস্ট মেনোপোজাল অথবা রজঃনিবৃত্রি পরে, কোনো বড় আঘাত বা বড় ধরনের অপারেশনের পর অথবা মূত্রাশয়ে বা মলাশয়ে ক্ষত হলেও স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স হতে পারে। কিছু রোগীকে কাউন্সেলিং ও ঔষধের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা হয়, অন্যদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এই অস্ত্রোপচার যদিও বেশ সহজ, তবে এই ধরনের অপারেশনের জন্য যথার্থ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে এই অস্ত্রোপচার করা উচিত। এই অপারেশনে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজনীয়তা বেশ কম দিনের এবং ফলাফলও বেশ ভাল পাওয়া যায়।
বেশীরভাগ নারী ইউরিনারী ইনকন্টিনেন্স বা প্রস্রাবের বেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের সমস্যায় চিকিৎসা সহায়তা নেয় না বরং তারা মনে করে এটা নিরাময়যোগ্য নয় অথবা এটা তাদের দুর্ভাগ্যের কারণে ঘটেছে। অথচ এর প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা ও এর উন্নত চিকিৎসাও রয়েছে। অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় এই দুর্দশাগ্রস্ত রোগ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
ষ ডাঃ হাসিনা আফরোজ
বিশিষ্ট স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ
ইউনাইটেড হসপিটাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।