২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ক্যান্সারের কথা শুনতেই আমরা আঁতকে উঠি। কিন্তু একটু সচেতন হলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, শুরুতে ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এর প্রতিরোধে মেনে চলুন কিছু পরামর্শ। ধূমপান থেকে দূরে থাকুন : গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের যত কারণ জানা গেছে তার মধ্যে ৩৩ ভাগই ধূমপান। এমন কোনও ক্যান্সার নেই যার সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক নেই। বিশ্বে ১৩ লক্ষ লোক মারা যান ফুসফুসের ক্যান্সারে। এ ক্যান্সারের ৯০ ভাগই ধূমপায়ী। সিগারেট-বিড়িতে ৬৫ রকমের বেশি এমন পদার্থ থাকে, যা ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। অধূমপায়ীরা ধূমপায়ীদের মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পান-সুপারি, জর্দা, তামাক মুখ-গলা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। ক্র খাবারে সচেতন হোন : ভাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে এরইমধ্যে গবেষকরা প্রমাণ করেছেন। যেমন- জাপানে পাকস্থলির ক্যান্সার বেশি। কারণ হিসাবে গবেষকরা বলেছেন, জাপানিরা অর্ধসেদ্ধ মাংস বা স্মোকড ফুড বেশি খায়। আবার ইরানে খাদ্যনালির ক্যান্সার বেশি, তারা খুব গরম চা-কফি পান করে বলে। ফলমূল, শাকসবজি বেশি করে খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। খাবারের বেশিরভাগ অংশই উদ্ভিদজাত হওয়া উচিত। চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা দরকার। পোড়ানো ও ঝলসানো খাবার খাবেন না। এগুলো কোষকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার রোধে ভূমিকা রাখে। পেয়ারা, আমলকিসহ বেশিরভাগ টকজাতীয় ফল ও মরিচে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন ই পাওয়া যায় আমন্ড বাদাম, চিনাবাদাম, শালগম, ওলকপির পাতা এবং গমবীজ দিয়ে তৈরি তেলে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি একসঙ্গে সেবন করলে কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের একটি হচ্ছে সেলেনিয়াম, যার অল্প পরিমাণ উপস্থিতি কোলন ক্যান্সার ও ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী কোষকলা ধ্বংস করে। এই উপাদান আখরোট ও অন্যান্য বাদাম জাতীয় জিনিষের মধ্যে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মদ্যপান করলে স্তন, অন্ত্র, ফুসফুস, বৃক্ক বা কিডনি, যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ। চার ভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী মদ্যপান। যত বেশি পরিমাণে ও বেশি দিন ধরে মদ্যপান করা হবে, ততই বাড়বে এ ঝুঁকি। তাই মদ্যপান থেকে সাবধান।
ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণে : হাল সময়ে স্থূলতার হার বেড়ে গেছে। বেড়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। গবেষকরা জানিয়েছেন, স্থূলতার কারণে গোটা বিশ্বে ক্যান্সার হতে পারে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার, কিডনির ক্যান্সার। শারীরিক পরিশ্রম না করা, বেশি পরিমাণে ফাস্টফুড খাওয়া স্থ’ূলতার জন্য দায়ী। রোদ থেকে দূরে থাকুন : প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সারের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার অন্যতম। রোদের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য হুমকি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রোগে এ রশ্মি বেশি পরিমাণে থাকে। এ সময় রোদে বের হবেন না। বের হলেও সানস্ক্রিন লাগান। সানস্ক্রিনের সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর যেন ৩০-র বেশি হয়। ব্যবহার করুন ছাতা বা স্কার্ফ। সানগ্লাসে ঢাকুন চোখ। ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গে এটি চোখকেও রক্ষা করবে। সুতি ঢিলেঢালা, সাদা ও উজ্বল রঙের পোশাকে পুরো শরীর ঢেকে দিন। এতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে। ভ্যাকসিন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যকৃতের ক্যান্সারে প্রতিবছর প্রায় সাত লক্ষ লোক মারা যান। এদের অর্ধেকই মারা যায় হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সৃষ্ট যকৃতের ক্যান্সারের কারণে। ১৯৯২ সালে চীনে ১ কোটি ২০ লক্ষ লোক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওই ভাইরাসের কারণে চীনে ক্যান্সারের তালিকায় প্রথমে ছিল যকৃত ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে এ ভাইরাসের টিকা ব্যাপকভাবে চালু করে। এখন চীনে যকৃত ক্যান্সার কমে গেছে অনেকাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটি টিকা দেয়ায় বিশ্বব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। তবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগেই এ ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার। এতে ভ্যাকসিন ভালো কাজ করে। নিয়ন্ত্রণ করুন নিজেকে : অবাধ ও অরক্ষিত যৌনাচারের কারণে এইচআইভি-এইডস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি, সি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে হতে পারে বিবিন্ন ধরনের ক্যান্সার। অনুশাসন মেনে চলুন। অন্যের ব্যবহার করা সুচ ব্যবহার করবেন না। ক্যান্সার নির্ণয় করুণ শুরুতেই : স্তন ক্যান্সার, জরায়ুমুখ ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারসহ আরও অনেক ক্যান্সারই আছে, যেগুলো শুরুতে নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সাজিয়ে তোলা সম্ভব। এ ক্যান্সারগুলো নির্ণয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। নিজেই মাসে একবার নিজের স্তন পরীক্ষা করুন। অস্বাভাবিক কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
ষ আফতাব চৌধুরী
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।