Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যথাসময়ে পাতালরেল বাস্তবায়ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। পদ্মাসেতুসহ অসংখ্য সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেলের মতো আধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলছে। এর সাথে নতুনভাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে পাতালরেল। যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের জন্য এটি এক নতুন মাইলফলক হবে। গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি-১ এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হলো। এর আগে মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। সেটি মাটির উপর দিয়ে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, পাতালরেল দেশের জন্য এক নতুন মাইলফলক। ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম খর¯্রােতা নদী পদ্মার উপর দিয়ে সেতু, সড়কের উপর দিয়ে মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করে মাইলফলক তৈরি করা হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে এসব মাধ্যম আমাদের দেশে নতুন এবং আধুনিক। পর্যায়ক্রমে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও দ্রতায়নের বিকল্প নেই। এজন্য আকাশ, জল, স্থল ও মাটির নিচ দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। পশ্চিমাবিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ ধরনের নেটওয়ার্ক বহু আগেই গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশে যে পাতালরেল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা যুক্তরাজ্যে শত বছর আগেই গড়ে তোলা হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতেও এ ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও সক্ষমতার ঘাটতি থাকায় পিছিয়ে রয়েছি। তবে এখন বৈদেশিক সহযোগিতায় মেট্রোরেল, টানেল এবং পাতালরেলের মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এগুলো যেমন স্মারক হয়ে থাকবে, তেমনি মানুষের যাতায়াতও দ্রুত এবং স্বচ্ছন্দ হবে। তবে আমাদের দেশে মেগা প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হয় না। যে মেয়াদ ও বাজেট ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি সময় ও অর্থ লেগে যায়। এক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞরা যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি এবং নানা অজুহাতকে দায়ী করেন। একটি প্রকল্প যথাসময়ে শেষ না হলে দেশের আর্থিক অপচয় হওয়াসহ জনভোগান্তিও চরমে উঠে। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি দেখা যাচ্ছে। এমনও দেখা যায়, প্রকল্প শেষ হতে হতে এক প্রজন্মের বিদায় ঘটে। তাছাড়া, যে সময়ে বাজেট করা হয়, সে সময়ের টাকার মূল্যমান এবং নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরের মূল্যমান এক থাকে না। এখন যেমন যেসব মেগা প্রকল্প তৈরি ও চলমান রয়েছে এবং যে সময়ে এগুলোর বাজেট করা হয়, সে সময়ের ডলারের মূল্যমান বর্তমানের মূল্যমান এক নয়। ডলারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনোটির খরচ দ্বিগুণে গিয়ে ঠেকেছে। এগুলো যদি যথাসময়ে শেষ হতো তাহলে, এ খরচ বৃদ্ধি পেত না। পাতাল রেলের বাজেটের ক্ষেত্রে এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমাণিক ৫২ হাজার ৫৬১.৪৩ কোটি টাকা। এটি নির্মাণ করা হবে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে। আর পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত মাটির ওপর দিয়ে। এর দৈর্ঘ্য ৩১.২৪ কিলোমিটার। যে বাজেট ও সময়সীমা ধরা হয়েছে, পরিকল্পনামতো শেষ হলে, তা হবে এক যুগান্তকারি সাফল্য। পশ্চিমাবিশ্ব তো বটেই উপমহাদেশের অনেক দেশেই বড় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময় ও বাজেটে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার আগেই শেষ হয়ে যায়। এতে সময় ও অর্থ উভয় ক্ষেত্রে যেমন সাশ্রয় হয়, তেমনি জনভোগান্তি কমে জনগণের উপকার হয়।

যেকোনো প্রকল্প, তা ছোট বা বৃহৎ হোক, এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে নির্ধারিত বাজেট ও সময়ের মধ্যে শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেসব সমস্যার শঙ্কা থাকে তা আগেই সমাধান করা জরুরি। আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঘাটতি দেখা যায়। এমনও দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এর নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এটা যথাযথ পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবের কারণে হয়। তাছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ, জবাবদিহিতা ও সুশানের অভাবও পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন, মেগা প্রকল্প মানে মেগা দুর্নীতি। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। আমরা আশা করি, পাতালরেল যথাসময়ে ও নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে, জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে যেসব আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তা আগেভাগেই সমাধান করতে হবে, যাতে মসৃণভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। জনভোগান্তি কমানোর উদ্যোগসহ অপচয় রোধ ও জনগণ যাতে যথাসময়ে এর সুফল ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন