পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বলতে দ্বিধা নেই, সাধারণ মানুষ এখন অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছে। নিত্যপণ্যসহ বাজারে এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার এই পাগলা ঘোড়া কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিংবা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পাগলা ঘোড়ার সাথে দৌড়ে মানুষ কূল পাচ্ছে না। দম পাচ্ছে না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে, না হয় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকছে। তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দাম বৃদ্ধিরও একটা নীতি থাকে। আমাদের দেশে কোনো কালেই এই নিয়ম-নীতি ও নৈতিকতার তোয়াক্কা করেনি ব্যবসায়ীরা। তাদের ইচ্ছার ওপর পণ্যের দাম বেড়েছে। নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়েছে এবং বাড়াচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। সরকার সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা বিবেচনায় না নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে। গত সপ্তাহে এক তরুণ মুদি ও জেনারেল স্টোরের দোকানির সাথে কথা বলছিলাম। তিনিও হতাশ হয়ে বললেন, একযুগ ধরে দোকানদারি করছি, জিনিসপত্রের দাম এত বাড়তে দেখিনি। বাড়লেও একটা সীমা ছিল, দুই-তিন টাকা বা বড়জোর পাঁচ টাকা বেড়েছে। তবে একবারে বিশ-পঁচিশ টাকা বাড়তে দেখিনি। নিজে ব্যবসায়ী হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, দাম বাড়ার কোনো নিয়ম-নীতি নেই। সরকারও কিছু করছে না। তিনি বলেন, আমার এখানে বড়লোক কাস্টমার বেশি। তবে যারা নি¤œ ও মধ্যবিত্ত তাদের অবস্থাটা বুঝি। আগে যে পরিমাণ চাল-ডাল, বিস্কুট, দুধ নিত, তার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। তবে বড়লোকদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। তারা আসে, অর্ডার দেয়, মাল নিয়ে যায়। কোনো ভাবান্তর নেই। আফসোস করে তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের কি হবে! কেমনে বাঁচব! তার কথা শুনে মনে হলো, যে জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যে জন্মের পর যেভাবেই হোক কোটিপতি হয়েছে, তার আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। খারাপ হলে খুব একটা হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক চামচ পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমন। জিনিসপত্রের দাম যদি আকাশচুম্বীও হয়ে যায়, তাতেও তাদের কিছু আসে যায় না। তার কেনার সামর্থ্য অটুট থেকে যায়। আর যে মানুষটি দিন আনে দিন খায় বা নির্ধারিত আয়ের মানুষ, তার সমস্যার অন্ত থাকে না। সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তারা যেভাবে জীবনযাপন করে, তাতে টান ধরলেই আর হুঁশ থাকে না। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে তার দিশাহারা হওয়াই স্বাভাবিক।
দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে। একদা মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপকর্ম করে বেড়াত। অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। বাংলাদেশের অবস্থা সেরকম না হলেও, তার চেয়ে কম কিছু চলছে না। সাধারণ মানুষ খুবই বিপদের মধ্যে জীবনযাপন করছে। ‘সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না’, এমন একটা কথা ইতোমধ্যে প্রচলিত হয়ে গেছে। সরকার কেবল নিজের এবং তার সুবিধাভোগীদের কথাই চিন্তা করে। তাদের যত সুবিধা দেয়া যায় এবং সন্তুষ্ট করা যায়, সেদিকেই বেশি মনোযোগী। সাধারণ মানুষ ভাল থাকল কি থাকল না, তা নিয়ে খুব ভাবে না। এ ধারণা এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল। এই যে, কিছুদিন পরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, তার কুফল কিন্তু সাধারণ মানুষকেই ভুগতে হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বলা হয়েছে, শিল্প-কারখানায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের দেয়ার সামর্থ্য আছে। গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয়নি। তবে সরকার হয়তো এ কথাটা ভুলে গেছে, এতে বড়লোক ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো ক্ষতিই হবে না। তাদের উৎপাদন খরচ বাড়লেও উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেবে। ক্রেতা-ভোক্তাদের পকেট থেকে সে দাম তুলে নেবে। এটাই স্বাভাবিক। অতীতেও তাই দেখা গিয়েছে। আর এখন তো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরাসরি সরকার নিয়ে নিয়েছে। যেকোনো সময় তা বাড়িয়ে দিতে পারে। কোনো গণশুনানির প্রয়োজন নেই। গণশুনানি ছাড়াই সরকার ১৯ দিনের ব্যবধানে বিদ্যুতের দাম দুইবার বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের একটা কমন যুক্তি হচ্ছে, এসব খাতে ভর্তুকি দিতে হয়। অর্থাৎ সরকার লোকসান দিতে রাজি নয়, লোকসান দেবে সাধারণ মানুষ। সরকার তার অসুবিধা হয়, তা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। জনগণের অর্থ দিয়ে তাদের সেবার পরিবর্তে সরকার নিজের লাভ-লোকসান এবং সেবার কথা আগে চিন্তা করছে। এ ধরনের সরকার কি জনগণের সরকার হয়? অবশ্য সরকার বহু আগেই বলেছে, সে ব্যবসাবান্ধব সরকার। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এবং তারা ইচ্ছে মতো ব্যবসা করতে পারে তা নিশ্চিত করাকে সরকার তার দায়িত্ব মনে করে। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো কথা নেই। সরকারও তার মতো করেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। লোকসানের কথা বলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি থেকে শুরু করে সব সেবা খাতে কৌশলে দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়িক মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে। এই যে, সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, তার মধ্যে সরকারের একটা চালাকি রয়েছে। শীত মৌসুমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হয়, বিলও কম আসে। সরকার চালাকি করে এ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে বাড়তি বিলের বিষয়টি গ্রাহককে খুব একটা না ভোগায়। তবে গ্রাহক টের পাবে, যখন গরম বাড়তে থাকবে এবং বিদ্যুতের বিলও হু হু করে বাড়তে থাকবে তখন। এই বাড়ানোর মধ্যেও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো আবারও দাম বৃদ্ধির কথা বলেছে। যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, প্রতি মাসে কিছু কিছু সমন্বয় করা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এতে সাধারণ মানুষের সামনে আরও বিপদ রয়েছে। জীবনযাপনের টানাপোড়ন থেকে তাদের মুক্তি মিলবে না। এ কথা সবারই জানা, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব পণ্যের দাম বাড়ে। গ্যাস-বিদ্যুতের এই ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি যে, নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। সমস্যা হচ্ছে, দামবৃদ্ধির এই বোঝা সাধারণ মানুষকেই বইতে হয় এবং হচ্ছে। বড় লোকদের কিছু যায় আসে না। গ্যাসের দাম পাঁচ হাজার টাকা হলেও তাদের কিছু হবে না। সমস্যা শুধু ঐ দরিদ্র এবং সীমিত আয়ের মানুষদের। ভদ্রস্ত জীবনযাপন দূরে থাক, তাদের পক্ষে এখন কোনোরকমে খেয়েপরে বেঁচে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রকটভাবে তাদের দারিদ্র্য প্রকাশিত হচ্ছে। আত্মসম্মান নিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সরকার সাধারণ মানুষের এই দুর্দশা উপেক্ষা করে উন্নয়নের শ্লোগানের মধ্যে আচ্ছন্ন ও আবিষ্ট হয়ে আছে। সাধারণ মানুষ যে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই। দেশ থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া, ব্যাংক থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে লুটেরা শ্রেণীর ঋণ নিয়ে লুটে নেয়া, এসবের দিকে কোনো খেয়াল নেই। অথচ, আইএমএফ-এর মাত্র সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার কী ব্যাকুলতাই না প্রকাশ করেছে। এই ঋণ না পেলে যেন কোনোভাবেই চলবে না। এজন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে। বলা বাহুল্য, এই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অনেক শর্ত দিয়েছে। এসবের অন্যতম একটি হচ্ছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে সরকার যে আইএমএফ-এর কথা মতো ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই ভর্তুকি সরকার দিচ্ছে না, সাধারণ মানুষের পকেট কেটে দিচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের সুবিধাভোগী বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়মিত নিয়ে নিচ্ছে। এদিকে সরকার নজর না দিয়ে সাধারণ মানুষের পকেটের দিকে নজর দিয়েছে। এমন ‘হীরক রাজা’র দেশ বিশ্বে আর কোথাও আছে কিনা, তা জানা নেই। একদিকে, লুটেরাদের ব্যাংক লুট করে বিদেশে পাচার করার সুযোগ, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না দিয়েই টাকা নিয়ে নেয়ার মতো, এমন অভাবনীয় অনিয়ম বিশ্বে বিরল। এই বিরল ঘটনার শিকার হয়েই সাধারণ মানুষের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে।
তিন.
জনগণের প্রতি সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ, সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। যেকোনো কিছুর দাম বাড়ানোর সময় উসিলার শেষ থাকে না। বিশ্ব বাজারে দামবৃদ্ধির কথা বলে বাড়িয়ে দেয়, কমলে আর কমায় না। যত জোরে বিশ্ব দাম বাড়ার কথা বলে, দাম কমার বিষয়টি উচ্চারণই করে না। এতে বোঝা যায়, সরকার চায় না, সাধারণ মানুষ সাচ্ছন্দে থাকুক। থাকলে নিশ্চয়ই দামের সমন্বয় করত। না করার কারণ হচ্ছে, সরকার নিজে ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা করতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে কেবল উন্নয়নের শ্লোগান দিয়ে মোহাচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। এ শ্লোগান দিয়ে তাদের মন ও পেট ভরাতে হবে। সরকারের এই আচরণকে জনগণের সাথে চালাকি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! এই চালাকি দিয়েই সাধারণ মানুষকে দমিয়ে রাখছে। তাদেরকে কষ্টের মধ্যে অভ্যস্ত করে তুলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে হাঁপিয়ে বাঁচার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণেরও কোনো উপায় সাধারণ মানুষ দেখছে না। তাদের এই দুর্দশার কথা যে তুলে ধরবে তারও কোনো উপায় নেই। তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত রাজনৈতিক দল, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের কথা তাদের কণ্ঠ খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে না। নিত্যপণ্য ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্স আর বিবৃতি দিয়ে দায় সারছে। গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবেÑএমন দুয়েকটি গৎবাঁধা বক্তব্য দিয়েই খালাস। সরকার তাদের এসব কথা আমলে নেয় না। সে চলছে, তার মতো করেই। এখানে সাধারণ মানুষ বাঁচল কি মরল, তাতে কিছু যায় আসে না। অথচ জনগণের এই দুঃসময়ে বিরোধীদলগুলোর সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে আলাদা কর্মসূচি দেয়া উচিৎ। সরকারের ব্যবসায়িক মনোভাবের প্রতিবাদ এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় হচ্ছে, তা তুলে ধরা জরুরি। এতে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যাবে। তারা সান্ত¦না পাবে, তাদের পক্ষে কথা বলার লোক আছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম আছে। সরকার শুনুক বা না শুনুক, এই প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষ বুঝবে, বিরোধীদলগুলো তাদের নিয়ে ভাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া এবং আপসের রাজনীতি করলে কখনো সফল হওয়া যায় না।
চার.
সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের কাছে থাকুক, সচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, এ সময়ে সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তারা স্বস্তিতে দম নিতে পারছে না। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। যদি এমন হতো, মানুষের আয় বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। সরকার তার কাছের লোকজন, সরকারি চাকরিজীবী, ধনীশ্রেণী এবং ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি দিয়ে সাধারণ মানুষের আয় বিবেচনা করছে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়া-কমার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে না। তারা গোল্লায় গেলেও তাতে তার কিছু আসে যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা পাচ্ছে না। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং এর ফলে জিনিসপত্রের দাম ও পরিবহণ ভাড়া আকাশচুম্বি হলেও, সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল সাধারণ মানুষের। এখন সরকারের আচরণ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, জনগণই তার সেবা করবে। সে নয়, জনগণ তার সেবক। যত ভার তাদের বইতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও তাদেরকেই নিতে হবে। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের এই দুর্দশা বুঝবে কবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।