Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইএমফ’র ঋণে সঙ্কট উত্তরণের প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনের ব্যাপারে আগেই গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছিল আইএমএফ প্রতিনিধিরা। গত অক্টোবরের ২৬ থেকে নভেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত আইএমএফ প্রতিনিধিদের সফর ও ধারাবাহিক আলোচনা শেষে তারা এই বার্তা দিয়েছিল। অবশেষে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আইএমএফ’র বোর্ড মিটিংয়ে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়, যায় বাংলাদেশের চাওয়ার চেয়েও ২০ কোটি ডলার বেশি। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭.৬ কোটি ডলার ছাড় করা হবে এবং আর্থিকখাতসহ প্রশাসনিক সংস্কারের শর্তসমুহ প্রতিপালন সাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরে ৬টি কিস্তিতে এই ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। আইএমএফ’র ঋণের সুদের হার ২.২ শতাংশ। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে, বিশেষত রিজার্ভ ও ডলার সঙ্কট লাঘবে আইএমএফ ঋণ যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তবে দুর্নীতি, অর্থপাচার বন্ধ করাসহ আর্থিক খাতের সংস্কার প্রস্তাব সমূহ বাস্তবায়ণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে আইএমএফ’র ঋণ সাময়িকভাবে রির্জাভের উপর চাপ কমাতে পারলেও অর্থনৈতিক সঙ্কটের বড় রকমের সুরাহা করতে পারবে না।
করোনা মহামারী উত্তর বিশ্ববাস্তবতা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের দেশে দেশে মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার পর এখন পাকিস্তান বড় ধরণের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ধর্না দিয়েও ডলারের সঙ্কট মোকাবেলায় আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ নিতে পারছে না। সেখানে বাংলাদেশকে প্রস্তাবের চেয়ে বেশি অঙ্কের ঋণ মঞ্জুরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। সঙ্কটকালে আইএমএফ’র এই ঋণ মঞ্জুরির বার্তা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। এতদিন ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ডলার সঙ্কট, ডলারের অভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এলসি খুলতে না পারা, খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির খরচ মিটাতে সরকারের হিমশিম অবস্থায় সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় অনেকেই দেশে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আইএমএফ’র ঋণ ছাড়ের মধ্য দিয়ে রির্জাভের উপর চাপ কিছুটা কমবে এবং শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির আশঙ্কা আপাতত দূর হবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, মেগা প্রকল্পে অতি উচ্চ ব্যয়, সময় ক্ষেপণ এবং মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের সমাধান অসম্ভব হতে পারে। ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা ও আইনগত অস্বচ্ছতা দূর করার পাশাপাশি মানুষের আস্থাহীনতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের মত সেবা খাতের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তার অধিকার ও আইনগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
সময়মত এবং বর্ধিত হারে আইএমএফ’র ঋণ অনুমোদিত হওয়ায় প্রমানিত হয়, সরকারের সংশ্লিষ্টরা আইএমএফ প্রতিনিধিদের আস্থা অর্জনে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশের সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়োচিত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। অর্থমন্ত্রী আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করেছেন। আইএমএফ-এর সব শর্ত পুরণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব কিনা, বিশেষত তাদের শর্তে অস্বাভাবিক হারে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর খড়গ দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষের উপর পড়ছে। মূল্য বাড়িয়ে সরকারের ভর্তুকি কমানো এবং ঋণের সুদসহ কিস্তি পরিশোধের সক্ষমতা বাড়লেও জনগণের মৌলিক চাহিদা পুরণে বড় ধরণের সঙ্কট ও অক্ষমতা চেপে বসেছে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের আয় বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া এ সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব নয়। গতকাল প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের আরেক ধাপ অবনতির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, সরকারের কথিত উদ্যোগগুলো দুর্নীতি কমিয়ে আনতে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্নীতি, অপচয় এবং সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। অর্থমন্ত্রীর দুর্নীতি নিরোধের অঙ্গীকার শুধু কথার কথা হয়ে থাকলে চলবে না, তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিই অর্থনীতির প্রধান শত্রু। দুর্নীতি দূর করার উপর জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তখন এক মাসের ব্যবধানে দুইবার অস্বাভাবিক হারে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ কাঙ্খিত নয়। আইএমএফ’র ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সঙ্কট লাঘব এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় মূল্যস্ফীতির দুর্বহ বোঝা কমিয়ে আনতে টেকসই বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • hassan ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৬ এএম says : 0
    আজ চোর-বাটপার দেশ শাসন করে এবং তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করে আর আজকে মাত্র 4 বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হচ্ছে আমাদেরকেই সুদে-আসলে শোধ করতে হবে সরকারের তো কোনো কিছু আসে যায় না তারা তো খালি চুরি করেই যাবে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন হলে এক পয়সাও চুরি করত না উন্নত হতো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন