পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারণ তারা আইএসকে নির্মূল করেননি
দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট : বার্লিনে বড়দিনের মেলায় বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার পর সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইউরোপীয় রাজনৈতিক নেতারা সেই একই ভুল করছেন, যা তারা করেছিলেন প্যারিস ও ব্রাসেলসে বোমা হামলার পর। তিউনিসিয়ার পাতি অপরাধী আনিস আমরি হুমকি হয়ে ওঠা সত্ত্বেও তাকে চিহ্নিত ও নিষ্ক্রিয় না করতে পারার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতার উপর অত্যধিক মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যে কারণে এ ধরনের নিষ্ঠুরতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, সিরিয়া ও ইরাকের সেই যুদ্ধ অবসানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সামান্যই।
আমরিকে ২৩ ডিসেম্বর ইতালির মিলানে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের পর সম্ভাব্য হুমকিতে পরিণত হওয়া আমরির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না এবং যারা এত ব্যর্থ হয়েছেন তাদের দোষকে প্রকৃত যা তার চেয়ে বড় করে দেখা হয়। তারা কিছু করার আগেই সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের সংখ্যা পুলিশের নজরদারির জন্য ছিল অনেক বেশি।
কোনো রাজনীতিক বা চাকরি বজায় রাখতে আগ্রহী নিরাপত্তা কর্মকর্তা শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ জনগণকে বলতে পারেন না যে, তাদের রক্ষা করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সমালোচকদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হন, যারা সরকারের অযোগ্যতাকে দায়ী করতে সুবিধামতো সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করেন অথবা আশ্রয় প্রার্থী, অভিবাসী বা মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক শাস্তি দাবি করেন। এ রকম সময়ে মিডিয়া তাদের স্বীয় ন্যায়পরায়ণতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে হিস্টিরিয়াকে জাগিয়ে তোলে এবং ছোটখাটো কিন্তু ভীতিকর ঘটনাকে অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মূলক হিসেবে চিত্রিত করে। এটা সবসময়ই সত্য ছিল, কিন্তু ২৪/৭ এর সংবাদ পরিবেশন তার আরো অবনতি ঘটায় যখন সাংবাদিকদের বলার বিষয়ের অভাব দেখা দেয় এবং তারা মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেন।
কিন্তু মাত্রা ছাড়ানো প্রতিক্রিয়ায় সরকারগুলো ও মিডিয়া সন্ত্রাসীদের হয়ে কাজ করে যারা ভীতি সৃষ্টি ও তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। তবে তাদের তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হয় তখন যখন তারা অতিরঞ্জিত আত্ম-ধ্বংসী জবাবের উস্কানি দেয়। ৯/১১ হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সন্ত্রাসী হামলা। তা এ কারণে নয় যে এতে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়, বরং তা এ জন্য যে, তা বুশ প্রশাসনকে আফগানিস্তান ও ইরাক হামলায় প্রলুব্ধ করে যার পরিণতিতে দেখা যায় গুয়ান্তানামো, আবু গ্রাইব, প্রতিহিংসা, নির্যাতন ও টার্গেটেড কিলিং (অন্য কথায় হত্যা অভিযান)। এ সব কিছুই ছিল ৯/১১-এর অবদান যা আল কায়েদা ধরনের সংগঠনের লোকবল সংগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
অধিকাংশ যুদ্ধের তুলনায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই অধিক দৃষ্টিগোচরভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০০১ সালে আল কায়েদার সদস্য সংখ্যা ছিল কয়েকশ’। কিন্তু আজ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পাশাপাশি তাদের যোদ্ধা ও সমর্থক সংখ্যা বহু হাজারে দাঁড়িয়েছে এবং কয়েক ডজন দেশে তারা ছড়িয়ে আছে।
রাজনৈতিক নেতারা দায়হীন নন, তবে তাদের ভুল বিষয়ের জন্য দায়ী করা হয় বলে মনে হয়। ‘লোন উল্ফ’ সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে কথা বলার বিপরীতে আমরির মত অধিকাংশ লোকের প্রতি সহানুভূতি বা সমর্থনমূলক সংযোগ আছে। তার ঘটনায়, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন সে আইএসের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং একজন সালাফি প্রচারকের সাথেও তার যোগাযোগ ছিল। অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের বাইরে তার অতিরিক্ত অল্প কিছু প্রেেয়াজন ছিল। বড়দিনের উৎসব উদযাপনকারী জনতার উপর একটি ট্রাক চালিয়ে দেয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না।
ইউরোপে বর্তমানে যে সন্ত্রাসী হামলার ঢেউ বইছে তাতে আইএসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা মতাদর্শগত প্রেরণা দান ও তাদের কাজের পক্ষে যুক্তি প্রদান করে এবং প্যারিস ও ব্রাসেলসের মতো সন্ত্রাসী সেল নিয়ন্ত্রণ ও টিকিয়ে রাখে। যতদিন পর্যন্ত এ সকল জিনিস যোগান দিতে পারার মতো আইএস সুসংগঠিত ও সামর্থবান থাকবে ততদিন সন্ত্রাসকে পরাজিত করা যাবে না। সব সময়ই সুযোগ পেলেই তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলবে।
আইএসের অব্যাহত অস্তিত্ব মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতার প্রমাণ। এরাই তারা যার ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার দ্বারা আইএসের উত্থানের আসল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তারাই ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে সিরিয়াকে টুকরো টুকরো করে এবং তাদের বিশ^াস ছিল যে এর ফলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তা ইরাক ও সিরিয়ায় সীমাবদ্ধ রাখা যাবে। আইএস সৃষ্টির পর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অভিবাসীদের মধ্য ইউরোপে পলায়ন শুরু হয় এবং ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। রাজনীতিক ও কর্মকর্তারা সম্ভাব্য বিপদ তখনি আঁচ করেন।
আত্মপ্রকাশের আড়াই বছর পরও আইএস এখনো সক্রিয়। শুধু নভেম্বরেই ইরাকে ২৮৮৫ জন নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছে আইএস ও ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে লড়াইেেয়। গত মাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ছিল আলেপ্পোর পতনের দিকে। এ সময় মসুলে নিজ এলকায় আইএসের টিকে থাকা ও সিরিয়ায় আইএসের পালমিরা পুনর্দখলের দিকে মনোযোগ কমই দেয়া হয়।
ইরাক ও সিরিয়ায় কি ঘটছে এবং ইউরোপের সড়কগুলোতে এর দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি নিয়ে বিভিন্ন সরকার ও বার্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে মারাত্মক মতভেদ রয়েছে। ১৭ অক্টোবর যখন ইরাকি সশস্ত্র বাহিনী ও কুর্দি মিত্ররা মূল অভিযান শুরু করে, তখন পর্যন্ত সেখানকার বৃহত্তম নগর কেন্দ্রটি সালাফি জিহাদীদের কোনো একটি গ্রুপের দখলেই ছিল, ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছিল যে, আইএস তার শেষ আশ্রয়টুকুও হারাবে।
তা ঘটেনি। ইরাকি সশস্ত্র বাহিনীর এলিট ইউনিটগুলো, বিশেষ করে ১০ হাজার সদস্যের ‘সোনালি ডিভিশন’টি তাদের ৫০ শতাংশ সৈন্য হারিয়েছে। পূর্ব মসুলে দক্ষ কৌশলের কাছে তারা বিপর্যস্ত হয়েছে যেখানে আইএসের ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলো বাড়ির দেয়ালের গায়ে কাটা গর্ত ও টানেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দ্রুত তাদের স্থান পরিবর্তন করছে। তারা স্থায়ী অবস্থান পরিহার করছে যেগুলো গোলন্দাজ বাহিনী ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান বাহিনী দ্বারা চিহ্নিত হতে পারে। ইরাকি বাহিনী যখন সঙ্কীর্ণ গলিপথে ঢুকছে তখন তারা তাদের বহনকারী যানের উপর হামলা করছে। জাতিসংঘ বলছে যে শুধু নভেম্বরেই আধা সামরিক শিয়া মিলিশিয়া ইউনিট ও কুর্দি পেশমের্গা ইউনিটের সদস্যসহ ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্য নিহত হয়েছে।
মসুল অভিযান ব্যাপকভাবে স্থগিত রয়েছে এবং দজলা নদীর পশ্চিম পাড়ে মসুল শহরের প্রধান অংশে এখন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। পূর্ব মসুলের যেসব জেলা কয়েক সপ্তাহ আগে দখল করা হয়েছিল সেগুলো আবার দখল করতে হবে। মসুলের উপর ইরাকি হামলার প্রধান চাপটি দক্ষিণ দিক থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পার হলেও এ ফ্রন্ট খোলা হয়নি। জানা গেছে, আইএস পালমিরা দখলের জন্য মরুভূমির উপর দিয়ে ৫শ’ যোদ্ধা পাঠায়। ১৮ মাসের মধ্যে আইএসর এটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল।
আইএস এমন সংগঠন নয়, যা তাদের কর্মকা- পরিত্যাগ করতে যাচ্ছে বা বিলুপ্ত হচ্ছে। পূর্ব আলেপ্পো রক্ষায় জাবহাত আল নুসরা, আহরার আল শাম ও অন্যান্য গ্রুপের ব্যর্থতা আরো দৃঢ়ভাবে ও সফলতার সাথে সম্ভবত আইএসের অত্যন্ত দক্ষ ও দুর্ধর্ষ যোদ্ধাদের রক্তক্ষরণ ঘটাবে। তাদের একটি সুবিধা এই যে অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপগুলো যখন তুরস্ক, সউদী আরব ও কাতারের মতো বাইরের দেশগুলোর সমর্থনের উপর নির্ভরশীল তাদের তা অনেক কম। এটা দীর্ঘমেয়াদে আইএসকে রক্ষা নাও করতে পারে , কারণ তাদের শত্রুরা শক্তিশালী। তবে তারা আবার দেখিয়েছে যে পেন্টাগন যা অনুমান করে তার চেয়ে তারা শক্তিশালী।
এখানে ইউরোপের জন্য গুরুতর পরিণতি রয়েছে। আইএস কয়েক বছর ধরে স্বল্প মাত্রার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যেতে পারে যা সবে বার্লিনে চালানো হয়েছে। তবে ধর্মীয় প্রণোদনা বা বস্তু সাহায্যের মাধ্যমে তাদের বেশি করা করা সম্ভব হবে না। যখন কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিবর্তন করতে সক্ষম। আইএস তা জানে এবং যতদিন তারা থাকবে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।