পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বান্দরবানে উপজাতি সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সংর্ঘষে উভয় পক্ষে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। গত সোমবার ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কেএনএফ’র গোলাগুলিতে অন্তত ৩ জন নিহত ও বেশকিছু আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সমঝোতা চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া জোরদারে পাবর্ত্য উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রয়াস অনেকটা সফল হয়। বিদেশ থেকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাওয়া পাহাড়ি সন্ত্রাসউদের সাথে শান্তিপ্রিয় সাধারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে হানাহানি-রক্তপাত অনেকটাই কমে এসেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাসহ এথনিক জনগোষ্ঠিগুলোর উপর মিয়ানমার সেনবাহিনীর অব্যাহত চাপ ও জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনার প্রেক্ষাপটে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান নাফ নদী ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় লাভের পর আন্তর্জাতিকভাবে সমুহ চাপের মুখে থাকা মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে দেশটির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনার প্রেক্ষাপটে বেশকিছু নৃজাতি গোষ্ঠির সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দেয়। তবে সামরিক-ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেরাও প্রক্সি বাহিনী গঠন ও ফল্স ফ্ল্যাগ অপারেশন চালিয়ে জাতিগত নির্মূল অভিযানের অজুহাত সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু জাতীগোষ্ঠির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকারের প্রশ্নগুলোকে দাবিয়ে রাখতে মিয়ানমার বাহিনীর নির্মম তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। নিরস্ত্র রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চাপিয়ে দেয়ার ধারাবাহিকতায় এই মুহুর্তে মিয়ানমারের সীমান্ত রাজ্যগুলোতে তিরিশটিরও বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠির বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে মিয়ানমার বাহিনীকে। গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তরাঞ্চলের সাঙ্গাইঙ্গ এলাকায় কথিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে হেলিকপ্টার থেকে একটি স্কুলের উপর গুলি চালালে স্কুলের ১১ শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং অন্তত ১৫ জন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়েছিল জাতিসংঘের চিলড্রেন অ্যাফেয়ার্স সংস্থা ইউনিসেফ। মূলত ২০২১ সালে মিয়ানমারে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা মানুষদের দমন করতেই এ ধরণের ভীতিকর সামরিক অভিযান জোরদার করেছে সে দেশের সামরিক বাহিনী। প্রায় সবগুলো সীমান্ত প্রদেশেই বিভিন্ন জাতীগোষ্ঠীর সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মিয়ানমার বাহিনী। মিয়ানমার বাহিনীর সশস্ত্র বিদ্রোহী দমনের অভিযান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের উপর বড় ধরনের চাপ ও নিরাপত্তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর আকাশ সীমা লঙ্ঘন এবং সীমান্ত পেরিয়ে আসা গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের প্রতিবাদ-উদ্বেগের ভাষাকে মিয়ানমার সরকার কিংবা সামরিক জান্তা তেমন গ্রাহ্য করছেনা বলেই প্রতীয়মান হয়। উপরন্ত বান্দরবানে কেএনএফ সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান এবং সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তির মদত দানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসছে।
তমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর সীমা লঙ্ঘন ও সেখান থেকে নতুন করে হাজার হাজার মানুষ ভারত ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোও গুলি চালাবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কোনো পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের খবর না পাওয়া গেলেও এখন কেএনএফ সশস্ত্র গ্রুপের মত বিদ্রোহী গ্রুপকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনো পাহাড়ী সন্ত্রাসী দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন তারা শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণে পেশাদারি দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, একইভাবে দেশের প্রতিটি দুর্যোগেও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের সেনাবাহিনী সব সময়ই আপসহীন ভূমিকা অব্যাহত রেখে চলেছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বিদেশি অর্থায়নে পুষ্ট পাহাড়ী সন্ত্রাসিদের হাতে বাংলাদেশের হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ এবং সেনাসদস্য নিহত হলেও দেশের এক দশমাংশ আয়তনের পাবর্ত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অখ-তার প্রশ্নে বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশ সরকার কিংবা সেনাবাহিনী কখনো মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বা জাতিগত দমনাভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের ষড়যন্ত্রমূলক লক্ষ্যকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সন্তু লারমার সাথে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে সময়ের বাস্তবতায় বেশকিছু বিতর্কিত ধারা ছিল। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের সেনাবাহিনী পাহাড় থেকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেনা চৌকি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ঊনবিংশ শতকে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা পাহাড়িদের সাস্কৃতিক-অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার নামে যেসব আইনগত নিরাপত্তা দিয়েছিল পরিবর্তিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তা রক্ষা করা যৌক্তিক, সঙ্গত ও বা জরুরি কিনা তা বিচার-বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দারিদ্র্য পীড়িত বাংলাদেশের বাস্তবতায় নতুন ডেমোগ্রাফিক বিন্যাস, কৃষি ও পর্যটনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আলোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর প্রয়াসে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে যে ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নিশ্চিতে চলমান বাস্তবতার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এক সময়ের প্রায় জনবসতিহীন পার্বত্যাঞ্চলটি বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে বার বার বিদেশি আক্রমণ ও দখলদারিত্বের সম্মুখীন হয়েছে। খৃষ্টীয় দশম ও ষোড়শ শতকে দুইবারে প্রায় দেড়শ’ বছর আরাকান অঞ্চলের রাখাইনদের দ্বারা এবং ত্রিপুরার শাসকদের দ্বারা দখল ও শাসিত হয়েছে। অষ্টাদশ শতকে সুবে বাংলার শাসকদের হাত থেকে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে যে নতুন প্রশাসনিক বিন্যাস করেছিল পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এখনো অনেকটা সেই বিন্যাসের ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় যে আইনগত বিতর্ক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের পাবর্ত্য উপজাতিদের বসতি স্থাপন ও ডেমোগ্রাফিক বিন্যাসের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, এরা কেউই এখানকার আদিবাসী নয়। কিছু বিদেশি এনজিও এবং দেশের কোনো কোনো মহল এদেরকে আদিবাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করলেও তাদের দাবি ধোপে টেকেনা। আমাদের রাষ্ট্র এবং সংবিধান উপজাতিদের আদিবাসী দাবির স্বীকৃতি দেয়নি। তবে বিদেশি স্বার্থান্বেষী এনজিওদের ক্রীড়নক একশ্রেণীর তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এখনো তাদের লেখা এবং সভা-সেমিনারে পাবর্ত্য উপজাতিদের আদিবাসী বলে আখ্যা দিচ্ছে। কেউ কেউ আইএলও’র ১৬৯ নং কনভেনশনের আলোকে এই বিতর্ক চাউর করতে চাইলেও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি উপজাতীর ডায়াসপোরা কিভাবে আমাদের দেশে আদিবাসী হয়, তার অ্যাকাডেমিক ব্যাখ্যা তারা কখনোই দিতে পারেনি। এ কারণেই এদের মতলববাজির বিষয়ে ইতিমধ্যে জনসচেতনতা তৈরী হওয়ায় তাদের প্রচারনার হালে তেমন পানি পাচ্ছেনা। মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের ভৌগলিক রাষ্ট্রসীমায় বসবাসকারী উপজাতী বা অবাঙ্গালীদের ইতিহাস বাঙ্গালীদের ইতিহাসের চেয়ে প্রাচীন নয়। হুজুগে পড়ে যারা উপজাতীদের আদিবাসী বলে দাবী করছেন, তারা কেউ তা প্রমান করতে পারেননি। বলা যেতে পারে, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও বিভক্তি নির্বিশেষে এ নিয়ে একটি মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সে বিতর্ক সামনে এনে দেশের পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাঙ্গালীদের বিতাড়িত করা বা অধিকার খর্ব করার যে কোনো ষড়যন্ত্র জাতি রুখে দিবে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার সুযোগ, বিনিয়োগ, সরকারি চাকরি এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও উপজাতীয় নৃগোষ্ঠীর নাগরিকদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়ভাবে অবারিত। একইভাবে এ দেশের তরুণরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের অবস্থান ক্রমেই সুদৃঢ় ভিত্তি লাভ করতে দেখা যাচ্ছে। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত নাগরিক ঋষি সুনাক বৃটেনের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী এবং প্রধানমন্ত্রী হতে কোনো বাধা নেই। বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাবর্ত্য অঞ্চলে বাঙ্গালীদের বসতি, বিনিয়োগ, জমি ক্রয় ও সম্পদের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত বাঁধা থাকা সমীচিন কিনা তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই ভেবে দেখতে হবে। পাহাড়ে উপজাতীদের অধিকার অক্ষুন্ন রেখেই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের নতুন রূপরেখা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে সমতল বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার মানুষ বাস করছে, সেখানে পাহাড়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২০ জনের বেশি নয়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, সাজেক ভ্যালি, নীলগিরি নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য হতে পারে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যটন আকর্ষণ।
আয়তনের দিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের এক দশমাংশ বলা হলেও ভূ-প্রকৃতিগতভাবে তা দেশের আয়তনের অন্তত এক পঞ্চমাংশ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রচলিত সাধারণ জরিপ পদ্ধতিতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের আয়তন ৫০৯৩ বর্গমাইল বা ১৩,২৯৫ বর্গকিলোমিটার হলেও পাহাড়ের উপরিস্থিত ভূমিখ-, চতুর্পাশ্বের ঢাল ও দুই অংশের মধ্যবর্তী ভাঁজ মিলিয়ে এর আয়তন দ্বিগুণের বেশি দাঁড়ায়। জ্যামিতিক হিসেবে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের আয়তন হতে পারে কমপক্ষে সাড়ে ১১ হাজার বর্গমাইলের বেশি। পাবর্ত্যাঞ্চলের দুর্গম সীমান্তগুলো এখনো অচিহ্নিত ও অরক্ষিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভূমি হারানোর আশঙ্কা বিদ্যমান। এক গবেষণা রিপোর্টে জানা যায়, বৃটিশ শাসনামলের শেষ ৮৭ বছরে (১৮৬০-১৯৪৭) বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা থেকে ১৭০৩ বর্গমাইল এলাকা প্রতিবেশী প্রদেশগুলোর দখলে চলে গেছে। পাবর্ত্য অঞ্চলে কৃত্রিম বিদ্রোহ ও সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে সক্রিয় রেখে ভূমিদখলসহ নানাবিধ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের মত গ্রুপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ অধিবাসীদের উপর হামলা চালানোর সাহস কোত্থেকে পায়, তা অনুধাবন করা খুব কঠিন কাজ নয়। রোহিঙ্গা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও আইনগত প্রশ্নে মিয়ানমার, ভারত ও চীনকে প্রায় অভিন্ন অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তে কয়েক ডজন বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আন্দোলন বিক্ষোভ ক্রমেই জোরালো হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তেও কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার অপতৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এ ধরণের অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমনের কোনো বিকল্প নেই। সেই সাথে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধ্য করতে রাজনৈতিক-কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে বিকল্প সামরিক ব্যবস্থার প্রস্তুতির কথাও ভাবতে হবে। রাখাইনের মুসলমানরা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র চায়না, তারা নিজেদের হারানো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, মগ, মুরং, ¤্রাে, ত্রিপুরা, লুসাই , গারো, সাওতাল, পাংখোসহ সব উপজাতী জনগোষ্ঠী পূর্ণ নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করছে। আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস এসব উপজাতী জনগোষ্ঠীর ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন ও সুস্পষ্ট। তাদের জনসংখ্যা বাংলাদেশের পাহাড়ী সব উপজাতীর সংখ্যার চেয়ে বেশি। গণহত্যা চালিয়ে তাদেরকে পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করার ঘটনাগুলো বিশ্বসভ্যতার জন্য বড় ধরণের বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে নীরব থাকার কোনো সুযোগ নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এক সময় রাখাইন ও ত্রিপুরার রাজারাও বাংলাদেশের পাবর্ত্য অঞ্চলে দখলদারিত্ব চালিয়েছিল। সে সময় রাখাইন ও ত্রিপুরা থেকে উপজাতী জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষকে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এরা এ দেশের আদিবাসী হতে পারেনা। নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে যতই পার্থক্য থাকুক, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার সমান ও সুরক্ষিত। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উপজাতীদের মধ্যে অনেক ভুল শিক্ষা ও ভ্রান্ত রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও তৎপরতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক শ্রেণীর এনজিও এবং মিশনারিদের মতলবি তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মূল ¯্রােতে পাহাড়ের সম্পদ ও জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক মুক্তির সমাধান পাহাড়ি-বাঙ্গালী ঐক্যের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।