Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৫ এএম

দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি মাসে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। গত এক বছরে ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ের রয়েছে ১০৬ জন। মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন। সবমিলিয়ে দেশে প্রতি বছর গড়ে দশ হাজারের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানীরা হতাশা, ব্যর্থতা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, পারিবারিক কলহ, অভিমান, মানসিক চাপ ইত্যাদিকে দায়ী করছেন। কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অপরিণত স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহননের প্রবণতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি শঙ্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা জাতির ভবিষ্যত। তারাই যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে জাতির ভবিষ্যত কী হবে, তা বোধকরি বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। জাতি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। বলা বাহুল্য, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অমিত মেধা ও সম্ভাবনা থাকে। আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতা ও অপরিপক্কতা এবং কোনো ধরনের নৈতিক মূল্যবোধের বিধি-নিষেধের মধ্যে না থাকার কারণে তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলছে।

আত্মহত্যা বৃদ্ধি কোনো দেশের জন্যই ভালো বিষয় নয়। এর মধ্যে নীতি-নৈতিকতা, পারিবারিক ও সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব প্রকট হয়ে উঠে। হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং পারিবারিক ও সামাজিক সুশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের মানুষ এগিয়ে এসেছে। শত সমস্যার মধ্যেও মানুষ সাধারণত আত্মহননের কথা চিন্তা করে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এবং রাষ্ট্র পরিচালকদের ত্রুটি ও অদূরদর্শীতার কারণে পরিবার এবং সমাজে যেমন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্য্য তৈরি হচ্ছে। তা নাহলে, কিশোর শিক্ষার্থীর মধ্যে কেন আত্মহননের মানসিকতা ঠাঁই পাবে? আমরা কথায় কথায় উন্নয়নের স্লোগান তুলে ধরি, উন্নয়নের রোল মডেল বলি। এই যে উন্নয়ন, এগুলো কার জন্য? কারা এসব ভোগ করবে? যাদের জন্য এতসব আয়োজন, তারাই যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে এ উন্নয়ন দিয়ে কি হবে? যদি তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার মতো মানসিকতা বিরাজ করে, তাহলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কারা? শুধু কিশোর শিক্ষার্থীই নয়, যুবকশ্রেণীর মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠেছে। বেকারত্ব, দ্রারিদ্র্য ও হতাশা থেকে পালানোর জন্য কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থেকে বাঁচতে অসংখ্য তরুণ কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ করছে। অনেকে ভিটামাটি, জমিজমা ও ধারদেনা করে কোনো কিছু না ভেবেই অবৈধ পথে বন-জঙ্গল, সাগর পাড়ি দিচ্ছে। এই পথের সন্ধান করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে কেউ কেউ বলেছেন, দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা উন্নত দেশের মতো হয়ে গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে উন্নত বিশ্বে পাড়ি দিতে তরুণরা কেন দেশ ছাড়ছে? এ ধরনের দায়িত্বহীন ও অযৌক্তিক কথাও তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়িয়ে দেয়। রাষ্ট্রকে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকেই বেশি মনোযোগী হতে হয় না। নাগরিকের মন-মানবিকতা, মননশীলতা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতার উন্নয়নের দিকেও সদা দৃষ্টি রাখতে হয়। চিরায়ত এসব মূল্যবোধ অটুট রয়েছে কিনা, তা তদারকি করতে হয়। রাষ্ট্রের অমনোযোগিতার কারণে যে, মূল্যবোধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।

আত্মহত্যা মহাপাপ। পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। শুধু ইসলামেই নয়, কোনো ধর্মই আত্মহত্যা সমর্থন করে না। আমাদের ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি ইসলাম থেকে অনেকের দূরে সরে যাওয়ার আলামত। এটা ধর্মীয় এবং পারিবারিক ও সামাজিক নীতি-নৈতিকতা ও অনুশাসনকে উপেক্ষা করার পরিণতি। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের অভিভাবকরা বৈষয়িক ও আর্থিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিজ সন্তানের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। সন্তানরা দিকভ্রান্তির কবলে পড়েছে। এ এক ভয়ংকর এবং দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও নীতি-নৈতিকতাকে কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। এর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে যেমন নিতে হবে, তেমনি সমাজ ও অভিভাবক শ্রেণীকে নিতে হবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুশাসনের বিষয়গুলো তুলে দেয়া হচ্ছে। এসবের বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। ফলে, শিক্ষার্থীরা আমাদের চিরায়ত পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যেমন আত্মহত্যার প্রবণতা প্রবল, তেমনি আমাদের দেশেও এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে তরুণ ও যুবকশ্রেণির মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের অভিভাবকদের দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে এবং আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় শাসন-বারণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মঘাতী হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।



 

Show all comments
  • Tutul ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:১৯ এএম says : 0
    আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Tutul ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২০ এএম says : 0
    আত্মহত্যা মহাপাপ। পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। শুধু ইসলামেই নয়, কোনো ধর্মই আত্মহত্যা সমর্থন করে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মঘাতী হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • aman ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২১ এএম says : 0
    এ পরিস্থিতি থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও নীতি-নৈতিকতাকে কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • aman ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৩ এএম says : 0
    আত্মহত্যা বৃদ্ধি কোনো দেশের জন্যই ভালো বিষয় নয়। এর মধ্যে নীতি-নৈতিকতা, পারিবারিক ও সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব প্রকট হয়ে উঠে।
    Total Reply(0) Reply
  • hassan ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:১৭ পিএম says : 0
    আমাদের দেশটা মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজি গুন্ডামি সুদ ঘুষ মাদক হত্যা গুম >>এখানে মানুষের কোন উদ্দেশ্য নাই>> যে যেভাবে পারে জীবনটাকে ভোগ করার জন্য প্রস্তুত >>কিন্তু ভোগ করতে গেলে তো অনেক পয়সার দরকার হয় >>এ পয়সা পাবে কোথায়?? যে শিক্ষায় মানুষকে অশিক্ষিত করে সে শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি কিভাবে করবে এসব নানান ধরনের চিন্তা ভাবনায় মানুষ আত্মহত্যা করে>>> যদি আমাদের দেশ কোরআন দিয়ে শাসিত হতো তাহলে কেউ কখনো আত্মহত্যা করত না >>> কেউ বেকার থাকত না দেশে>>>মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারত কেন আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>...........
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন