Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বায়ুদূষণ রোধে আদৌ কি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?

ড. অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৫ এএম

বিগত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় স্থান পাচ্ছে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের বিষয়টি। প্রায় প্রতিদিনই বায়ু দূষণে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা শহর। বিস্তারিত পড়ে জানতে পারলাম, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোরে ৩০৮ পয়েন্ট নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় টানা কয়েকদিন ধরে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে ঢাকা শহর। গেল বছরের শেষের দিকে এবং এ বছরে জানুয়ারির শুরু থেকে একাধিকবার ঢাকা শহর তালিকার শীর্ষে ছিল। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর যদি ২০১ থেকে ৩০০ হয় তাহলে সেখানে স্বাস্থ্য সতর্কতা আরোপসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে থাকা এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

যে বাতাস প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, সেই বাতাসের দূষণ যদি সারা বিশ্বের মধ্যে কোনো দেশ লাগাতারভাবে শীর্ষ স্থান ধরে রাখে, তাহলে সে দেশের জনস্বাস্থ্য আবশ্যিকভাবে হুমকিস্বরূপ হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করার আগে আমার কর্মস্থল সম্পর্কে অল্প একটু বলে রাখি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধার ঘেঁষে নয়ারহাট, সাভারের কাছেই আমার বর্তমান অফিস পাড়া। এখানে আছি প্রায় চার মাসের মতো। চার মাস আগে যখন কর্মস্থলে প্রথম যোগদান করি তখন দেখেছিলাম আশপাশের পুরো এলাকাটি ধুলা-বালির স্তূপে ঘেরা। সহজ কথায় রাস্তার উপর যে পরিমাণ ধুলিকণা বা বালির স্তূপ জমে আছে, সেগুলো যদি সংগ্রহ করে ট্রাকে ভরা হয় তাহলে প্রতি ৫ মিটার পর্যন্ত রাস্তার উপর জমাকৃত ধুলিকণা দিয়ে অনায়াসে একটি বড় মাপের ট্রাক লোড হবে। সড়কের আশপাশের এলাকাজুড়ে যে বিস্তৃত সবুজ বৃক্ষরাজি রয়েছে এই ধুলিকণার প্রভাবে সেগুলোর পাতা যে সবুজ রঙের তা কোনভাবে বোঝার উপায় নেই।

সম্প্রতি নিজের কর্মস্থলের সাথেই অবস্থিত আবাসিক কোয়ার্টারে স্বপরিবারে আছি। বিভিন্ন প্রয়োজনে দিনে কমপক্ষে ২/৩ বার আমাদের এই ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা লাগে। খুব সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। আমার অফিস টাইমের আগেই এই কাজটি সেরে ফেলি। সকালের দিকে ধুলা-বালি কম ওড়ার কথা। কিন্তু যখন মিনিবাস থেকে শুরু করে দূর পাল্লার পরিবহন, ছোট থেকে বড় বিভিন্ন সাইজের ট্রাক ও গণপরিবহনগুলো রাস্তা দিয়ে যায়, তখন রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলা যাত্রী বা রিকশায় যাওয়া যাত্রীদের ধুলায় একরকম গোসল হয়ে যায়। যেহেতু মহাসড়ক তাই রাস্তা দিয়ে মিনিটে ১০০ বা তার বেশি যানবাহন যাতায়াত করে। আর এই প্রতিটি যানবাহন যাতায়াতের সময় ধুলার পাহাড় মাথায় করে নিয়ে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে একজন পথচারীর কোনভাবেই ধুলা থেকে রেহাই পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই যে কেউ রিকশা, গণপরিবহন বা পায়ে হেঁটে যাকনা কেন, এই ধুলা-বালি তাকে গ্রাস করবেই। মাস্ক পরলে সাময়িকভাবে ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা। কিন্তু এত বেশি ধুলা থাকে এবং এই ধুলার স্থায়িত্ব এতটাই বেশি যে, মাস্ক পরেও এই দূষণ থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় নেই।

মহাসড়কে এত ধুলিকণা কোথা থেকে আসে সেটার উৎস জানার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথমে ভাবলাম শীতের মৌসুম এসে গেছে সেইসাথে চারিদিকে শুষ্ক আবহাওয়া, এজন্যই হয়ত এত বেশি ধুলা-বালি রাস্তায় জমেছে। এছাড়াও নয়ারহাট বাজারের কাছেই যে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে এই নদীর উপরে সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। হয়তো এ কারণেই এসব এলাকায় এত বেশি ধুলিকণা। কেননা নির্মাণ কাজ চললে আশপাশে ধুলা বা বালি জমবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই ভাবলাম সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে হয়তো এই ধুলার পরিমাণ কমতে থাকবে। আবার ভাবলাম শীত মৌসুমের শেষ হলেও হয়তো ধুলা কমে যাবে। কিন্তু যত দিন যায় ধুলার পরিমাণ কমাতো দূরের কথা, ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বিগত কয়েকদিনে এখানকার আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় গিয়েছি। পর্যবেক্ষণ করলাম এই ধুলা-বালির পরিমাণ আশপাশের ৮-১০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। সঠিক কোনো কারণ খুঁজে বের করতে না পেরে কয়েকজনের থেকে জানার চেষ্টা করলাম এই ধুলা বালির পরিমাণ কবে শেষ হবে এবং এত ধুলা বালির উৎসই বা কী। সবার থেকেই এরকম উত্তর পেলাম ‘এখানে ধুলা-বালির পরিমাণ কখনো কমে না’। অর্থাৎ বছরের সারা মৌসুমই এমন ধুলা-বালি থাকে। শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে জোরে বৃষ্টি হওয়ার পরে ধুলা ওড়ার পরিমাণ একটু কমে। বৃষ্টি থামার ২/৩ ঘণ্টা পরেই আবারো একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারণ হিসেবে সবাই একই কথা জানালো, পাশে যে নদী এর পাশেই বালি বিক্রির জায়গা। সেখানে বিক্রির উদ্দেশে যে বালি আনা হয় তার একটা অংশ এই এলাকায় ধুলা-বালির প্রধান কারণ। নিজ চোখে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে একদিন স্ব-শরীরে সেখানে হাজির হয়ে দেখলাম, ধলেশ্বরী নদীর উপরে ধামরাই ও সাভার উপজেলাকে সংযোগকারী যে সেতুটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উপর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে তার উভয় পাশেই অনেক বড় বড় বালির স্তূপ। খেয়াল করলাম নদীর ধার ঘেঁষে ভিতরের দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত এই বালির স্তূপ বিস্তৃত। পাশে নদী থাকায় বালি ব্যবসায়ীরা এই নদীপথে বালি ভর্তি কারগো নিয়ে নদীর পাশেই বালি খালাস করে সেখানে স্তূপ করে রেখেছে। এরপর বড় বড় ট্রাকে সেসব বালি লোড দিয়ে ঢাকা শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। লোকালয়ের আশপাশে এমন বালির স্তূপ নিজেকে বেশ ভাবিয়ে তুলল, যেটি কিনা উক্ত এলাকায় বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করছে।

একদিন নয়ারহাট বাজার থেকে ফেরার সময় রিকশাচালক বলল, এই বালির আড়ৎ যতদিন আছে ততদিন এই এলাকার মানুষের কোনো শান্তি নেই। এত বালি রাস্তায় কীভাবে আসে এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলল, প্রতিটি ট্রাকে ধারণ ক্ষমতার উপরে বালি নেওয়া হয়। ট্রাকের পাটাতন ছাড়াও প্রায় এক হাত উঁচু করে বালি ভরে এরপর ট্রাক তার গন্তব্যে রওনা হয়। ফলস্বরূপ সমস্ত পথ ট্রাক বালি ছড়াতে ছড়াতে যায়। রাস্তায় যে ধুলা-বালি সেগুলো সবই নাকি ট্রাকের উপর থেকে উপচে পড়া বালি। আর যখন বড় বড় গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে যায় তখন এসব ধুলা-বালিকে উড়িয়ে দিয়ে লোকালয়ে নিয়ে যায় এবং পথচারীদের ধুলোয় ঢেকে দিয়ে যায়। তার সাথে কথা বলা অবস্থায় পাশ দিয়ে চলে যাওয়া এক ট্রাককে ইঙ্গিত দিয়ে বিষয়টির যথার্থতা অবলোকন করতে বলল। আমি দেখলাম, চলন্ত অবস্থায় ট্রাকটি থেকে অনবরত বালি পড়ছে। ট্রাকের চলার গতি এবং ধাক্কার সাথে এই বালি পড়ার পরিমাণ কম বেশি হচ্ছে।

নয়ারহাট বাজারের কয়েকজনের সাথে এই ধুলা-বালির বিষয় নিয়ে কথা হলো। তাদেরও আফসোস এই বালির আড়ৎগুলো নিয়ে। তবে পথচারী, রিকশাচালক, দোকানদার এদের সবার ভিতরেই দেখলাম এই ধুলা-বালি নিয়ে কোনরকম উদবিঘœতা নেই। অর্থাৎ সব শ্রেণির লোকই মন থেকে একরকম মেনেই নিয়েছে যে এই ধুলা-বালি থাকবে এবং এগুলো নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, এই বালির আড়ৎগুলোর সরানোর ব্যাপারে অতীতে আদৌ কেউ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল কি না। আড়ৎগুলোর মালিক পক্ষকে অন্যত্র তাদের বালির ব্যবসা স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল কিনা। সবাই বলল, তারা খুবই প্রভাবশালী এবং সবারই রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। তাই অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি বা ভবিষ্যতেও হবে না। সবাই এখন মন থেকে মেনে নিয়েছে, এমন ধুলা-বালি নিয়েই দিনাতিপাত করতে হবে। এসব শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যে মাত্রারিক্ত বায়ুদূষণের ফলে সারাবিশ্বের কাছে ঢাকা এখন সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর ও বসবাসের অনুপযোগী শহর হিসেবে পরিচিত, সেই দূষণের জন্য কিছু মানুষ প্রত্যক্ষভাবে দ্বায়ী। এই বালুর আড়ৎগুলো তার মধ্যে বড় দৃষ্টান্ত। কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন চাইলে এই আড়ৎগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা বা উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না। কিন্তু কিছুটা অজানা রহস্যের কারণে এগুলোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। হলফ করে বলা যায়, বায়ুদূষণে ঢাকা শহর লাগাতারভাবে শীর্ষে অবস্থানে এধরনের বালির আড়ৎগুলো অনেকাংশেই দ্বায়ী। অর্থের লোভে বা কোনরকম উপরি পাওয়ার আশায় প্রশাসন যদি এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে না দাঁড়ায় কিংবা নিরব ভূমিকা পালন করে তাহলে সেখানে সাধারণ জনগণের কিছু করার থাকে না। ঠিক যেমনটি ঘটেছে সাভারের এই নয়ারহাট এলাকায়। তবে এখানে নয়ারহাটের উদাহরণ টানলেও সারাদেশে এমন হাজারো বালির আড়ৎ আছে যেখানে অনিয়মে ঘেরা।

বাস্তবে দেখা গেছে, এই বায়ুদূষণের কারণে ঢাকার রাস্তায় চলতে গেলে পথচারীর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। নিঃশ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। শিশু ও বয়স্কদের অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দূষিত বাতাসের কারণে তাদের ফুসফুসের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রাইভেট পরিবহনে চলাচলকারী ব্যক্তিরা রাস্তার বায়ুদূষণের সরাসরি শিকার না হলেও যারা হেঁটে চলে বা গণপরিবহনে যাতায়াত করে তারা বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাবের বেশি শিকার হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। সম্প্রতি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক জরিপে জানা গেছে, দেশের ১৮টি জেলার বায়ু আদর্শ মানের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় দূষিত। এই ১৮টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে, এরপরই রয়েছে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ। যেখানে বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে অতি ক্ষুদ্রকণার আদর্শ মান (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) এর চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের দূষণ-প্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণœতায় ভুগছে। এই অতিরিক্ত বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। এছাড়াও প্রাণীকূলের পাশাপাশি বায়ুদূষণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে উদ্ভিদকূলের উপর। বায়ুদূষণে ফলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে। উদ্ভিদের পাতাগুলো ধুলো ময়লা দিয়ে ঢেকে থাকায় ঠিকমত সূর্যের আলোর পাতাতে পৌঁছাতে পারে না। এতে করে উদ্ভিদের স্বাভাবিক খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বা সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর প্রভাব পুরো প্রাণীজগতের ওপর পড়ছে।

যত্রতত্র গড়ে ওঠা বালির আড়ৎগুলোর সাথে সরকারের বিভিন্ন খাত যেমন: বিদ্যুৎ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, সড়ক ও জনপথ ইত্যাদি একটির সাথে অন্যটির কোনো যোগসূত্র নেই। একই রাস্তার নিচ দিয়ে পানির লাইন উন্নয়নের পরে আবার সেগুলো খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের জন্য। বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শেষ হলে আবারো খুঁড়তে হয় গ্যাস লাইনের জন্য। এসব খোঁড়াখুঁড়ি থেকে ধুলিকণা সরাসরি বাতাসে মিশে গিয়ে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বায়ু। এভাবে দেখা যায়, বছরের পর বছর এক একটি বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজ লেগেই থাকে। ফলে এসবের সুফলের চেয়ে ভোগান্তিই বেশি মেলে। যেকোন দেশের রাজধানী একটু বেশিই অব্যবস্থাপনা হয়। তুলনামূলক পুরাতন শহর এবং জনসংখ্যার আধিক্য হওয়ায় সাধারণত এসকল অব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের অব্যবস্থাপনা সকল দেশের ঊর্ধ্বে। তাইতো বিভিন্ন জরিপে বারবার উঠে আসে, ঢাকা বিশ্বের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় সর্বদাই শীর্ষে অবস্থান করছে।

বায়ুদূষণের কারণে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক বিরূপ প্রভাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। সেইসাথে গবেষকরা বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম: শুষ্ক মৌসুমে দূষিত শহরগুলোয় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঢেকে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেয়া, রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির সেন্ড ব্লকের প্রচলন বাড়ানো, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করাসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু এসব সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বায়ুদূষণ তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে। আর বায়ুদূষণের লাগাম এক্ষুনি টেনে না ধরলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা প্রাণীকূলের জন্য ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন