পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতি গঠনের মৌলিক উপাদান শিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদÐ। শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে জাগ্রত হয় দায়বোধ, জাতীয়তাবোধ ও মূল্যবোধ। শিক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী খুঁজে পায় দেশপ্রেম, জাতীয় সত্তা ও সামনে চলার পথ। যোগ্যনেতা, সৎ, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হবার একমাত্র মাধ্যম হলো শিক্ষা। শিক্ষাই একজন শিক্ষার্থীকে দেশ ও জাতি গড়ার কাজে প্রেরণা যোগায়। শিক্ষার নীতিমালার ভিতরেই একটি দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ^াসের প্রতিফলন ঘটে। বিশেষত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের লোকাচার, জীবনাচার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটে শিক্ষাব্যবস্থায়। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচীবিন্যাস সাধারণত এ নিয়মেই হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বর্তমান কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের জন্য একটি পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এ পাঠ্যসূচিতে এদেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ^াসের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বরং তাদের ধর্মবিশ^াসকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের মৌলিক কিছু বিধিবিধানকে হেয় করা হয়েছে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের কীর্তিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। নতুন এ পাঠ্যসূচির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।
এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, বিগত ৫১ বছরের শিক্ষানীতি আমাদের উন্নত জাতি উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এত বছরেও আমরা একজন জগতখ্যাত বিজ্ঞানী পাইনি। একজন আবিষ্কারক কিংবা খ্যাতিমান বীরকর্মী আমরা পাইনি। আমাদের তরুণেরা এখন আর দেশের জন্য, জীবন দেয়ার জন্য গড়ে উঠছে না। বিপরীতে তাদের মধ্যে শঠতা, স্বার্থপরতা ও হিং¯্রতা জন্ম নিচ্ছে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে ভয়ঙ্কর গ্যাংকালচার। এর মূলে রয়েছে নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা।
দক্ষিণ এশিয়ার ভারত এবং পাকিস্তান উন্নয়নশীল দু’টি দেশ। বর্তমানে পাকিস্তানের সার্বিক অবস্থা ভঙ্গুর। যেকোনো সময় এ দেশটি দেওলিয়া হয়ে যেতে পারে বলে আশাংকা করা হচ্ছে। তথাপিও দেশটির লেখাপড়ায় তেমন কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সে দেশের কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এই তালিকাতে দেওলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার বিশ^বিদ্যালয়ও রয়েছে। আর ভারতের কথা না-ই বা উল্লেখ করলাম। দেশটি শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তার শিক্ষা ব্যবস্থা ৩৬ কোটি তরুণকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভারতের একাধিক বিশ^বিদ্যালয় আন্তর্জাাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বাংলাদেশের। বাংলাদেশ এলডিসি অতিক্রমের স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়নশীল বিশে^র তালিকায় নামও লিখিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, এদেশের শিক্ষব্যবস্থা সেই ঔপনিবেশক আমলের ন্যায়ই রয়ে গেছে। তিমিরের গহিনেই রয়ে গেছে দেশের শিক্ষাক্রম। ডে বাই ডে এ ব্যবস্থার অধোগতি হয়েই চলেছে। আজও দেশের শিক্ষা বাজেটকে অনুদান বলা হয়ে থাকে! শিক্ষা বাজেট সব সময়ই সতিনের সন্তানের ন্যায় তলানিতেই রয়ে গেছে। যদিও দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার মানের তেমন কোনো উন্নয়নই ঘটেনি। একই কারণে দেশের ৫৮টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি বিশ^বিদ্যালয়ও আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে পারেনি! গত ৫১ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। মানুষের জীবনমানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে দেশ প্রযুক্তি জগতে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরগুলো ইন্টারনেটের আওতায় সংযুক্ত হয়েছে। দেশে সড়ক, সেতু ও রেলের অনেক উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু যত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থায়। পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। অথচ, তাদের জন্য আজও তৈরি হয়নি একটি টেকসই স্থায়ী শিক্ষানীতি। গত ৫১ বছর ধরে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামকে নানাভাবে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকার এটাকে ইচ্ছামতো কাটাছেঁড়া করেছে। সময় গড়ালেও কোনো এক অজানা কারণে শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যেকোনো দেশের প্রাণ হলো সেদেশের উচ্চতর গবেষণা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশের গবেষণাগারগুলো কাক্সিক্ষত মানে কখনো উন্নীত হতে পারেনি। এদেশের উচ্চশিক্ষার পাদপীঠখ্যাত বিশ^বিদ্যালয়গুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিগত প্রায় ৮ মাস আগে গুচ্ছ ভর্তিপরীক্ষা সম্পন্ন হলেও আজও অনেক বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি। এ ব্যাপারে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়কে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এ লেখাটি যখন প্রস্তুত করছি তখনও এ বিশ^বিদ্যালয়ে ৮ম মেরিট থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলছে। ৮ম মেরিট শেষেও ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে ২০ শতাংশ আসন খালি রয়েছে! এ বিশ^বিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা আড়াই হাজোরের মতো। ভর্তির জন্য আবেদন করেছে দুই হাজার শিক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত এখানে আসন খালি রয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০টি! এটা কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকরা নির্ঘুম রজনী পার করছে। তাদের মধ্যে এক আজনা উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ কাজ করছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো উদ্বেগের লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না।
উচ্চশিক্ষার এই যখন অবস্থা, তখন ২০২৩ সালের স্কুলের নতুন পাঠ্যসূচি নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়। আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতি বছরই কোনো না কোনো পরিবর্তন আনা হয়। ফলে এক বছর আগের শিক্ষা কারিকুলামের সাথে এক বছর পরের শিক্ষা কারিকুলামের কোনো মিল থাকে না। আগেই বলা হয়েছে, বিগত ৫১ বছর ধরেই শিক্ষানীতি ও কারিকুলামকে টানাহেঁচড়া ও কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সনের পাঠ্যসূচির পরিবর্তন অগের সকল পরিবর্তনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। নতুন এ সিলেবাসে ‘ডারউইন তত্তে¡’র অবতারণা ঘটানো হয়েছে। আর ডারউইন তত্তে¡র মূল প্রতিবাদ্য হলো বিবর্তনবাদ। এ বিবর্তনবাদের মূল কথা হলো, মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের আদি পিতা বানর। অথচ, ১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর যখন এ তত্ত¡টি সর্বপ্রথম প্রকাশ পায়, ঠিক তখনি এ মতবাদের বিরুদ্ধে বিশ^সেরা ১০০০ এরও বেশি বিজ্ঞানী অবস্থান নেয়। শুধু তা-ই নয়, ডারউইনের জন্মভূমি খোদ ইংল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ এ মতবাদের ঘোর বিরোধিতা করে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার ৭০ শতাশের বেশি মানুষ এ মতবাদের বিরোধী। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ^াস করে যে, এক মহাশক্তির মহানিদর্শনের মাধ্যমেই মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। আর ইসলামের বিশ^াস ও আকিদা মতে, মানুষের আদি পিতা হচ্ছেন আদম (আ.)। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণী থেকে (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা থেকে তিনি তার সঙ্গীকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর এ দুজন থেকে বিশ^ময় ছড়িয়ে দিয়েছেন অনেক পুরুষ এবং নারী।’ (সুরা নিসা: ১) ডারউইনের তত্ত¡টি বাস্তবিকই বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। খোদ ডারউইন নিজেই বলেছেন, ‘এ তত্ত¡টি নিছকই একটি ধারণা। নিছক ধারণানির্ভর একটি তত্ত¡ কোনো দেশেই শিশু সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। আর সেটা যদি হয় বাংলাদেশের মতো একটি অষ্টম জনবহুল মুসলিম দেশের সিলেবাসে, তা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নতুন এ সিলেবাস এদেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম কখনও মেনে নেবে না। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলমী চিন্তা-দর্শন লালন করে। তাদের কাছে এ জাতীয় মিথ্যা তত্ত¡ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ইতোমধ্যেই পত্র-পত্রিকা ও সোসাল মিডিয়াতে এ ব্যাপারে নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করেছে। মূলত যেকোনো দেশের শিক্ষা কারিকুলাম সেদেশের মানুষের ধর্ম ও দেশপ্রেমের আলোকে প্রণীত হয়ে থাকে। যেমন ভারতের শিক্ষা কারিকুলাম প্রণীত হয় তাদের ধর্মবিশ^াসকে গুরুত্ব দিয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে নতুন সিলেবাসে মুসলিম ও ইসলাম ধর্মবিশ^াসকে অস্বীকার করা হয়েছে। নতুন সিলেবাসে সংযোজিত এ তত্ত¡ সুস্পষ্ঠ ইসলাম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই এ ধরনের ঘৃণ্য নীতি অবলম্বন করেছে। শতবছর আগের বস্তা পচা ফালতু এ তত্ত¡টি সিলেবাসে সংযোজন নিশ্চয়ই মহল বিশেষের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ডারউইন তত্ত¡ ছাড়াও নতুন পাঠ্যসূচির বিভিন্ন বইতে মারাত্মকভাবে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। ৭ম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী’ বইয়ে ইসলাম নির্দেশিত পর্দাপ্রথাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। হিজাব, বোরকা ও ধর্মীয় পেশাককে কটুক্তি করা হয়েছে। যে নারী পর্দা পলন করে থাকে তাকে অবরোধবাসিনী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ভারতবর্ষে ইসলাম আগমন নিয়ে উক্ত বইয়ে বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। একথা সর্বজনবিদিত যে, ভারতে মুসলমানরা ৮০০ বছর যাবত শাসন পরিচালনা করেছেন। তাদের দ্বারাই উপমহাদেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকাশ ঘটেছে। অথচ, নতুন সিলেবাসে সুদীর্ঘ এ শাসনকালকে বিকৃতরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভারতের বর্তমান সরকার মুসলিম শাসকদের সকল কীর্তি ও গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসকে নেতিবাচবাচকভাবে তুলে ধরেছে। তারা মুসলিমদের শাসন ও ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদেশের চলচিত্রে মুসলিম শাসকদের লোভী, দখলদার ও দানব হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাদের পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম ও মুসলিম শাসকদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা ছাপা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারতে প্রণীত ঐ সিলেবাস বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে! ভারতের সিলেবাসকে বাংলাদেশে কেন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। নতুন সিলেবাসের নবম শ্রেণির বইয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করা হয়েছে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজিকে। নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও বিশ^ সভ্যতা’ বইয়ে তাকে লুণ্ঠনকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অথচ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমন ছিল নির্যাতিত বৌদ্ধ ও হিন্দুদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা এসব নির্যাতিত মানবতার পক্ষে ত্রাতা হিসেবেই আগমন করেছিলেন। এসব শাসক ইচ্ছা করলে ইসলাম ব্যতীত অন্য সব ধর্মকে বিলুপ্ত করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। বরং আসল সত্যিটা হলো ৮০০ বছর ধরে মুসলিম শাসকরা গোটা ভারতবর্ষে একটি নতুন সভ্যতা বিনির্মাণ করেছিলেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারা সকলের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
নতুন সিলেবাসে ‘সমাজবিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ে মুসলিম কীর্তিমান শাসকদের ক্ষমতালিপ্সু বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে। এ বইয়ে মুসলিম শাসক কর্তৃক ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপবাদ দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সুকৌশলে মুসলিম সোনালি যুগের সুলতানী আমলের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যে ইংরেজরা এ উপমহাদেশকে ঔপনিবেশকতার বেড়াজালে আটকে রেখেিেছল সেই ইংরেজদের শাসনকালের গুণকীর্তন করা হয়েছে! ভারতের উন্নয়নকারী সুলতানী, মোগল ও অন্যান্য মুসলিম আমলকে তারা অবজ্ঞা করেছে। ৭ম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ বইয়ে ‘শরীফা’ ও ‘রনির’ দৈহিক গঠনের বর্ণনা করা হয়েছে। শিশুদের জন্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এ গল্পে একজন ছেলে শারীরিকভাবে ছেলে হলেও মানসিকভাবে সে মেয়ে হতে পারে বলে পাগলের প্রলাপ করা হয়েছে। একইভাবে শরীফার দেহের গঠন মেয়েসুলভ হলেও মানসিকভাবে সে একজন ছেলেও হতে পারে বলে সিলেবাস প্রণয়নকারী দিব্যি একজন মানসিক দৈন্যের প্রমাণ দিয়েছেন। মূলত এ সব অপ্রয়োজনীয় গল্পের মাধ্যমে মুসলিম শিশুর মানসে সমকামিতার বীজ বপন করা হচ্ছে। এ গল্প ভারতের মতো বাংলাদেশেও সমকামিতা আইন পাশের নির্দেশক বলে মনে করা হচ্ছে।
এ আলোচনা এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে দেশি-বিদেশি একটি চক্র সবসময় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা মুখোশধারী দেশপ্রেমিক, প্রতারক ও দেশদ্রোহী। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই তারা এ জাতীয় ঘৃণ্য পথের আশ্রয় নিয়েছে। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। অনতিবিলম্বে ধর্মহীন এ শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হবে। অসাধু এ চক্রটিকে দ্রæত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, দা’ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।