পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশ থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর বড় একটি অংশ ব্যাংক থেকে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ ডলার সংকটের কারণে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের এলসি দায় মিটাতে পারছে না। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে অর্থণৈতিক খাত। গত বছরের শেষদিকে একটি শিল্প গোষ্ঠীর ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণজালিয়াতির ঘটনা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। নভেম্বর মাসে এই শিল্প গোষ্ঠী ইসলামি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে কমপক্ষে ৯ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া দলিলে ঋণ গ্রহণের বাস্তব প্রমানাদি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিদেশী একটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এই ঘটনাকে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ কেলেঙ্কারি বলে অভিহিত করা হয়। এরকম আরও অনেক ঘটনাই ব্যাংক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ঘটার নজির রয়েছে।
এক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠান প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে ঋণ নেয়ার প্রবণতা দেশের ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে বলে টিআইবি’র পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের সাধারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা মূলধন ও ব্যাংকঋণের সংকটে ভুগছে। প্রয়োজনীয় সব রকম তথ্য ও দলিলাদি উপস্থাপন করেও ঋণ পেতে মাসের পর মাস ধরে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ভুয়া দলিলের মাধ্যমে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী শত শত কোটি টাকার ঋণ দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, কয়েকমাস আগে পাবনার ইশ্বরদীতে কৃষিঋণ সংক্রান্ত মামলায় ১২ জন কৃষককে গ্রেফতার করে কোমড়ে দড়ি বেঁধে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মাত্র ২৫ হাজার টাকার ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতা কিংবা খেলাফের দায়ে কৃষকদের আদালতে-কারাগারে নেয়া হলেও শত শত কোটি টাকা ঋণজালিয়াতি ও ঋণ খেলাপিরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কতিপয় লুটেরা, ঋণ খেলাপি ও অর্থপাচারকারীর দায়ভার বহন করছে পুরো জাতি। দেশের বর্তমান ডলার সংকট, অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য এসব ঋণ জালিয়াত ও অর্থপাচারকারীর দায় রয়েছে। এসব বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
ব্যাংকে আমানতকারিদের অর্থ রাখা হয়। অথচ এ অর্থ ঋণের নামে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে লুটে নিচ্ছে। ভোগ-বিলাসে মত্ত রয়েছে। বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এরা এই অর্থ লুণ্ঠণ করতে পারছে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার কারণে। এর সাথে ব্যাংকের মালিক পক্ষ, পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। তা নাহলে, এভাবে ভুয়া দলিল দিয়ে ঋণ নেয়া সম্ভব নয়। শুধু ব্যাংক সংশ্লিষ্টরাই নয়, অন্য আরও অনেক প্রভাবশালী এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। পর্যাপ্ত নথিপত্র ছাড়া এবং জামানতের সম্পদের মূল্যের কয়েক গুণ বেশি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়ার ঘটনা নতুন নয়। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নজির হয়ে রয়েছে। এ নজির এখনো সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঋণ ও অর্থলোপাটের ঘটনার সুষ্ঠু ও যথাযথ বিচার না হওয়ায় এসআলম গ্রুপ কিংবা নাবিল গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যদি তাদের কঠোর শাস্তি হতো, তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। আদালতের পর্যবেক্ষণও জরুরি। কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই ও তদারকি ছাড়া শত শত কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করার সাথে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরি। যারা অন্যের জায়গা ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নিজের দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে কিংবা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।