পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আগামী প্রজন্মের বেড়ে ওঠার পথ অবারিত, উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। আধুনিক যুগে সব ধরণের সরকার ব্যবস্থায় এটি রাষ্ট্রের অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় এটি নি:সন্দেহে সরকারের গুরুদায়িত্ব। সম্প্রতি সংসদের স্পিকার বলেছেন, আমাদের সংবিধান ৩০ লাখ মানুষের রক্তে ভেজা। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের রক্তেভেজা সংবিধানকে অসাংবিধানিক পন্থায় গত ৫০ বছরে যত্রতত্র কাটাছেড়া, রদবদল-সংশোধন করতেও আমরা দেখেছি। আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রের সব শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষার সুবন্দোবস্ত করার দায়িত্ব সরকারকে দিয়েছে। স্বাধীনতার তিনদশক পেরিয়ে এসে নব্বই দশকে আমাদের রাষ্ট্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা সর্বাত্মক ও সামগ্রিক রূপ লাভ করেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের সাথে সাথে বছরের প্রথম দিনেই বই উৎসবের আদলে শিশু-কিশোরদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সফলও হয়েছে। করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন গতি সঞ্চারের উদ্যোগ ছিল অপরিহার্য। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে পড়া ও অব্যবস্থাপনার গ্যাঁড়াকল থেকে বের হয়ে আসার বদলে সবদিক থেকে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। একদশক ধরে চলমান বই উৎসব করোনাকালীন বাস্তবতার অজুহাতে গত দুই বছর সময়মত বই দিতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে এ বছর বাড়তি উদ্যোগ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিশুদের হাতে সময়মত বই পৌঁছে দেয়ার প্রস্তুতি ছিল প্রত্যাশিত। সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উপরন্তু অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথমদিন প্রাথমিক স্তরে আংশিকভাবে সীমিত সংখ্যক বই শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হলেও জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের সব নতুন বই হাতে পায়নি। সীমিত যে বইগুলো দেয়া হয়েছে তাও নানা ভুলভ্রান্তিতে ভরপুর। মূদ্রণ প্রমাদ, নি¤œমানের কাগজ ও বাঁধাইয়ের অভিযোগকে ছাপিয়ে বিতর্কিত পাঠ্যক্রম ও অনলাইন মিডিয়া থেকে লেখা চুরি করে অ্যাপ দিয়ে অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হিসেবে চালিয়ে দেয়ার ভয়ঙ্কর এক কা- ইতিমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে। দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞান লেখক হিসেবে পরিচিত ডক্টরেট ডিগ্রীধারি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এই কা-ের সাথে জড়িত হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় অতীতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তার লেখা গ্রন্থগুলোর মূল উৎস নিয়েও নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। প্লেজারিজম বা লেখা চুরির অপরাধ ছাড়াও ভুল তথ্য ও পাঠ্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশের শিশু-কিশোরদের ভুলশিক্ষায় পথভ্রষ্ট করার দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবিও উঠেছে।
ডারউইনের বির্তনবাদ সারাবিশ্বেই একটি বিতর্কিত ও পরিত্যাজ্য বিষয় হিসেবে চিহ্নিত। এটি ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক, তেমনি খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মও এই মতবাদের স্পষ্ট বিরোধী। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে মাধ্যমিক স্তরে ডারউইনের মতবাদকে মানব সৃষ্টির উৎস হিসেবে কিশোর শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার অপরিনামদর্শী তৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের ধর্মপ্রাণ সচেতন মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পৃক্ত বেশ কিছু রচনা বাদ দেয়ার ঘটনার বিরুদ্ধে বিগত দশকের মাঝামাঝিতে হেফাজতে ইসলাম, জমিয়াতুল মোদার্ররেছিনসহ দেশের আলেম ওলামারা ক্ষেপে উঠলে তাদের দাবি মোতাবেক পাঠ্যপুস্তকের বিতর্কিত বিষয়গুলো কিছুটা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। সে অনুসারে, যেসব পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম সম্পর্কিত বিষয় বাদ দেয়া হয়েছিল, তা আবার ফিরিয়ে আনা হলেও শিক্ষাব্যবস্থার নেপথ্যে থাকা ইসলাম বিদ্বেষীরা ভিন্ন পথে এগিয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় হাতে-কলমে পরীক্ষার সংখ্যা ১০টি থেকে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়সহ ৫টি বিষয় বাদ দিয়ে ৫টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। দেশের আলেম ওলামাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের হুমকির কারণে পরীক্ষার সংখ্যা ১০টি রাখা হলেও ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা সেখান থেকে বিদায় করা হয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিরা পাঠ্যক্রম নির্ধারণ ও প্রণয়নের সাথে জড়িত থাকায় তাদের পরিবর্তনের মূল লক্ষ্যই যেন ইসলামিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। ঘটনা এতটাই প্রকটভাবে ধরা পড়েছে যে, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও গুজবের ডালপালা একাকার হয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ভারতের হিন্দুত্ববাদ এবং যৌণ শিক্ষার নামে বিকৃত রুচির বিষয়বস্তু শিক্ষাক্রমে যুক্ত করার অভিযোগ প্রবলভাবে চাউর হচ্ছে। সেই সাথে এ দেশে মুসলমানদের আগমন, ধর্মপ্রচার ও রাজনৈতিক ইতিহাসকে বিকৃত করার পাঠ্যক্রম উলঙ্গভাবে ধরা পড়েছে। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে যুগে যুগে যেসব বিবর্তন ঘটেছে, তার সর্বশেষ পরিনতি হচ্ছে, মুসলমান সুফী সাধক ও দিগি¦জয়ী ব্যক্তিদের দ্বারা এ দেশের মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস নতুন এক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যায়। সে ইতিহাসের পাঠকে সঠিকভাবে শিশু কিশোরদের শিক্ষা দিতে না পারলে জাতি নিশ্চিতভাবেই পথ হারাবে একদিন। ৯২ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সে আয়োজনই যেন চলছে। শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে শেকড় বিচ্ছিন্ন ও পথভ্রষ্ট করে তোলার মধ্য দিয়েই ওদের পক্ষে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে প্রচুর ভুল তথ্য, ভুল বানান এবং বিকৃত ইতিহাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এসব ভুল, তথ্য বিকৃতি ও পাঠ্য বিষয় নিয়ে চৌর্যবৃত্তিকে জাতি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পাঠ্য পুস্তক ও ইতিহাস বিকৃতির এসব আয়োজনকে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের মত জাতিকে মেধাশূন্য করার গভীর ষড়যন্ত্রের আলামত বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে শিশু-কিশোরদের হিন্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদের দিক্ষিত করার আগে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নারায়ন চন্দ্র সাহাকে। এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে মূল্য দেয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে। শিক্ষা বিভাগের কাজে মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যখন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহাসিক সত্যের বিকৃত বিষয়গুলোর পাশাপাশি কারিক্যুলামে হিন্দুত্ববাদী অপসংস্কৃতিমূলক বিষয়কে তুলে ধরতে দেখা যায়, তখনই এর পেছনের ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেখা যায়। জাফর ইকবাল বা নারায়নচন্দ্র সাহা কিংবা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমণীর শিক্ষা, যোগ্যতা এবং সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ানও উঠে আসছে। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক সমাজ শিক্ষাব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনাসহ এসব কর্মকা-ের জন্য অযোগ্য-অদক্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন। বিশেষত শিক্ষামন্ত্রী এর দায় এড়াতে পারেন না। অন্য যে কোনো দেশে হলে হয়তো এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী তার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতেন। দেশের সত্যিকার অর্থে একজন সুশিক্ষিত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মূল্য দিতে সক্ষম, এমন একজন শিক্ষাবিদকে দেখতে চান। শিক্ষাব্যবস্থায় নানামুখী সংকট, বিশৃঙ্খলা, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতির বিষয়গুলোসহ নানান ভুল-ভ্রান্তি ও সময়মত বই দিতে না পারার কারণে এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠার কথা, ঠিক তখনই বিজ্ঞান বিষয়ের একটি পুস্তকে সংশ্লিষ্টদের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রধান বিষয়ে পরিনত হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ে ইন্টারনেট থেকে কপি করে গুগল অ্যাপের অনুবাদ ছেপে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি নির্ধারণের বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এখন কি হচ্ছে? দেশের সাধারণ মানুষ এর নেপথ্য শক্তির উৎস সম্পর্কে বুঝে গেছে। এখন সরকারকে বুঝতে হবে, এমন কারিক্যুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ ও বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী প্রতিভা ও সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব নয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোকে অগ্রাহ্য করার পাশাপাশি বিজ্ঞান শিক্ষায় চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়ে সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়ন অসম্ভব।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং জাতীয় সংস্কৃতির মূলধারার ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইস্যুর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেই, ‘এ দেশে মুসলমানরা বহিরাগত, তারা অস্ত্রের জোরে দেশ জয় করে ক্ষমতা দখল করেছিল। (উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে অবস্থিত প্রথম বঙ্গ বিজয়ী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির মাজারটি এখনো সেখানকার হিন্দু-মুসলমানদের কাছে তীর্থস্থানের মত পবিত্র বলে বিবেচিত হচ্ছে) ইসলামি সংস্কৃতি আরবের সংস্কৃতি, আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দু সংস্কৃতিই বাঙ্গালী সংস্কৃতি। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাতচল্লিশের দেশভাগ ভুল ছিল, একাত্তুরের স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামের বিরোধ রয়েছে, বাংলায় শত শত বছরের মুসলমান সুলতানদের শাসনকে বিদেশী অত্যাচারি শাসন বলা ’ ইত্যাদি। এমন সব বয়ান প্রকারান্তরে আমাদের সন্তানদের চেতনায় এমনভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা বাঙ্গালী মুসলমানদের জাতীয় চেতনা ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত অবস্থান ও শিক্ষা থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্র এখন জাতির কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে। অনেক দেরিতে হলেও বিষয়টি দেশের শিক্ষক সমাজ, আলেম-ওলামা, রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের চেতনায় আঘাত করেছে এবং তারা এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়া আরো আগেই প্রকাশিত হলে শিক্ষা কারিক্যুলামের সাথে সংশ্লিষ্টরা ২০২৩ সালে এমন জাতি বিনাশী কারিক্যুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশে সাহস পেতনা। গত সোমবার ইনকিলাবে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘আমলেই নিচ্ছেনা মন্ত্রণালয়-বিতর্কিত বইয়ে সারাদেশ তোলপাড়’। উপরন্তু শিক্ষামন্ত্রী সাফাই গাইছেন নতুন বইয়ে ইসলামবিরোধী কিছু নেই, স্বাধীনতাবিরোধী-সরকারবিরোধীরা চড়াও হয়েছে। অথচ কোন কোন শ্রেণীর কোন বইয়ের কোন কোন পাঠ্যসূচিতে ইসলামিক মূলবোধসম্পৃক্ত বিষয় বাদ দিয়ে হিন্দু সংস্কৃতির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন ও প্রামাণ্য ভিডিও ক্লিপিং রয়েছে। লব্ধপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান লেখকরা বই স্কুলপাঠ্য বিজ্ঞান বই সম্পাদনার নামে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত করার কাহিনী ইতিমধ্যে জাতি জেনে গেছে। মানব সৃষ্টি সম্পর্কে ডারউইনের বিতর্কিত মতবাদ যখন সারাবিশ্বে পরিত্যক্ত হয়েছে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সন্তানদের মন-মগজে এই মতবাদসহ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ের নামে ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার মত বিষয়গুলোর সাথে শিশু-কিশোরদের প্রকারান্তরে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক বাস্তবতা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা একদিকে জাতিকে উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেটধারী লুটেরা, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের রাহুগ্রাসে নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে, এই শিক্ষাব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় শিল্প ও প্রযুক্তিখাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির যোগান দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। একটি অথর্ব, অনৈতিক ও শেকড়বিচ্ছিন্নতার শিক্ষা ব্যবস্থা বেকারত্ব বাড়িয়ে তুলছে। সেই সুযোগে প্রতিবেশী দেশের লাখ লাখ তরুণ এখানকার রফতানিমুখী শিল্পখাতে চাকরি নিয়ে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এমন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি কাদের আগ্রহ থাকতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। শিক্ষাব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় চেতনা, বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপপ্রয়াস অব্যাহত রেখে সমৃদ্ধ জাতিগঠন অসম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।