Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত তত্ত্ব : আমাদের সন্তানদের আমরা কী শিখাচ্ছি

ড. মুহাম্মদ আমান উদ্দীন মুজাহিদ | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

২০২৩ নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের হাতে আসার পর থেকেই সচেতন অভিভাবক মহলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিভাবকগণ বিভন্নভাবে প্রতিবাদ করছেন। তাদের রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ ও হতাশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় তুলেছে। নতুন বছরের প্রথমদিন নতুন বই উপহার দেয়ার মাধ্যমে সরকারের দীর্ঘদিনের প্রশংসিত কাজটি আর প্রশংসিত থাকছে না। বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ের উপর অভিভাবকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যদিও কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়ে আসছে। ইসলাম বিষয়ক গল্প, কবিতা, জীবনী কাটছাট করা হয়েছে। তবে ২০২৩ এর নতুন পাঠ্যসূচিতে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ব্যাপক বিতর্কিত তত্ত্ব স্থান পেয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড সরকারকে বিতর্কিত করছে, এ আশংকা সবার। যে কোনো দেশের শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি ওই দেশের জাতীয় চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, দীর্ঘদিনের লালিত ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বিশেষ করে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে তা সযতেœ রাখা হয়, যাতে তারা দেশের আগামীদিনের সম্পদে পরিণত হয়। শিশু-কিশোরদের দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধে শিক্ষাদান করাই পাঠ্যসূচির প্রধান উপজীব্য বিষয় হয়। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। তারা তাদের সিলেবাসে দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনা ও তাদের ধর্মের মূল্যবোধকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। অনেক কষ্টে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লক্ষ লক্ষ শহীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে তারা আমাদের দিয়ে গেছেন প্রিয় দেশমাতৃকা বাংলাদেশ। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে তাই আমাদের দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয় চেতনা প্রতিফলিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড নতুন পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন শ্রেণিতে এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা কোনভাবেই আমাদের সন্তানদের উপযোগী নয়।

নতুন পাঠ্যপুস্তকে নি¤েœক্ত বিষয়গুলোর উপস্থিতি অভিভাবকদের মর্মাহত করেছে। যথা: ১. ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামি সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা। ২. ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন। ৩. চরমভাবে ইতিহাস বিকৃতি। ৪. ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার মতো চরম ঘৃণিত ও বিকৃত কাজকে সহজীকরণ। ৫. দেশীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধগুলোকে উপহাস করার প্রচেষ্টা। ৬. হিন্দুয়ানী কালচারকে আমাদের দেশের সবার সংস্কৃতি হিসেবে উপস্থাপন করা। ৭. বিবর্তনবাদের মতো প্রত্যাখাত দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা।

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ে পর্দা, হিজাব, বোরকা, দাড়ি ও ধর্মীয় পোশাক নিয়ে কটুক্তি লক্ষনীয়। হিজাব বা পর্দার প্রতিশব্দে বলা হয়েছে, অবরোধ আর যে সব মুসলিম নারী পর্দা মেনে চলেন তাদের অবরোধবাসিনী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষত অবরোধবাসিনীর কাহিনিতে যে পাঁচটি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে, তা মুসলিম অভিভাবকরা মেনে নিতে পারছেন না। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইসলামের শ্বাশত গৌাবোজ্জ্বল ভূমিকাকে বর্তমান নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার অস্বীকার করছে। প্রায় ৮শ বছরের মুসলমানদের রাজত্বকালকে ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। মুসলমানদের অসংখ্য কীর্তি ভারতবর্ষের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিজিপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল শাসন ও কীর্তিমান মুসলিম শাসকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে পাঠ্যপুস্তক লেখা হচ্ছে। ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে মোদী সরকার রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বলিউডে সিনেমা নির্মাণ করে মুসলিম শাসকদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের এ হিন্দুত্ববাদী প্রজেক্ট কীভাবে বাংলাদেশের এনসিটিবির ঘাড়ে চেপে বসলো, তা রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। আমরা অভিভাবকবৃন্দ বিশ্বাস করতে চাই, সরকার প্রধানকে অন্ধকারে রেখে একটা কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, যিনি এ ভূখন্ডে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজিকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে। নবম শ্রেণির ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে বলা হয়েছে, বখতিয়ার লুণ্ঠন করেছেন। এর বাইরেও তিনি বিহার ধ্বংস করেছেন। সর্বপরি অত্যাচারী ও দখলদার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো পাঠ্যক্রমে মুসলামনদের শাসন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়া হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ে বলা হয়েছে, হিন্দু-বৌদ্ধ রাজাদের মতো মধ্যযুগেও মুসলিম রাজারা একই প্রক্রিয়ায় যুদ্ধ, দখলদারিত্ব চালিয়েছেন। প্রাচীন যুুগের মতো মধ্যযুগের রাজারাও ভারত ও বাংলা অঞ্চল দখলে নিয়ে সুলতানি ও মোঘল নামে শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন। কীর্তিমান মুসলিম শাসকদের যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের ক্ষেত্রে হিন্দু ও বৌদ্ধদের সঙ্গে তুলনা করা হলো, যেন মুসলিমরাও তাদের মতো হত্যাকা-, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও গণহত্যা চালিয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, মুসলিম শাসকরা বাংলাসহ পুরো ভারতবর্ষে একটি নতুন সভ্যতা বিনির্মাণ করেছিলেন। তারা ভিন্ন ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। মুসলিম শাসকদের আগমন নির্যাতিত হিন্দু ও বৌদ্ধ জাতি গোষ্ঠীর কাছে ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের মতই ছিল। তারা চাইলে প্রায় ৮শ বছরের শাসনকালে অন্যসব ধর্মকে বিলুপ্ত করে দিতে পারতেন। ইতিহাস সাক্ষী, কালজয়ী মুসলিম শাসকরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে বলা হয়েছে, মুসলিম শাসকরা ছিলেন ক্ষমতালিপ্সু। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ধর্মের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করেছেন। অত্যন্ত কৌশলে সুলতানি আমল সম্পর্কে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ইতিহাস শেখানোর নামে অত্যন্ত কৌশলে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। অবাক করার বিষয়, ইংরেজ শাসনের গোলামী থেকে মুক্তির জন্য দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অসংখ্য শহীদের আত্মদান পাঠ্যপুস্তকে স্থান পায়নি। উপরন্তু মোঘল ও মুসলিম শাসনকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে ইংরেজ শাসনের ভালো দিক সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে বলা হয়েছে, ‘শরীফার গল্প’ নামে একটি কল্প কাহিনী। এই কল্পিত গল্পের প্রধান চরিত্র শরীফা দৈহিক গঠনে ছেলে হলেও নিজেকে সে মেয়ে মনে করে। তাই সে তার নাম বদলে শরীফা রেখেছে। বইতে বলা হচ্ছে, একজন মানুষ শারীরিকভাবে ছেলে হলেও মানসিকভাবে সে মেয়ে হতে পারে। এই গল্পে আরও এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যে শারীরিকভাবে মেয়ে হলেও মানসিকভাবে ছেলে! একই বইয়ে গল্পের চরিত্রে রনির মায়ের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। রনির মা বলেন, ছোটদের কোন ছেলেমেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে। শিশু-কিশোরদের মনে মানব লিঙ্গ সম্পর্কে এসব উদ্ভট ও আজগুবী ধারণা দেয়ার মাধ্যমে সমকামিতার মতো ঘৃণিত বিষয়কে উস্কে দেয়া হচ্ছে বলে অভিভাবকরা মনে করেছেন। তাদের কোমল মনে সমকামিতার প্রতি আকর্ষণ ও দুর্বলতা তৈরি করা হচ্ছে এসব গল্পের মাধ্যমে। কৌশলে শেখানো হচ্ছে একজন ছেলে শারীরিকভাবে ছেলে হলেও মানসিকভাবে মেয়ে হতে পারে, এটা স্বাভাবিক বিষয়, নিন্দনীয় নয়। তখন তাদের কাছে সমকামিতাকেও স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক মনে হবে। ট্রান্সজেন্ডারকে কৌশলে এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে অশ্লীলতা এত মারাত্মক যা পুরোপুরি যৌনতায় ভরা। বাবা-মা এসব পৃষ্ঠা দেখে রীতিমত আঁতকে উঠছেন। পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আমাদের এনসিটিবিটির কর্মকর্তারা পড়েছেন কীনা তা দেখার বিষয়। সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছে মানুষ, এই মানুষ কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নটি খুবই পরিচিত একটি প্রশ্ন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ আমাদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। সুরা নিসার প্রথম আয়াতে এবং সুরা নাহাল ৭২, সুরা হুজরাত ১৩, সুরা নাহাল ৪ এবং সুরা মুমিনুনের ৪ আয়াত, সুরা তারিকের ৪-৫ আয়াতসহ আরো অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান আকৃতিতে আসেনি। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার জীববিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান বইতে মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঈমান বিধ্বংসী বিষয়বস্তুকে সামনে আনা হয়েছে। থিউরি অব এভুলেশন তথা বিবর্তনবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। নানারকম বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ইতিহাসের দীর্ঘ সময়ের পথচলায় ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এই বিবর্তন পৃথিবীর নানা অঞ্চলে নানা সময়ে ঘটেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞান অনুসন্ধান পাঠ বইয়ের বলা হচ্ছে, আমাদের প্রথমে মনে রাখতে হবে যে, আধুনিক মানুষ ও বানর-গোত্রের নানা প্রাণী যেমন: (শিম্পাঞ্জী, গরিলা) একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। তারপর লক্ষ লক্ষ বছর যাবত বিবর্তন হয়ে মানুষ এই পর্যায়ে এসেছে বলে একটা কল্পিত গল্প শিক্ষার্থীদের সামনে আনা হয়েছে। তা আবার শিম্পাঞ্জী, গরিলা, বানরের ছবি দেখিয়ে বুঝানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়নি। উপরন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে যা বলা হয়েছে তা আরেক বিস্ময়। সেখানে ১৯৭৪ সালে খুঁজে পাওয়া ‘লুসি’ নামক একটি হনুমানের ফসিলের কথা উল্লেখ করে তার ছবি দেওয়া হয়েছে এবং এ লুসিকে মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেয়া হয়েছে। একই বইয়ে বলা হয়েছে, মানুষ কোথা থেকে এলো? এ প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের বিবর্তনবাদের বস্তাপচা প্রত্যাখাত মতাদর্শকে বিশ্বাস করানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা মুসলমানদের ঈমান-আকিদা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করার একটা অপকৌশল। অথচ, উনবিংশ শতাব্দিতেই জীববিজ্ঞানীরা ডারউইনের থিউরি অব এভুলেশন বাতিল করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র কিছু নাস্তিক বিজ্ঞানী ও কথিত বুদ্ধিজীবী এ তত্ত্বটি সামনে নিয়ে আসেন তাদের হীন স্বার্থ চরিত্রার্থ করার জন্য। বাস্তববাদী বিজ্ঞানীরা ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের অসারতা প্রমাণ করতে গিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। যদি বানর কিংবা শিম্পাঞ্জীর বিবর্তনের ফলে মানুষ সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে মানুষের বিচার ক্ষমতা, প্রজ্ঞা, বিবেক, বুদ্ধিমত্তা, আত্মশক্তি, উদ্ভাবনী শক্তি, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যও কি বিবর্তনের ফল? এসব বানর কিংবা শিম্পাঞ্জীর মধ্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। অভিভাবকরা বলছেন, আমরা কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কে যেতে রাজী নই। আমরা মুসলমান, আমরা মানুষ। মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটি আমাদের ঈমান এবং এটি আমাদের পাঠ্য পুস্তকে থাকতে হবে। মুসলমানদের ঈমান-আকীদার বিপরীত কোনো বিষয় পাঠ্যক্রমে থাকবে তা আমরা মেনে নিতে পারি না। ১ম শ্রেণির থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি, মূর্তিপুজার আধিক্য অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। সচেতন মহল মনে করেন, শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মুসলমানের দেশে এ জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনা সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকারকে চরমভাবে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস। দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার সুদূরপ্রসারী গভীর ষড়যন্ত্র। সর্বোপরি আগামী দিনের মুসলিম প্রজন্মকে কৌশলে ঈমানহারা করাই এ জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের লক্ষ্য বলে অভিভাববরা মনে করছেন। অবিলম্বে এ হীন কার্যক্রমের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য অভিভাবকরা জোর দাবি তুলছেন এবং বিভিন্ন শ্রেণির বিতর্কিত ও ইতিহাস বিকৃতিতে অভিযুক্ত অন্যান্য বই বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন। আমরা আশা করি, সরকার কোটি কোটি অভিভাবকের মনোবেদনা বুঝতে পারবেন এবং অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

লেখক: ভিজিটিং প্রফেসর, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বোর্ড বাজার, গাজীপুর।



 

Show all comments
  • Mohammad Aslam Hosen ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৬ এএম says : 0
    ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্টতম শিক্ষামন্ত্রী,এই নিকৃষ্ট শিক্ষা মন্ত্রী ইসলাম ধ্বংসের চরম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Hossein ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৩ এএম says : 0
    ডারউইন বোকা ছিলো তাই ঐ তত্ত্ব খারা করেছিলো। আজ যদি ডারউইন বেঁচে থাকতো তাহলে সে ঐ তত্ত্ব এর জন্য ক্ষমা চাইতো মানুষের কাছে কার আজ এতো হাজার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো বাঁনর মানুষে রুপান্তরিত হলো না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Aslam Hosen ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৬ এএম says : 0
    ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্টতম শিক্ষামন্ত্রী,এই নিকৃষ্ট শিক্ষা মন্ত্রী ইসলাম ধ্বংসের চরম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mahbub Alam ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৩ এএম says : 0
    যারা ডারউইন এর তথ্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা পূর্বে বানর ছিল,বয়সের ধারাক্রমে মানুষে রুপান্তরিত হয়ে স্ব-স্ব প্রমাণ পেয়েছে, তারপর পাঠ্যবই এ অন্তর্ভুক্ত করেছে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • J Alam Khan ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৩ এএম says : 0
    মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত ডারউইন তত্ত্ব, ইসলাম-মুসলিম কৃষ্টি-কালচারবিরোধী,নগ্ন ছবির ছড়াছড়ি, মুসলিম শাসকদের অবজ্ঞা!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Solaiman Hossen ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৪ এএম says : 0
    ষষ্ঠ ও সপ্তম পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত তত্ত্ব কপি-পেস্ট ও ভুল তথ্য। আমাদের দেশের শীর্ষ শিক্ষাবিদদের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান কতটা মানসম্মত তা বুঝা যায়। আমাদের দেশের এইসব কলা বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে আর কি বা আশা করতে পারি আমরা ( ভুল তথ্য আর কপি-পেস্ট ছাড়া ) ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohd Shidur Rahman ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৪ এএম says : 0
    নতুন পাঠ্যসূচির সমস্ত বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর বিষয়াদি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ অন্যান্য দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারকে এসব বিষয়ে সচেতন এবং আলেমদের নিয়ে কমিটি করে পাঠ্যসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Mohsin Ahmod Mamur ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৫ এএম says : 0
    পাঠ্যবইয়ে বিবর্তনবাদ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সকল শ্রেনী পেশার রাজনৈতিক অরাজনৈতিক মুসলিম সম্প্রদায় এক হোন প্লিজ এটা ঈমানী দায়িত্ব , নইলে আগামী একটা প্রজন্ম বিশ্বাস করতে শুরু করবে বানর থেকেই মানুষ সৃষ্টি । আজকের এই নিরবতার দায়ভার সবাইকেই নিতে হবে । আল্লাহর কাছে সবাইকে একদিন হিসাব দিতে হবে । আসুন আমরা সবাই মিলে এটা বাতিল করতে ঐক্য গড়ি ।
    Total Reply(0) Reply
  • Rofikul Eslam ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৬ এএম says : 0
    সবাই কে নিজ নিজ স্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া চলবে না
    Total Reply(0) Reply
  • জা চৌধুরী ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৭ এএম says : 0
    বর্তমান সরকার যে হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকারের কথায় চলে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছে এটাই তার প্রমাণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Hafej Yeasin ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৮ এএম says : 0
    কৌশলে ধীরে ধীরে পুরো সিলেবাস হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এর সংশোধন চাই
    Total Reply(0) Reply
  • S. M. Nasim Uddin ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৮ এএম says : 0
    মাত্র ১৪ বছরের ফলাফল এটা, আর কিছুদিন অপেক্ষা করেন এখন তো তাও বই পাচ্ছেন তখন দেখ বেন সাদা কাগজ এর বই। যে মাকালফল জাতী বানাচ্ছেন তাতে সেদিন বেশি দূরে নাই। শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্যে।
    Total Reply(0) Reply
  • M Doullah ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৯ এএম says : 0
    পাঠ্যক্রমের পরিস্হিতি দেখলে মনে হয় ছাএ জীবনে কোন কোন নকল করে পাশ করা ছাএ এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। আমাদের ধর্মীয় মুল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত পুর্বের কৃষ্টি, সংস্কৃতি,সভ্যতার নিদর্শন সম্পর্কিত বিষয়ের অধ্যায় গুলো পুনঃস্হাপিত করা হউক। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা আমাদের সংস্কৃতিও মুল্যবোধে শিক্ষা নিয়ে নম্র ভদ্র সুশিক্ষিত আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক নিজেদের দেয়া ট্যাক্সের বিনিময়ে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন