পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকের আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। প্রচলিত মাদকের সঙ্গে একের পর এক নতুন মাদক যুক্ত হচ্ছে। প্রায়ই দেশে নতুন মাদকের সন্ধান পাওয়া যায়। ইয়াবা, হেরোইন, এলএসডি, আইসম্যাথসহ নানা মাদকের ভিড়ে নতুন মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। সম্প্রতি ‘রেফ ড্রাগ’ নামে নতুন মাদকের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী থেকে এক যুবককে গ্রেফতারের পর নতুন এই ড্রাগ সম্পর্কে জানা যায়। ইয়াবাসদৃশ এই ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ছে অভিজাত শ্রেণীর তরুণ-তরুণীরা। দামী হওয়ায় এটি এসব এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে এক সময় তা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষরা আশঙ্কা করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে মাদক একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মাদক হাতের নাগালের মধ্যে চলে গেছে। মাদকের আগ্রাসন এতটাই তীব্র যে, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক দেশের যেকোনো প্রান্তে পাওয়া যায়। মাদকের এই ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে যুবসমাজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সমাজে যেমন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি পরিবারে অশান্তি বৃদ্ধিসহ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে, কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ঢুকিয়ে দাও। এ কথাও প্রচলিত ‘আফিম’ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। এতে ঐ জাতি কোনো দিনই জেগে উঠতে পারবে না। মাদকের আগ্রাসনে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজ যেন ঘুমের ঘোরে চলে যাচ্ছে। ঘুম থেকে জেগে উঠে মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। এতে সমাজ ও পরিবার বিশৃঙ্খলার আবর্তে তলিয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার এতটাই ঘটেছে যে, স্কুল শিক্ষার্থীও তা থেকে বাদ পড়ছে না। ইংলিশ মিডিয়াম থেকে শুরু করে বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের খবর আমরা পাই। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়ার এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র চলছে। মাদক চোরাকারবারিরা বরাবরই প্রভাবশালী হয়ে থাকে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য জড়িয়ে থাকে। তাদের নিবৃত্ত বা দমন করা এক প্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ছিঁচকে সন্ত্রাসী কিংবা রিকসাচালকও মাদক চোরাকারবারিতে জড়িয়ে পড়ছে, এমন সংবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এক ইয়াবা চোরাচালানের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তি রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং চোরাকারবারিদের গ্রেফতারের পর তাদের উত্থানের ঘটনা দেশের মানুষ জানতে পেরেছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাদের ধরা হয়, তাদের বেশিরভাগই খুচরা বিক্রেতা বা বহনকারী। মাদকের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানলেও তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে সে পর্যন্ত যেতে পারে না। ফলে মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না। একশ্রেণীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও এতে জড়িয়ে রয়েছে। ফলে মাদক এখন অপ্রতিরোধ্য। এতে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়ছে। মাদকাসক্তরা অচল-অথর্ব হয়ে সমাজ, পরিবার সর্বোপরি দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাদকের সহজলভ্যতাই এর মূল কারণ হয়ে রয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, অ্যালকোহল মাদক হলেও তা সহজলভ্য নয়। দাম বেশি হওয়ায় এবং সর্বত্র পাওয়া না যাওয়ায় সবার পক্ষে অ্যালকোহল পান করা সম্ভব নয়। এটি একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, এলএসডিসহ অন্যান্য মাদক যত্রতত্র পাওয়া যাওয়ায় সহজে সংগ্রহ ও সেবন করা যায়। এগুলো ভেজাল করেও সহজলভ্য করে তোলা হয়। এসবের পাশাপাশি নতুন নতুন মাদকের আগমন মাদকাসক্তদের আরও আগ্রহী করে তোলে। মাদকের ভেরিয়েশন সৃষ্টি করে মাদকাসক্তি বৃদ্ধি এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মাদকের প্রচলিত আইন আরও কঠোর করা প্রয়োজন।
সকল অপরাধের উৎস হিসেবে মাদককে ধরা হয়। দেখা যায়, যত ধরনের অপরাধ রয়েছে তার পেছনে এবং এর সাথে জড়িতরা কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে জড়িত। এক মাদকই আমাদের সমাজ ও সংসারের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদক এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেন, তা কোনোভাবেই টেকসই হবে না। মাদকের বিস্তৃতি ও মাদকাসক্ত নিয়ে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। মাদক চোরাকারবারিদের নির্মূল এবং লাখ লাখ মাদকাসক্তের মাদকমুক্ত করতে না পারলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে থাকবে। দেশের উন্নয়ন, সমাজ ও পারিবারিক শৃঙ্খলা অটুট রাখার ক্ষেত্রে মাদক নির্মূলের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেবল ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করলেই হবে না, বাস্তবে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। মাদক চোরাকারবারি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। সীমান্তসহ বিমানবন্দরে মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। এর দেশব্যাপী বিতরণ নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। সমাজ, পরিবারের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কি করে, কাদের সাথে মেলামেশা করে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।