পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০১৭ সালের ১ জুলাই দেশের ৪৮টি নদনদীকে অবৈধ দখল, দূষণ ও অন্যান্য ক্ষতিকর কর্মকা- থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ হিসেবে কমিশন ৩৮ হাজার অবৈধ নদী দখলকারীর তালিকা তৈরি করে। তবে আজ পর্যন্ত নানা টালবাহানায় এ তালিকা প্রকাশ করেনি। এমনকি কমিশনের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরবর্তীতে তা সরিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কমিশন বলছে, তারা এ তালিকা প্রকাশ করেনি এবং তা সরিয়ে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে কেন এ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না? এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, তালিকা পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি এবং তাতে কিছু ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটি সংশোধন করে প্রকাশ করা হবে। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এটা তালিকা প্রকাশ না করার বাহানা ছাড়া কিছু নয়। তারা বলছেন, নদীর অবৈধ দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। এজন্য কমিশন বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলছে।
দেশে নদ-নদী অবৈধ দখল ও দূষণ নতুন কিছু নয়। যুগের পর যুগ ধরে একশ্রেণীর প্রভাবশালী এ কাজ করে আসছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট ও এলাকার প্রভাবশালীরা এ কাজের সাথে জড়িত। নদীর অবৈধ দখল-দূষণে শত শত নদ-নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। দেশে প্রকৃত অর্থে কত নদ-নদী রয়েছে তার সঠিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৪০৫টি নদ-নদী রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি শীত ও বর্ষায় প্রবাহিত হয়। তবে ঐতিহাসিক সূত্র মতে, বাংলাদেশে ৭০০ থেকে ৮০০ নদী ছিল। এর বেশিরভাগই শুকিয়ে মরে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অসংখ্য শাখা নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। এসব নদ-নদী বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। অবৈধ দখলের কারণে অনেক নদী বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। বসতি গড়ে উঠায় সেখানে যে, এক সময় নদী ছিল, বোঝা যায় না। অথচ আমাদের দেশের ভৌগলিক গঠন ও ধরন অনুযায়ী নদীই হচ্ছে প্রাণ ও সজীব রাখার মূল উৎস। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন-বিপণনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক ওতোপ্রোত। একদিকে উজান থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে দেশের প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের অবৈধ দখলের কারণে দেশের লাইফ লাইন একের পর এক বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে নদী দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। এতে যেমন দেশে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে, তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশ সজীবতা হারাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অবৈধ দখল ও দূষণে বহু নদী নাব্য হারিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। অথচ নদী রক্ষায় সরকার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করলেও কমিশন রক্ষা করতে পারছে না। নদীর অবৈধ দখল ও এর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। অবৈধ দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন কোনো নজির নেই। এমনকি উচ্চ আদালত নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা যদি, রাজধানীর চার পাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর কথা বিবেচনা করি, তাহলে দেখব অবৈধ দখল ও দূষণে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। উচ্চ আদালত এসব নদীর সীমানা নির্ধারণ করার নির্দেশ দিলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। সরকার নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের নদ-নদীর অবৈধ দখলকারীদের তালিকা তৈরি এবং প্রকাশের নির্দেশ দিলেও এখন তা প্রকাশ করছে না। তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা উছিলা দেয়া হচ্ছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, নদনদী অবৈধ দখলের ক্ষেত্রে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা জড়িয়ে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে নদী রক্ষা কমিশন আছে কি জন্য? তাদের কাজ কি প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণে ভীত হয়ে থাকা? কিংবা কাউকে রক্ষা করা? নদনদী কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে, তা দখল করে রাখবে। এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কেউ অবৈধভাবে দখল করে রাখবে এবং তার বিরুদ্ধে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কুণ্ঠিত বা দ্বিধান্বিত হবে, তা হতে পারে না। আমরা মনে করি, নদ-নদী অবৈধ দখলকারীদের যে তালিকা নদী কমিশন তৈরি করেছে, তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। অনতিবিলম্বে এসব অবৈধ দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবৈধ দখলকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এজন্য সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নদনদী কিছু লোকের অবৈধ দখল-দূষণের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে, প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে, তা কোনোভাবে বরদাস্ত করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।