পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শেষদফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির একমাসের মধ্যে সরকার এবার অস্বাভাবিক হারে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় দুইশ’ শতাংশ। আবাসিক লাইনে এই মূল্যবৃদ্ধি প্রযোজ্য না হলেও বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্যদ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এর প্রভাব প্রতিটি শিল্পোৎপাদনে নিশ্চিতভাবেই পড়বে। আরেক দফা মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ঠ হবে দেশের সাধারণ মানুষ। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে করোনাকালীন বাস্তবতা থেকে বর হতে পারিনি আমরা। তার উপর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পণ্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে। অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ব্যয় আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ায় তারা সঞ্চিত অর্থ ও ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা তুলে ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রভাবও ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে পড়েছে। বিদ্যুতৎকেন্দ্র ও শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রফতানিমুখী গার্মেন্টসহ দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যয় বেড়ে েেদশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে। ফলে চলমান অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়ে উঠবে।
গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকিও অনেক বেড়ে যাবে। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম আপাতত না বাড়ালেও মূল্যস্ফীতির কারণে এই মূল্যবৃদ্ধির সামগ্রিক চাপ দেশের জনগণের উপরই বর্তাবে। যেখানে দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা ও আবাসিক গ্যাসলাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের চুলা জ্বলছে না, সেখানে নতুন করে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও গ্যাসের চাপ ও সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার কোনো উদ্যোগ বা সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে তৈরি পোশাক খাতের টেক্সটাইল ও নিটিং শিল্পে উৎপাদন সক্ষমতা অর্ধেকের নিচে নেমে যাওয়ার চিত্র দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় নিটওয়্যার শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি বলেছেন, ইতোমধ্যেই অসহনীয় হয়ে ওঠা এই ভার বহন করা শিল্পমালিকদের জন্য আরো কঠিন হয়ে যাবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরো উস্কে দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শিল্পায়ন ও নগরায়নের সাথে সাথে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল ও আবাসন খাতে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চললেও নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ইউক্রেনযুদ্ধ ও ডলারের সংকটের কারণে এলএনজি আমদানির সক্ষমতাও অনেকটা কমে যাওয়ায় সংকট তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। গ্যাস বা বিদ্যুতে রেশনিং করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মানুষের আয় ও চাহিদার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করা। অন্যদিকে সরকারের পক্ষেও ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির ভার বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান দুর্নীতি, অপচয় রোধ করার মাধ্যমে ভর্তুকি ও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির ধারা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। লাখ লাখ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বৈধ লাইনে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং অফশোর গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যথাশীঘ্র গ্যাস উত্তোলনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামনে রোজার মাস, একই সঙ্গে গরমকালও আসন্ন। সে সময়ে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ এখন থেকেই নিতে হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পরিবহন ব্যয় ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যে কোনো তৎপরতা সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।