পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : গ্যাস সঙ্কট জেঁকে বসেছে। দিনের বেলায় চুলা না জ্বলায় এখন গৃহিণীরা মধ্যরাতে রান্না করেন। শুধু গৃহস্থালিতেই গ্যাস সঙ্কট সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা, শিল্পাঞ্চল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের প্রায় সব এলাকাতেই গ্যাস সংকট চলছে।
এদিকে, শিল্প খাতের গ্যাস সমস্যা সমাধানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ-এর সহায়তা চেয়ে শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ না কমানোর জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় পেট্রোবাংলার করণীয় কী তা নির্ধারণে জ্বালানি বিভাগকে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, পুরো শীত জুড়েই গ্যাস সঙ্কট থাকবে।
এই কর্মকর্তার মতে, এমনিতেই চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। এমতাবস্থায় বিদ্যমান গ্যাস সঙ্কটকে তীব্র করে তুলেছে শীতকালীন প্রতিকূল অবস্থা। শীতে সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপ লাইনগুলোতে ময়লা ও উপজাত (কনডেনসেট) জমে সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি গ্যাস উৎপাদনকারী বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে সৃষ্ট কারিগরি ত্রুটি শীতকালীন সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে, গ্যাস স্বল্পতায় শিল্পাঞ্চলের অনেক কলকারখানা উৎপাদন বিঘœ ঘটছে। কম্প্রেসার বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। কয়েক দফা গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে অনুমোদন নিলেও কাক্সিক্ষত চাপে গ্যাস পাচ্ছে না কারখানাগুলো। ফলে একদিকে শিল্প প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে চলছে।
আবার আবাসিক গ্রাহকদের কাঁধেও চেপেছে অতিরিক্ত খরচের বোঝা ও ভোগান্তি। বর্তমানে দেশের অনেক স্থানে দিনে চার ঘণ্টা গ্যাস পাওয়া গেলে পরবর্তী চার ঘণ্টা পাওয়া যায় না। ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস পাওয়া গেলেও রান্নার প্রচলিত সময়ে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় ২৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকলেও চাপ কম হওয়ায় চুলা জ্বলে টিমটিম করে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। আবাসিক ছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাস সঙ্কটের ভুক্তভোগী। এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩৪০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু গড় উৎপাদন ২৭০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি ৭০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা জানায়, শীতে গ্যাসের চাহিদা গরম কালের চেয়ে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ কোটি ঘনফুট বাড়ে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের কারিগরি ত্রুটি ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উৎপাদিত এই গ্যাসের মাত্র ১২ শতাংশ ব্যবহার হয় গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে।
রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কটে অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যেসব এলাকার মানুষ তার মধ্যে রয়েছে মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কাজীপাড়া, ইন্দিরা রোড, গ্রীন রোড, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া, পশ্চিম রামপুরা, বাসাবো, আরামবাগ, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলি, মিরহাজারিবাগ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, উত্তরা, জাফরাবাদ, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ। তিতাস গ্যাসের জরুরি নম্বরে ফোন করে প্রতিদিনই গ্রাহকরা এ সংক্রান্ত অভিযোগ করছেন।
পেট্রোবাংলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিবিয়ানায় যে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে তা ঠিক করতে সপ্তাহখানেক লাগবে বলা ভাবা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি ঠিক করতে প্রায় দুই মাস লাগবে। তাই এ বছর শীতকালীন গ্যাস সঙ্কট আরো বাড়বে।
অপরদিকে, শিল্প কারখানায় চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় দুটি কম্প্রেসার স্থাপন করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এ প্রকল্পে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্ত কোনো সুফল আসেনি। বরং ঢাকা, জয়দেবপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কালিয়াকৈর, আশুগঞ্জ, মনোহরদি, চন্দ্রা ও সাভারসহ এর আশপাশের শিল্প এলাকায় গ্যাস সঙ্কট লেগেই আছে।
গ্যাস সঙ্কটের ব্যাপারে পেট্রোবাংলার সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া সার উৎপাদন কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়াও শীতকালে পাইপ লাইনে গ্যাস জমে যাওয়ার বিষয়টিতো রয়েছেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩ থেকে ৪ বছর পর পর গ্যাস পাইপ লাইনের ময়লা এবং জমাট বাঁধা গ্যাস পরিষ্কার করার নিয়ম থাকলেও গত এক যুগেও তা পরিষ্কার করা হয়নি।
উল্টো ষাটের দশকে ঢাকায় যেসব পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে; তার অধিকাংশই এখন ওভারলোডেড। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করা হয়নি। এতে করে ঢাকার অধিকাংশ পকেট এলাকায় বছর জুড়েই গ্যাসের সঙ্কট চলে। তদুপরি, ঢাকায় যে দুটি গেট দিয়ে পাইপ লাইনে গ্যাস আসে সেই ডেমরা সিজিএস এবং জয়দেবপুর সিজিএস-এ গ্যাসের প্রেসার কমে প্রতি ঘনফুটে ১১০ থেকে ১৫০ পিএসআইএ উঠানামা করছে।
অথচ এই প্রেসার থাকার কথা ২৫০ পিএসআই। এমন পরিস্থিতিতে শুধু গৃহস্থালীতেই নয়; শিল্প ও সিএনজি স্টেশনগুলেঅতেও গ্যাসের আকাল চলছে। এতে করে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে শ্রম ঘণ্টার। আর গ্যাসের জন্য পরিবহনগুলোর লম্বা লারই পড়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনে।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, গ্যাস সঙ্কট নিরসনে সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গৃহস্থালিতে নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বললেই চলে। বাসা বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার পাশাপাশি সিলিন্ডারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বিষয়টিও উৎসাহিত করছে সরকার।
অপরদিকে, গ্যাস সঙ্কট সমাধানে সরকারের ভাবনার সাথে গ্রাহকদের ভাবনার একেবারেই বিপরীত। গ্যাস সঙ্কটে ভুক্তভোগী লালবাগের বাসিন্দা মুতাহার হোসেন একবারেই ক্ষুব্ধ। তিনি ডাবল বার্নারের একটি চুলা ব্যবহার করেন। ক্ষোভের সাথে জানান, বিলতো পুরোটাই পরিশোধ করি; অথচ গ্যাস থাকে না দিনের অর্ধেক সময় জুড়ে। বিলের ক্ষেত্রেও আমরা যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেছি; সেই পরিমাণ গ্যাসের বিল পরিশোধের সুযোগ চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।