Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লেগুনা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয়, জেলাশহরগুলোতে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা, যানজটের নেপথ্যে বেশকিছু কারণের অন্যতম হচ্ছে, অবৈধ লেগুনা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য। সর্বত্রই এসব লেগুনা ও ইজিবাইক চলছে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় একশ্রেণীর স্থানীয় নেতা ও পুলিশের পৃষ্ঠপোষকতায়। এ খাত থেকে প্রাপ্ত প্রতিদিনের লাখ লাখ টাকার বড় অংশই তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকায় চলাচলকারী বেশিরভাগ লেগুনারই কোনো রেজিস্ট্রেশন বা নাম্বার প্লেট নেই। এ কারণে বাস্তবে কত সংখ্যক এ ধরণের রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ী চলাচল করছে তারও কোনো সঠিক হিসাব বা পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার উপর সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত না থাকায় ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় লক্করঝক্কর মার্কা গণপরিবহনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কর্মজীবী নাগরিকদের। লেগুনাগুলো চলছে মূলত স্থানীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে এবং এগুলোর বেশিরভাগেরই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালক। এদের এদের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যত্রতত্র বেপরোয়া গাড়ী চালনার কারণে দুর্ঘটনা ও যানজটের জন্য এরা অনেকাংশে দায়ী। লেগুনা ও ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার চাঁদা উত্তোলন করা হলেও সরকার বিপুলভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও রাস্তার গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ লেগুনা ও ইজিবাইকগুলোকে রেজিস্ট্রেশন ও শৃঙ্খলার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ঢাকার গণপরিবহণে গতিশীলতা ও বিশ্বমানের আধুনিকতায় উত্তরণের জন্য ইতিমধ্যেই মেট্রোরেল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেলের নিচের বিশাল অংশ জুড়ে দিনরাত যানজট, স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে সড়ক যোগাযোগে সামগ্রিক গতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে চাঁদার টাকার ভাগাভাগির এই মৌরসিপাট্টা বন্ধ করতে না পারলে যানজট, বিশৃঙ্খলা, যথেচ্ছ ভাড়া আদায় এবং গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিদ্যমান অনিয়ম ও নিয়ন্ত্রণহীনতা রোধ করা অসম্ভব। দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক এবং স্থানীয় প্রশাসনের আওতায় গণপরিবহনে এখতিয়ার বহির্ভূত চাঁদাবাজি বন্ধে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। যেসব কর্তৃপক্ষ এবং জনপ্রতিনিধিরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য তারা তা পালন করতে ব্যর্থ হলেও কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় গণপরিবহনে চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা ও যানজট বন্ধ করা যাচ্ছে না। মহাসড়ক দিয়ে শহরের প্রধান প্রবেশপথগুলোতে অবৈধ লেগুনা ও ইজিবাইকের কারণে যানজটের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফিটনেসবিহীন, রুটপারমিটহীন এসব যানবাহন যানজটের পাশাপাশি বায়ু-পরিবেশ দূষণেও বড় ভূমিকা রাখছে।

মূলত চাঁদাবাজ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদতে লেগুনা ও ইজিবাইক মালিক বা তাদের বিভিন্ন সমিতি নিজেদের ইচ্ছামাফিক চাঁদা আদায় করছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যানের বরাতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারা লেগুনাকে মিনিবাস হিসেবে গণ্য করে সে হিসেবে ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে বিআরটিএ এখন আর লেগুনার রুট পারমিট দিচ্ছে না। তারা ভবিষ্যতে লেগুনা তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন লেগুনা ও ইজিবাইক রাস্তায় নামছে। সেখানে ক্রমবর্ধমান হারে চাঁদাবাজিও অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাস্তায় যানজট, বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ বাড়ছে। হাজার হাজার লেগুনা-ইজিবাইকের সুযোগ অব্যাহত রেখে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সরকারের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন ও রূপরেখার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ ধরনের যানবাহন সড়ক থেকে তুলে দেয়া অপরিহার্য। একশ্রেণীর চাঁদাবাজদের স্বার্থে এ ধরনের যানবাহন কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। মেট্রোরেলের পথ ধরে গণপরিবহনের বেশিরভাগ রুটকে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা করতে হবে। নগরীর পরিবহন ব্যবস্থা স্মার্ট করে তুলতে হবে। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন এমনিতেই কমে আসবে। এজন্য বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগকে সচেতন হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন