মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে শুরু করা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। ডিনিপ্রো শহরে ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি ঘাঁটিতে ওই হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। কিয়েভ, খারকিভ এবং ওডেসা শহরের ওপরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ আগামী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়ার।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের একাধিক শহরের বিদ্যুৎ স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার পর ইউক্রেনের বেশিরভাগ এলাকা এখন জরুরি বø্যাকআউট বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর আগে যুক্তরাজ্য জানিয়েছিল যে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরালো করতে সহায়তার অংশ হিসাবে তারা দেশটিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করবে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে দিতে সহায়তা করবে এসব ট্যাঙ্ক। তবে এর পাল্টা জবাবে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেয়া হলে তা রাশিয়ার অভিযানকে আরও ব্যাপক করে তুলবে এবং তাতে অনেক বেশি সাধারণ মানুষ হতাহত হবে। শনিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যদি প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলেই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানো সম্ভব। এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ডিনিপ্রো শহরে। সেখানকার একটি নয় তলা ভবনের প্রবেশমুখে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে বেশ কয়েকটি তলা ধ‚লিসাৎ হয়ে যায়। ইউক্রেনেরে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই আঘাতে অন্তত ৭৩ জন আহত হয়েছে যাদের মধ্যে ১৪টি শিশুও রয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ভিডিও বার্তায়. জেলেনস্কি জানিয়েছে, ডিনিপ্রো শহরের বিধ্বস্ত ভবনে সারারাত ধরে ধ্বংসস্ত‚প সরানো আর উদ্ধার অভিযান চলেছে। কিন্তু শহরের বিদ্যুৎ অবকাঠামোর কাছাকাছি না হওয়ার পরেও কেন এই ভবনটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা করা হলেও হয়তো এটি রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর লক্ষ্য নির্ধারণে ত্রæটিপূর্ণ ছিল। অথবা রাশিয়ার যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন ভ‚পাতিত করেছে, এটি তার একটিও হতে পারে, যদিও সেই সম্ভাবনা কম।
দুই সপ্তাহ আগে সর্বশেষ ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ইউক্রেন জানিয়েছে, এসব হামলায় খারকিভ আর কিয়েভ অঞ্চলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা ভাবতে শুরু করেছিলেন যে, রাশিয়ার ‘এনার্জি ওয়ার’ হয়তো শেষ হতে চলেছে কারণ এজন্য পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র সংকট রয়েছে রাশিয়ার। তাছাড়া এই কৌশল ইউক্রেনিয়ানদের মনোবল ভাঙ্গতেও সক্ষম হচ্ছে না। কিন্তু শনিবারের হামলা প্রমাণ করেছে যে, মস্কো এখনো এ কৌশল অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে।
ইউক্রেন অভিযানে যোগ দিতে পারে বেলারুশ, হুমকি মস্কোর : রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ আগামী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দিতে পারে যদি মস্কো এই উপসংহারে আসে যে, ইউক্রেন রাশিয়া বা বেলারুশের বিরুদ্ধে ‘শক্তি প্রয়োগ করেছে’, শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালক আলেক্সি পোলিশচুক তথাকথিত ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করে তাসকে বলেন, ‘কিয়েভ শাসনের দ্বারা যেকোন শক্তি প্রয়োগ বা বেলারুশ কিংবা রাশিয়ায় ইউক্রেনের সামরিক আগ্রাসন একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে যথেষ্ট হবে।’ তিনি কয়েক বছর আগে বেলারুশ এবং রাশিয়ার মধ্যে একত্রিতকরণ চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেন, যেখানে দেশগুলো তাদের ব্যাঙ্কিং, সামরিক এবং অর্থনৈতিক খাত পরস্পরের সাথে যুক্ত করেছিল।
‘প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে সমস্ত উপলব্ধ উপায়ে তার অঞ্চল রক্ষা করার এবং মিনস্ক এখানে রাশিয়ার সম্পূর্ণ সমর্থনের উপর নির্ভর করতে পারে,’ পোলিশচুক বলেছিলেন। রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নতুন বছরে নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে যা বেলারুশ থেকে ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমে শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কার কারণে এই সতর্কবার্তাটি আসে। গত ফেব্রæয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া বারবার বেলারুশকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর স্থল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে পশ্চিমারা অভিযোগ করে আসছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেলারুশের সম্ভাব্য হুমকির দিকেও নজর রেখেছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর এয়ার ফোর্স কমান্ডের মুখপাত্র ইউরি ইহানাত সতর্ক করেছেন যে, আগামী দিনে বেলারুশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আসতে পারে, দ্য গার্ডিয়ান অনুসারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যিনি সতর্ক করেছিলেন যে, রাশিয়া ২০২৩ সালে একটি নতুন আক্রমণ শুরু করতে পারে, বলেছেন ইউক্রেনকে বেলারুশের সীমান্তে ‘প্রস্তুত’ থাকতে হবে।
রাশিয়া এখন কয়েক মাস ধরে বেলারুশের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত করছে। এই সপ্তাহে, রাশিয়ার স্থল বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ, আর্মি জেনারেল ওলেগ সালিউকভ, বেলারুশ-রাশিয়ার আঞ্চলিক সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে বেলারুশ সফর করেছেন, বেল্টা অনুসারে। বেলারুশ-রাশিয়ার আঞ্চলিক সামরিক বাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলিকে শক্তিশালী করা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে এবং এই সপ্তাহেও যুদ্ধের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, বেল্টা রিপোর্ট করেছে। বেলারুশও এই সপ্তাহে যুদ্ধ প্রস্তুতির একটি ধাপ পরিদর্শন শুরু করেছে।
বিশেষ অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের গতিশীলতাকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছেন।
‘মস্কো’ অনুষ্ঠানের জন্য রসিয়া-১ টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়ান যোদ্ধারা আবারও তাদের কাজের ফলাফল দিয়ে সবাইকে খুশি করবে। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন, ‘গতিশীলতা ইতিবাচক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেনারেল স্টাফের পরিকল্পনার মধ্যে সবকিছুই বিকশিত হচ্ছে। এবং আমি আশা করি আমাদের যোদ্ধারা তাদের যুদ্ধ কাজের ফলাফল দিয়ে আমাদের আরও একবার খুশি করবে।’
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ শুক্রবার বলেছেন যে, রুশ সৈন্যরা ১২ জানুয়ারী সন্ধ্যায় সোলেডারকে মুক্ত করেছে। তিনি বলেছিলেন যে, সোলেডারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ফলে আর্টিওমভস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ রুট বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যা ইউক্রেনে বাখমুত নামে পরিচিত।
ইউক্রেনের ৩টি হাউইটজার কামান ধ্বংস করেছে রুশসেনা : রুশ বাহিনী গত দিনে খারকভ এবং ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে কাউন্টার-ব্যাটারি যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের তিনটি ডি-২০ হাউইটজার কামান নিশ্চিহ্ন করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
‘পাল্টা ব্যাটারি যুদ্ধে, খারকভ অঞ্চলের শেরবাকোভকার কাছে, সেইসাথে ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের ওরলোভকা এবং ডাইলিভকার কাছে তিনটি ডি-২০ হাউইটজার ধ্বংস করা হয়েছিল,’ মুখপাত্র বলেছেন। কোনাশেনকভ যোগ করেছেন যে, ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের ভাসিলিভকার কাছে দুটি ২সি৩ আকাতসিয়া অটোমেটিক হাউইটজার নির্ম‚ল করা হয়েছিল। একটি ডি-৩০ হাউইটজার এবং একটি ২এস১ গভোজডিকা অটোমেটিক হাউইটজারও ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের নোভোদমিত্রোভকা এবং জাপোরোজিয়া অঞ্চলের গুলাই পলির কাছে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।
রাশিয়ার মত না থাকলে ইউক্রেনের জন্য যেকোনো শান্তি পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে : ইউক্রেনের জন্য যে কোনও শান্তি পরিকল্পনা রাশিয়ার মতামতকে বিবেচনায় নেয়া উচিত, তবে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও এর সমাধান খুঁজে বের করতে অংশ নেয়া উচিত। শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেছেন।
‘পক্ষগুলো শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে বসবে, উভয় পক্ষেরই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর সমর্থনকারীরা ক্লান্তি অনুভব করছে। এ কারণেই আমরা বলি যে, শুধুমাত্র ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে নয়, এর নেতৃত্বের মধ্যে একটি সমাধান বের করা দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপেরও অংশগ্রহণ থাকতে হবে। রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত না করে এমন যেকোনো শান্তি পরিকল্পনা সফল হবে না, বরং ব্যর্থ হবে,’ তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন। কালিন যোগ করেছেন যে, ‘যতদিন সংঘাত চলছে, ইউরোপ যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং এর জনগণ বলবে যে, তারা আর ইউক্রেনীয়দের সমর্থন করতে চায় না।’ সূত্র : তাস, বিবিসি নিউজ, ডেইলি বিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।