পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অন্যতম ফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়ে ক্রিকেট দল। এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেনিনোতে টি-২০ ফরম্যাটের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দল যেমন নিজেদের ইতিহাসের অংশে পরিণত করেছে, তেমনি বাকি ম্যাচগুলোতে উজ্জীবিত ক্রিকেট উপহার দেয়ার প্রেরণা সঞ্চয় করেছে। এ জয় দলকে আরো আত্মবিশ্বাসী করবে। ম্যাচসেরা দিলারা বলেছে, ‘প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারালাম। পরের ম্যাচে আত্মবিশ্বাস নিয়েই নামবো।’ মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে দু’বার খেলেছে বাংলাদেশ, সে দু’বারই শোচনীয়ভাবে হেরেছে। সেই অবনত অবস্থান থেকে উঠে আসা এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৩০ রান ১২ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে তুলে নেয়া মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশ যে পারে, সেটা মেয়ে ক্রিকেট দলও প্রমাণ দিলো। উল্লেখ করা দরকার, প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতকে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয়। মূলপর্বে জয় সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। ক্রিকেটের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়াকে ১৩০ রানে আটকানো এবং পরে অত্যন্ত সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেই রান চেজ করে জেতা ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। তিন বছর আগে এই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। মেয়েদের এই দলটি কি ছেলেদের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবে?
ক্রিকেট বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলও। ফুটবল যে কত প্রিয়, সেটা বুঝা যায় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফুটবলে আমাদের আন্তর্জাতিক কোনো অর্জন নেই, যেমনটি আছে ক্রিকেটে। বাংলাদেশ বিশ্বে গুটি কয়েক ক্রিকেট নেশনের অন্যতম। ক্রিকেট বাংলাদেশের গর্ব ও অহংকারের একটি উপলক্ষও বটে। নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের উন্নতি হয়েছে। তবে সব সময় তা প্রত্যাশার অনুগামী হয় না। লজ্জার কারণও হয়। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক টুনামেন্টে অংশ নিয়ে থাকে। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্রিকেটে আরো ভালো করার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। সে সম্ভাবনা কাজে লাগানোর যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ প্রয়োজন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন বেশি বেশি করা গেলে বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষ ক্রিকেটার তৈরি হতে পারে। ক্রিকেটে ‘প্রতিভার অন্বেষণে’ আরো উদ্যোগী হওয়া যেতে পারে। বলা বাহুল্য, দেশের ছেলেদের ক্রিকেটে যতটা চর্চা আছে, সংগঠন আছে, পৃষ্ঠপোষকতা আছে, মেয়েদের ক্রিকেটে তা নেই। মেয়েদের ফুটবলের ক্ষেত্রেও নেই। তারপরও মেয়েরা ক্রিকেটে ও ফুটবলে যা করছে, সেটা আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক। মেয়েদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা যতটা, তার চেয়ে বেশি রয়েছে আর্থিক বাধা। অনেক সম্ভাবনাময় মেয়ে ফুটবলার বা ক্রিকেটারও আর্থিক কারণে এগুতে পারে না, হারিয়ে যায়। শিশু-কিশোর বা তরুণ-তরুণীদের শারীরিক-মানসিক দৃঢ়তা ও বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কিন্তু খেলাধুলার সুযোগ কমে যাচ্ছে দিন দিন, মাঠের অভাব এর প্রধান কারণ। আগে গ্রামে ও পাড়ামহল্লায় ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। এখন সেটা হয় না। কারণ, মাঠ বা খোলা ময়দান নেই। আগে গ্রাম ও মহল্লাভিত্তিক ক্লাব খেলাধুলায় যে পৃষ্ঠপোষকতা করতো, এখন তারও নিদারুন অভাব। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য খেলাধুলার বিকাশ-বিস্তারে রাষ্ট্রকে আরো এগিয়ে আসা দরকার। বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা অন্যান্য ক্রীড়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যে ব্যয় নির্বাহ করা হয়, প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। আবার ছেলেদের খেলাধুলায় যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, মেয়েদের বেলায় ততটা দেয়া হয় না। ক্রিকেটে বা ফুটবলে মেয়েরা সাম্প্রতিককালে অভূতপূর্ব পারঙ্গমতা ও কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো গেলে তারা দেশের জন্য আরো বড় অর্জন ও সাফল্য নিয়ে আসতে পারে। মেয়েদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। যে কোনো ক্রীড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও নৈপূণ্যের বিকল্প নেই। আমরা সঙ্গতকারণে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাই। আগামী ম্যাচগুলোতে বিজয় লাভ করে তারা ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মতো আর একটি বিজয় নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সগৌরবে দেশে ফিরুক, এই কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।