পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও বিদেশ গমনাগমনের অন্যতম প্রধান সড়ক হিসেবে এয়ারপোর্ট সড়কটি ব্যবহার করা হয়। একে রাজধানীতে প্রবেশের প্রধানতম গেটওয়ায়েও বলা হয়। স্বাভাবিক কারণে এ সড়কটির যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ ও যানজটমুক্ত রাখা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে উড়াল সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সড়কটিতে ব্যাপক যানজট লেগে থাকে। প্রতিনিয়ত মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সড়ক দিয়ে মূল ঢাকা থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রায় ২২-২৩ কিলোমিটার পথ যেতে কখনো কখনো গড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা লেগে যায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে যানবাহনের স্বাভাবিক গতিতে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে আধাঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। এখন যে সময় লাগে তাতে ঢাকা থেকে কুমিল্লা অতিক্রম করে যাওয়া যায়। এমনকি পদ্মাসেতু দিয়ে বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় এ সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করা যায়। অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এয়ারপোর্ট সড়কটি বছরের পর বছর যানজটের অসহায় শিকার হয়ে আছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা গত বৃহস্পতিবার থেকে টঙ্গির তুরাগ নদী তীরবর্তী মাঠ অভিমুখী হয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এই ইজতেমা। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় দফার ইজতেমা ২০ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফার ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিরা তুরাগ অভিমুখী হওয়ায় এয়ারপোর্ট রোডে যে ভয়াবহ যানজটের মধ্যে পড়ে, তা ছিল অকল্পনীয় ও চরম ভোগান্তির। যানজট ঢাকা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন এলাকায়ও পড়ে। যানবাহনকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে অফিসগামী, অফিস ফেরত, বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত যাত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের জ্বালানি পোড়ে। বিদেশগামী অনেকে ফ্লাইট মিস করে। অনেকে পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। এর দায় কে নেবে? স্বাভাবিকভাবে দায় সড়ক ও যানজট নিরসন ব্যবস্থাপনার সাথে যারা থাকে, তাদের ওপর বর্তায়। অথচ এ ব্যাপারে তাদের যেমন দায়ী করা হয় না, তেমনি দায়ের খেসারতও তাদের দিতে হয় না। যত ক্ষতি এবং দায়ের শিকার যেন মানুষেরা। টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে, এটা আগে থেকেই জানা। সঙ্গতকারণেই এয়ারপোর্ট সড়ক দিয়ে কিংবা গন্তব্যস্থলে যাওয়ার অন্যান্য পথ দিয়ে মুসল্লিদের ঢল নামবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে আগাম সড়ক ব্যবস্থাপনার একটি রোডম্যাপ করার দরকার ছিল। বিশেষ করে একদিকে বাণিজ্যমেলা অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমাÑএ দুই উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়কে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাবে, বিষয়টি আগে থেকেই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন ছিল। দেখা গেছে, এয়ারপোর্ট রোড ও অন্যান্য রোডে যে যানজট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। থাকলে যানবাহনের চাপ থাকা সত্ত্বেও তা সহনীয় পর্যায়ে থাকত। ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। আমরা দেখেছি, বিশেষ বিশেষ জাতীয় দিবস উপলক্ষে ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা থাকে। কোন সড়ক ব্যবহার করতে হবে, কোন দিক দিয়ে গন্তব্যস্থলে গমন ও নির্গমন করতে হবে, ডাইভারশন ইত্যাদি পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ করা হয়। অথচ হজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সমাবেশ হিসেবে পরিচিত ইজতেমার মাঠে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ করা হয়নি। এটি ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা, উদাসীনতা ও উপেক্ষা ছাড়া কিছু নয়। তিনদিন ব্যাপী এত বড় একটি সমাবেশ যেখানে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত, তাতে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকবে না, এটা কেমন কথা! যানজটে পড়ে মানুষের যে ভোগান্তি, ক্ষতি তার মূল্য কে দেবে? বিদেশগামী যে শ্রমিক কষ্ট করে অর্থ জোগাড় করে বিদেশ যাওয়ার পথে ফ্লাইট মিস করেছে কিংবা ফ্লাইট বিলম্ব হয়েছে, তার ক্ষতি কিভাবে পোষাবে?
প্রথম পর্বের ইজতেমার আরও একদিন বাকি রয়েছে। তার পাঁচদিন পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। এ সময়ে এয়ারপোর্ট রোড ও উত্তরাঞ্চল থেকে আগমনের সড়কগুলোতে যে যানবাহনের চাপ বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। যদি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়পড়তা বা ঢিলেঢালা থাকে, তাহলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা গত বৃহস্পতিবারের যানজটের চিত্র থেকেই বোঝা যায়। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশের একশ্রেণীর সদস্য যানজট নিরসনে মনোযোগ দেয়ার পরিবর্তে এসব অঞ্চলে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেশি মনোযোগী থাকে। যানজট লেগে থাকলেও সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। যদি বিশেষ এই সময়ে এ ধরনের অপকর্ম চলতে থাকে, তাহলে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। আমরা মনে করি, বিশ্ব ইজতেমা, বাণিজ্য মেলা চলাকালে ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। যানবাহনের চাপ সামলিয়ে কিভাবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, এ ব্যাপারে অবিলম্বে রোড ম্যাপ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের অধিক তৎপর হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।