Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৌভাতের জন্য স্কুল বন্ধ কেন

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বেশ কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথমদিন প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাঙ্গনে নতুন বইয়ের উৎসব পালিত হচ্ছে। এ বছর এর বড় ব্যতিক্রম দেখা গেছে। অধিকাংশ শিক্ষাঙ্গণে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের সব বই তুলে দেয়া যায়নি। কিছু বিদ্যালয়ে দুই-তিনটি বিষয়ের বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরেছে। আর যে সব বই দেয়া হয়েছে তার সম্পাদনা, বাঁধাই এবং কাগজের মান নিয়েও ইতিমধ্যে অনেক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের আঙ্গুল কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দিকে না গেলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়-দায়িত্ব অনেক। সেখানে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার অগ্রাহ্য করা যায়না। এহেন বাস্তবতার মধ্যেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় তার ছেলের বিয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে ২৬৫ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগদানের সুযোগ দিতে একদিন ছুটি দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত রবিবার কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি, রৌমারি ও রাজিবপুর উপজেলার সব বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকরা গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বিয়েতে শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিক দাওয়াত দেয়া হলে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সোনার আংটি, রেফ্রিজারেট, ওয়াশিংমেশিনসহ বিয়ের উপহার সামগ্রী ক্রয়ের জন্য জনপ্রতি ৫০০ থেকে৮০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)’র পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা এই ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষার প্রতি আদর্শিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয়করণের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে যোগ দিতে ২৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টরা যে অুজহাত তুলে ধরেছেন, তা হচ্ছে প্রচন্ড শীতের কারণে নাকি তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল। যেখানে উত্তরের সব জেলাসহ সারাদেশেই কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছিল, সেখানে শীতের কারনে শুধুমাত্র গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি ধোপে টেকে না। শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিজের দলের নেতা-কর্মীদের ছেলের বিয়ের দাওয়াত খাওয়াবেন, এমনকি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সেখানে আমন্ত্রিত হওয়া স্বাভাবিক। স্কুল-মাদরাসার শিক্ষকরা সেখানে আমন্ত্রিত হওয়াও দোষের কিছু নয়। তবে শত শত বিদ্যালয় বন্ধ রেখে দাওয়াতে যাওয়া এবং জনপ্রতি টাকা আদায়ের বাধ্যতামূলক তৎপরতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। যৌক্তিক বা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে মন্ত্রীর ছেলের বৌভাত খাওয়ার দৃষ্টান্ত উদ্বেগজনক বটে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিজেও এর দায় থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে গত বছরও সময়মত একসাথে সব পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া যায়নি। এ বছর সে ধরণের সমস্যা না থাকলেও কাগজ ও মূদ্রণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাঠ্যপুস্তক ছাপা বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। বছরের প্রথম দিন কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এবারই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটল। একদিকে সময়মত পাঠ্যপুস্তক দিতে না পারা, অন্যদিকে মূদ্রিত পুস্তকে নানাবিধ প্রমাদ, বাঁধাই ও কাগজের মানহীনতার দায়ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা এড়াতে পারেননা। দেশের শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষা বিভাগে বিদ্যমান অনিয়ম, দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে যথাযথভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমনপি বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দলীয় বা পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি করতে পারেননা। মন্ত্রী বা সরকারি কর্মকর্তাদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার সংবাদও প্রায়শ প্রকাশিত হয়। এ ধরণের কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করার সরকারি নির্দেশনা ও নীতিমালার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক দলবাজি ও অনভিপ্রেত কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।



 

Show all comments
  • Mahmuda's Recipe ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৩৬ এএম says : 0
    কি লজ্জার, কি দূর্ভাগ্য আমাদের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন