Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যটনকেন্দ্রগুলো দূষণমুক্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বর্জ্যদূষণ নতুন কিছু নয়। পর্যটকরা সেখানে যেমন খুশি তেমন প্লাস্টিক বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলে। এতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ব্যাপক দূষণের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের সমুদ্র সৈকতগুলোতে দূষণের মাত্রা অত্যধিক। কক্সবাজার, পতেঙ্গা ও কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত যেন বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়। শীতের এই সময়ে এসব পর্যটনকেন্দ্রে লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করে। তাদের হাতে প্লাস্টিক ব্যাগ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের প্যাকেট থাকে। দেখা যায়, এগুলো ব্যবহার শেষে সৈকতেই ফেলে যায়। লাখ লাখ পর্যটকের ফেলে দেয়া বর্জ্যে সমুদ্র সৈকতগুলোতে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ব্যাপক উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিতেই এখানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। বর্জ্যব্যবস্থাপনা বলতে কিছু নেই। ফলে এই সৈকতে দূষণের মাত্রাও বেশি। গতকাল ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সয়লাব হয়ে গেছে। জিরো পয়েন্টের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এক কিলোমিটার জুড়ে সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে প্লাস্টিক, পলিথিন ও ডাবের খোসার বর্জ্য। এটি এখন নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আগত পর্যটকরা এক নোংরা পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছে। অথচ এখানে পর্যটকরা আসে সুন্দর পরিবেশে একই সঙ্গে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখতে। নোংরা পরিবেশ তাদের এই অপূর্ব দৃশ্য উপভোগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশের সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। নদ-নদী থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। বিশেষ করে নদীদূষণ এখন সীমাহীন হয়ে পড়েছে। কলকারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যসহ গৃহস্থালী বর্জ্যে একদিকে স্বচ্ছ স্রোতধারা হারাচ্ছে, অন্যদিকে নাব্য হারিয়ে মরে যাচ্ছে। ঢাকার চার নদী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দূষণ থেকে এক বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও বাঁচানো যাচ্ছে না। এর দূষণ এতটাই যে, এতে কোনো জলজ প্রাণী নেই। এর তলদেশে ছয় ফুটের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্যরে স্তর রয়েছে। এই প্লাস্টিক অপসারনের উদ্যোগ নিয়েও তা করা যায়নি। এই নদীকে কেন্দ্র করে অনেক মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শীতলক্ষ্যা, বালু, ধলেশ্বরীর অবস্থাও অনুরূপ। শুধু এই চার নদীই নয়, দেশের অন্যান্য নদ-নদীও মারাত্মকভাবে বিভিন্ন কঠিন ও তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। এসব নদ-নদীতে অবাধে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কলকারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও অপচনশীল প্লাস্টিক-পলিথিন সরাসরি ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্য যেমন নদ-নদী দূষিত করছে, তেমনি সমুদ্রের দূষণও ভয়াবহ করে তুলছে। ইতোমধ্যে সমুদ্র দূষণ নিয়ে উন্নত দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। দিন দিন সমুদ্র দূষণ বেড়ে চলেছে। উন্নত বিশ্বে যখন এ পরিস্থিতি তখন আমাদের মতো দেশে দূষণ কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশে এখন দূষণের জন্য ভয়াবহ উঠেছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এগুলো অপচনশীল এবং পাঁচশ’ বছরেও তা পচে না। যে মাটিতে থাকে সেখানে উদ্ভিদও জন্মায় না। পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও তা অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন যদি বন্ধ করা না যায়, তবে পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবে না। এছাড়া কলকারখানা ও গৃহস্থালীর বর্জ্য মাটি এবং নদ-নদীর পানি দূষিত করে সামগ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব বিনাশ করে দেবে।

পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হলে দেশে স্থানভেদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। যেসব বর্জ্যে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ এবং পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা নেই বললেই চলে। ফলে যে যেভাবে পারছে ব্যবহার্য বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে রাখছে। একটি সুন্দর পরিবেশকে মুহূর্তে দূষিত করে ফেলছে। শহর ও নগরের বর্জ্য নদীবাহিত হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। এতে দূষণ সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। রাতারাতি এই সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ। সিঙ্গাপুরে আইন কঠোরভাবে মানা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া প্রকাশ্যে কেউ যেমন ধূমপান করতে পারে না, তেমনি বর্জ্যও ফেলতে পারে না। এর ব্যত্যয় ঘটালে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশেও এ ধরনের আইন প্রণয়ন এবং তার তাৎক্ষণিক প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা ও দূষণের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নিলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের শাস্তির বিষয়টি ব্যাপক হারে প্রচার করা হলে ধীরে ধীরে জনসচেতনতা গড়ে উঠবে। বিশেষ করে পর্যটনকেন্দ্র ও সমুদ্র সৈকতের দূষণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেখানে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ এবং সেখানে বর্জ্য ফেলতে বাধ্য করতে হবে।



 

Show all comments
  • Rezaul Karim ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশের মানুষ বিনোদনমুখি। দেশে বিনোদনের ভালো কোনো জায়গা না থাকায় ধনাট্য ব্যাক্তিরা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছি। ফলে সরকার বিপুল অঙ্ক রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকার এ খাতটাকে আধুনিক করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • aman ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০১ এএম says : 0
    বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন আর বিনোদনমুখি নেই। সেখানে রয়েছে ছেলে মেয়েদের খারাপ আড্ডাখানা। এছাড়া দূষণ এগুলো দেখবে কে
    Total Reply(0) Reply
  • Tutul ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    সরকার যদি পর্যটনকেন্দ্রগুলো মেরামত করতো তাহলে এ খাতকে সরকার কোটি কোটি রাজস্ব পেতো। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে দেখেও না দেখার বান করছে। কারণ এখানে থেকে তাদের নেতাকর্মী লুটপার করে খেতে পারে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন