Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইউক্রেন অভিযানে সাময়িক বিরতি ঘোষণা রাশিয়ার

এরদোগানকে শান্তির জন্য সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন পুতিন প্রতিরক্ষার কথা বলে কিয়েভে আক্রমণাত্মক অস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ষ ইউক্রেনে ‘হালকা ট্যাঙ্ক’ পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সামনে ক্রিসমাস। তাই ইউক্রেন যুদ্ধে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিন। ক্রেমলিন সূত্রে খবর, জানুয়ারির ৬ ও ৭ তারিখ সেখানে অর্থোডক্স ক্রিসমাস। তাই ওই দু’দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় এই সময়েই ক্রিসমাস পালিত হয়। তা ভালভাবে পালনের জন্য সেখানকার ধর্মীয় নেতা প্রেসিডেন্টের কাছে সাময়িক যুদ্ধবিরতির আবেদন জানান। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সপ্তাহান্তে রাশিয়া যুদ্ধে না জড়ানোর ঘোষণা করল।

২০২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাস থেকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমাদের উস্কানি ও ডনবাসের নেতাদের অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনে বিশেস অভিযান শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিন। তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিতে তা প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেন। বারবারই আলোচনার জন্য রাশিয়ার সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন পুতিন। এবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। তবে তার জন্য কঠিন শর্ত রেখেছেন পুতিন।
গতকাল তুরস্ক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পুতিন। তারপরেই ক্রেমলিনের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়। ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে তার আগে, ইউক্রেনের যে অঞ্চলগুলি রাশিয়া নিজের ভ‚খÐের অন্তর্ভুক্ত করেছে তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে’, এই বার্তা দেয়া হয়েছে রুশ প্রশাসনের তরফে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সাহায্যের মাধ্যমে আসলে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে পশ্চিমি দুনিয়া। অন্যদিকে, তুরস্ক প্রেসিডেন্টের দপ্তরের তরফেও জানানো হয়, পুতিনকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিয়েছেন এরদোগান।

প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বর মাসেই পুতিন ঘোষণা করেছিলেন ডনবাস-সহ চারটি প্রদেশ রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হল। এই ঘোষণার কিছুদিন আগেই ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলে গণভোট করিয়েছিল রাশিয়া। সেখানে বিপুল জয় পেয়েছে বলে দাবি করেছিল ক্রেমলিন। পুতিনের বক্তৃতার পরে সেই দাবিতে সিলমোহর পড়ল বলেই ধরে নিয়েছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়ার এই দাবিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পুতিন বলেছিলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে ডোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপরোজিয়া-এই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করলাম।’
তবে সঙ্গে সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থার প্রধান উরুসুলা ভন দের লিয়েন রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে বেআইনি বলে অভিহিত করেন। একটি টুইট করে তিনি লেখেন, ‘বেআইনিভাবে চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন পুতিন। কিন্তু তাতে কিছুই লাভ হবে না। ওই জায়গাগুলি ইউক্রেনের অংশ এবং চিরদিন সার্বভৌম ইউক্রেন রাষ্ট্রেরই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’ ইউক্রেনের তরফেও বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করেই গণভোট করিয়েছে রাশিয়া। তাই এই ভোটের ফলাফলের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। ডনবাস অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের বিবাদের জেরেই শুরু হয়েছিল বিধ্বংসী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রুশ অধিগ্রহণ মেনে নিলেই আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন পুতিন।

প্রতিরক্ষার কথা বলে কিয়েভে আক্রমণাত্মক অস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনোভ বলেছেন, ওয়াশিংটন কর্তৃক কিয়েভের কাছে হস্তান্তর করা অস্ত্রগুলোর ‘প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতি’ অনেক দিন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ‘ইউক্রেনে ব্র্যাডলি ‘লাইট ট্যাঙ্ক’ পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ‘একটি নিশ্চিতকরণ যে, তারা যুদ্ধে আরও উস্কানি দিতে চাইছে এবং এর সম্ভাব্য পরিণতির বিষয়ে আমাদের দেয়া হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করছে,’ রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেছেন। ‘এটি শেষ পর্যন্ত সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে নাৎসি অপরাধীদের সমর্থন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি সত্যিকারের প্রক্সি-যুদ্ধ শুরু করেছিল। ইউক্রেনে সরবরাহ করা অস্ত্রের ‘প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতি’ সম্পর্কে যে কোনও কথাবার্তা দীর্ঘকাল অযৌক্তিক হয়ে উঠেছে,’ রুশ ক‚টনীতিক বলেছেন।
‘আরও উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং জার্মান চ্যান্সেলর শলৎসের মধ্যে একটি ফোনালাপের পরে উপরে উল্লিখিত সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করা হয়েছে,’ আন্তোনভ জোর দিয়ে বলেছিলেন। ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এ বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয় যে অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ স্বীকার করেছেন: মিনস্ক চুক্তিগুলি কিয়েভকে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে সময় দিয়েছে। ওয়াশিংটন এবং বার্লিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমারা কেবল আমাদের দেশকে প্রতারিত করেছে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাশিয়াকে ২৪ ফেব্রæয়ারি, ২০২২ এর অনেক আগে থেকেইই দুর্বল করতে শুরু করেছে,’ তিনি যোগ করেছেন। ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকেল সমন্বিত কিয়েভের জন্য একটি নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সরাসরি ইঙ্গিত দেয় যে, ইউক্রেনে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য ওয়াশিংটনের কোন ইচ্ছা নেই, আন্তোনভ বলেছেন। ক‚টনৈতিক মিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ সংঘাত দীর্ঘায়িত করার জন্য কে দায়ী তা নিয়ে কারোর এখনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। মার্কিন প্রশাসনের সমস্ত পদক্ষেপ রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য কোনো ইচ্ছার অভাবকে নির্দেশ করে।’

ইউক্রেনে ‘হালকা ট্যাঙ্ক’ পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি : ফ্রান্সের পর এবার ইউক্রেনে সাঁজোয়া যান পাঠানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছে আমেরিকা এবং জার্মানি। একে ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থকদের মধ্যে একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসাবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০টি ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকেল পাঠাবে, যাকে ‘হালকা ট্যাঙ্ক’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অচিরেই এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। পাশাপাশি বার্লিনও তাদের হালকা ট্যাঙ্ক ‘মার্ডার’ পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেন সামরিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে ফ্রান্স রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে ‘হালকা যুদ্ধ ট্যাঙ্ক’ দেবে বলে জানিয়েছিল। তাদের এ ঘোষণা কারণেই পশ্চিমাদের নীতির পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাখ্যোঁর পদক্ষেপ পশ্চিমা মিত্রদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যারা ভøলাদিমির পুতিনকে উসকানি দেয়ার ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাঙ্ক পাঠাতে দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করে আসছিল। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাঁজোয়া যানের জন্য পশ্চিমের কাছে আবেদন করেছেন, যা তিনি বলেছিলেন যে, রাশিয়ার ট্যাঙ্কগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য তাদের খুবই প্রয়োজন যা এখনও পর্যন্ত সংঘাতে রাশিয়ার জন্য একটি মূল সুবিধা ছিল। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, পশ্চিমা মিত্ররা অনুরূপ পদক্ষেপের ঘোষণা করায় তারাও সাঁজোয়া যান পাঠানোর বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

পোল্যান্ড ইতিমধ্যে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করেছে, এবং ফ্রান্সও বুধবার বলেছে যে, তারা তাদের এএমএক্স-১০আরসি সাঁজোয়া যানগুলির একটি অনির্দিষ্ট সংখ্যা পাঠাবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করতে তাদের নতুন বিশাল ২৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করে ব্র্যাডলি ট্যাঙ্ক পাঠাবে। এছাড়াও সাহায্য প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করা হবে হামভি সাঁজোয়া যান, মাইন রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেক্টেড যান বা এমআরএপি এবং প্রচুর পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য গোলাবারুদ। এটি হচ্ছে রাশিয়ান বাহিনীকে পরাস্ত করতে কিয়েভকে সাহায্য করার জন্য ক্রমবর্ধমানহারে প্রাণঘাতী এবং শক্তিশালী অস্ত্র পাঠানোর হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ পদক্ষেপ। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, তাস, রয়টার্স, আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ