পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বে ঢাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বদনামের শেষ নেই। বসবাসের অনুপযোগী, অসভ্য নগরী, শব্দ ও বায়ূদূষণের নগরী থেকে শুরু করে নোংরা এবং অপরিচ্ছন্ন নগরীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই। পরিবেশ দূষণের সাথে যুক্ত হচ্ছে একের পর এক নতুন দূষণ। রাজধানীর সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখন, তোরণ ও বড় বড় বিলবোর্ড। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও ব্যানার-ফ্যাস্টুন রয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্লোগান থেকে শুরু করে দাবী-দাওয়ার কথা। রাজধানী যেন এখন ব্যানার-ফ্যাস্টুনের নগরীতে পরিণত হয়েছে। মাসের পর মাস ধরে মাথার ওপর এগুলো নির্বিঘেœ ঝুলছে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে কখনো কখনো এগুলো খুলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে নিচে সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। বিশ্বে এমন অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা রাজধানী আছে কিনা জানা নেই। অথচ ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও দেয়াল লিখন প্রতিরোধে আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। ফলে গ্রাম থেকে নগরে সর্বত্র সৌন্দর্য ও পরিবেশ বিনষ্টকারি এসব ব্যানার-ফ্যাস্টুন অবাধে লাগানো হচ্ছে।
রাজধানীকে বলা হয়, দেশের মুখচ্ছবি। এর সৌন্দর্য দেখেই দেশের সভ্যতা এবং উন্নতির চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রায় প্রত্যেক দেশই রাজধানীকে পরিপাটি ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এক্ষেত্রে যেন ঢাকা ব্যতিক্রম। সৌন্দর্য বিনষ্ট করে এটিকে পরিণত করা হয়েছে অসুন্দরের নগরীতে। যেদিকে চোখ যায়, কেবল রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার-ফ্যাস্টুন। এসবের কারণে আকাশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃষ্টিগোচর হয় না। দূরের দৃশ্য দেখার কোনো সুযোগ নেই। সড়কের পাশে পিলার, ফ্লাইওভার, ভবন থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ব্যানার-ফ্যাস্টুন, পোস্টার, বাড়িভাড়া ও বিজ্ঞপ্তির পোস্টার লাগানো হয় না। এমনকি সদ্য চালু হওয়া মেট্রোরেলের পিলারেও এগুলো নির্বিঘেœ লাগানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল তো বটেই প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যানার-ফ্যাস্টুনেও রাজধানীজুড়ে অবাধে লাগানো হচ্ছে। যেকোনো উপলক্ষে ব্যানার-ফ্যাস্টুন লাগানো হচ্ছে। সচিবালেয়ের সামনের সড়ক ও দেয়ালেও অবাধে এগুলো সাঁটিয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কোনো মিছিল, সমাবেশ ও সম্মেলন হলে তো কথাই নেই। নেতা-কর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফ্যাস্টুনে রাজধানী ছেয়ে যায়। নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্ট ও সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলেও তাতে কিছু যায় আসে না। এসব যে কোনো সচেতন ও দায়িত্বশীল কাজ নয়, তা বোধটুকু সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নেই। যতই দিন যাচ্ছে, রাজধানীর সৌন্দর্য বিনষ্টকারী অরাজকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অরাজকতা ঠেকানোর আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় ২০১২ সালে ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ প্রণীত হয়। আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্যকোনো স্থানে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। কোনো ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগালে তার বিরুদ্ধে অন্যুন ৫ হাজার টাকা এবং অনুর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- আরোপ করা যাবে, অন্যথায় ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা যাবে। দুঃখের বিষয়, রাজধানী জুড়ে অসংখ্য ব্যক্তিগত ও দলগত ব্যানার-ফ্যাস্টুন ঝুলে থাকলেও কারো বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত আইন প্রয়োগের নজির নেই। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকলেও তার কার্যক্রম নেই। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তাদের ব্যানার-ফ্যাস্টুনের কারণে আইন প্রয়োগ করতে মোবাইল কোর্ট দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ, ব্যানার-ফ্যাস্টুনে যাদের ছবি থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে সাহস পায় না। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এসব ব্যানার-ফ্যাস্টুন উচ্ছেদের কথা বলেছে। তবে তা বাস্তবে কতটা কার্যকর করতে পারে, তাই এখন দেখার বিষয়।
রাজধানীর সৌন্দর্য বিনষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে ব্যানার-ফ্যাস্টুন। বছরের পর বছর ধরে এই অপকর্ম চলে আসছে। এ পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। মোবাইল কোর্ট যাতে নির্বিঘেœ ও দ্বিধাহীনভাবে ব্যানার-ফ্যাস্টুন ব্যবহারকারি, সে যে দল বা প্রতিষ্ঠানের হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা দেখেছি, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ আইন বর্হিভূত কিছু লিখলেই পুলিশ খুঁজে বের করে তাকে ধরে নিয়ে আসে। অথচ প্রকাশ্যে মাথার ওপর আইন লঙ্ঘন করে যারা আইন লঙ্ঘন করে ব্যানার-ফ্যাস্টুন ঝুলিয়ে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্টকারি এসব ব্যানার-ফ্যাস্টুন, পোস্টার, দেয়াল লিখন যারা ঝুলাচ্ছে ও লিখছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য। এ ব্যাপারে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে যারা ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও পোস্টার লাগাবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সৌন্দর্য ধরে রাখতে এর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।