পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে শীতকাল এসে গেছে এবং তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রাই এখন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। শীতকালের এই ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে সকল মানুষেরই গরম কাপড়ের প্রয়োজন। কিন্তু গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য এদেশের অনেকে মানুষেরই নেই। তাই আজ আমাদের সবাইকে এই সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সবার জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ দেশের আবহাওয়া বরাবরই ভালো এবং শীত ও গরমের মাঝামাঝি। তাপমাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো উচ্চ নয় আর শীত প্রধান দেশগুলোর মতো কমও নয়। গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে এই তাপমাত্রা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে এবং কখনো কখনো এর থেকেও নিচে নেমে আসে। তখন বাতাস খুব ঠান্ডা হয়ে যায় এবং মানুষের তীব্র শীত অনুভূত হয়। কখনো কখনো খুব বেশি কুয়াশা পড়ে এবং কুয়াশার কারণে এসময়ে কয়েক ফুট দূরের কিছু দেখা যায় না। অনেক সময় একটানা কয়েকদিন সূর্যের আলোও দেখা যায় না। আর দেখা গেলেও আলোর উজ্জ্বলতা থাকে না। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়, নদীপথে লঞ্চ-জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয় এবং আকাশপথে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে এবং মানুষের প্রাণহানিও হয়। আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষেরা তাদের সক্ষমতার কারণে প্রয়োজনীয় শীত নিরাবক কাপড়, কম্বল ও লেপ-তোষক কিনে এবং বাসায় ওয়াটার হিটার ব্যবহার করে নিজেদের শীত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু গরিব মানুষেরা কষ্ট পায় বেশি। তাদের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ছনের বা টিনের। এসব ঘরে এমনিতেই ঠান্ডা একটু বেশিই লাগে। আবার আর্থিক সংকটের কারণে তারা প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, কম্বল এবং লেপ-তোষক কিনতে পারে না। পানি গরম করার জন্য ওয়াটার হিটার বা গিজার কেনার ক্ষমতা এসব গরিবদের নাই। ফলে শীতকালে গরিব মানুষদের কষ্টটা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। এ অবস্থায় এই সব গরিব মানুষের প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, কম্বল ও লেপ-তোষক দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা আমাদের সবারই ধর্মীয়, নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব।
সারাদেশের সামর্থ্যবান মানুষেরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে প্রতিটি শীতার্ত মানুষকে সাহায্য করাটা কঠিন এবং অসম্ভব নয়। দেশের এক কোটি মানুষ যদি আজ প্রত্যেকেই মাত্র একশত টাকা করে দান করে তাহলে নিমিষেই জোগাড় হয়ে যেতে পারে শত কোটি টাকা। আর যদি দান করে প্রত্যেকেই এক হাজার টাকা, তাহলে নিমিষেই জোগাড় হতে পারে হাজার কোটি টাকা। এই উদ্যোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ ধনী মানুষদের আজ শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা যদি আমরা শীতার্তদের সাহায্য করতে পারি, শীতার্ত মানুষদের কল্যাণে তহবিল গঠন করতে হবে। উদ্যোগ নিলে সেই উদ্যোগে এদেশের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা করবে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেÑ এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। আজ শুধু প্রয়োজন উদ্যোগের এবং প্রয়োজন উদ্যোক্তার। শীতে যারা কষ্ট পাচ্ছে তারা আমার-আপনার মতই মানুষ। তারা প্রত্যেকেই আমাদের কারো না কারো পিতামাতা, কারো না কারো ভাইবোন অথবা কারো না কারো আত্মীয়। সর্বোপরি তারা মানুষ এবং আমাদের সমাজেরই অংশ।
প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতি বছর শীত আসে আর এই শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায় অনেক মানুষ। ঠান্ডায় অনেকে কাবু হয়ে যায় এবং কাঁপতে থাকে। এই অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য কমপক্ষে একটি সুয়েটার ও একটি কম্বলের ব্যবস্থা সহজেই করা যায়। মানবতার কল্যাণে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য করাটা ধর্মীয় কাজেরই অংশ। তাই আজ আর কোনো ধরনের অজুহাত নয়, কোনো ধরনের পিছুটান নয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে আসুন, সবাই মিলে শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াই।
লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক ।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।