২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
প্রায় তিন বছর আগে এমন শীতেই শোনা গিয়েছিল করোনা ভাইরাসের খবর। চীনের উহান শহরে প্রথম শোনা গিয়েছিল অজানা জ্বরে মৃত্যুর কথা। রাতারাতি লকডাউন করে দেওয়া হয় সারা শহর। ক্রমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যায় আমেরিকা সহ ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশ। সেই তালিকায় যোগ হয়েছিল বাংলাদেশ। শুরু থেকেই চীনে জারি করা হয় ‘জিরো কোভিড’ নীতি। এই তিন বছরে করোনার গ্রাফ কখনও ঊর্ধ্বমুখী আবার কখনও নিম্নমুখী হয়েছে। এ বছর আবার চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন বিএফ.৭।
বছরের শেষে অতিমারি পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস কখনওই একেবারে নিঃশেষ হবে না। সুতরাং, এই ভাইরাস সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। করোনার শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খোঁজ পাওয়া গেছে ওমিক্রন বিএফ.৭। এটি ওমিক্রনের বিএ.৫-এর একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট।
চীনে ইতিমধ্যেই খোঁজ মিলেছে এই বিএফ.৭-এর। চীন প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চীনে নতুন করে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও বিশ্ব গনমাধ্যমের ধারনা এই সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে গুয়াংজু প্রদেশ ও চংকিং প্রদেশ থেকে। বেজিংয়ে দৈনিক ৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। আমাদের দেশেও ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস পৌঁছে গিয়েছে। চীন থেকে আসা এই রুগী কোন মারাত্মক লক্ষন ছাড়াই সুস্থ আছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও চারজন রোগীর খোঁজ মিলেছে। দেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ টিকার দুটো ডোজ নিয়েছেন। কিন্তু মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন। করোনা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য তৃতীয় ডোজের উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র।
বিএফ.৭-এ সংক্রমিত একজন রোগী একসঙ্গে ১৮-২০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ভারতে যদি এই ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করে তাহলে এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের থেকে বড় আকার ধারণ করবে। যদিও, এই উপজাতির মারণ ক্ষমতা কম। ভারতের চারজন রোগীই এখন সুস্থ। কিন্তু তবু চিন্তা রয়ে যাচ্ছে। তাই মাস্ক পরার ও ভিড় জায়গা এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এখনও এটার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়নি, তবে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে টিকা না নেওয়া ব্যক্তির মধ্যে অনেক ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। যাদের অন্যান্য রোগ আছে, অন্তঃসত্ত্বা তাদের মধ্যে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
> উপসর্গ সমূহ
গলা ব্যাথা, হাঁচি, সর্দি, নাক বন্ধ, কফ ছাড়া কাশি, জ্বর -মাথাব্যথা, কফ সহ কাশি কথা বলতে অসুবিধা, শারীরিক ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে বিএফ.৭-এ আক্রান্তদের মধ্যে। এছাড়াও পেটের উপসর্গ যেমন বমি এবং ডায়ারিয়াও দেখা যাচ্ছে রোগীদের মধ্যে। তাই এই উপসর্গগুলো দেখা দিলেই সতর্ক হোন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি পরামর্শক কমিটির নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো নেয়া হয়েছে:-
ওমিক্রনের নতুন ধরন অত্যন্ত সংক্রামক। সম্প্রতি চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব দেশে ওমিক্রন ধরনের বিএফ.৭ সাব-ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
কমিটির পরামর্শে বলা হয়, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে চলমান কোভিড সংক্রমণ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
১. কোভিড ১৯ এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনিক্যাল কমিটি সব সময় পর্যালোচনা করছে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরছে।
২. ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/ ৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওয়াত আনার ব্যাপারে সব প্রকার জনসংযোগ, প্রচার প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ফাইজার তাদের ৯ মাস মেয়াদি ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১২ মাস এবং ১২ মাস ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১৫ মাস বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, যা দেশে বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে দেওয়া হচ্ছে বলে কমিটি মনে করে।
৪. আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড ১৯ এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
৫. পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
৬. দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন।
পরামর্শঃ-
* মাঝে মাঝে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া। * হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ না করা। * হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা। * ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে না মেশা। * মাংস ও ডিম খুব ভালোভাবে রান্না করা। * বন্য জীবজন্তু কিংবা গৃহপালিত পশুকে খালি হাতে স্পর্শ না করা। * ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যেকোনো খবরের জন্য একটি দারুণ প্রতীকী ছবি হচ্ছে মাস্ক বা মুখোশ পরা কোন মানুষের মুখচ্ছবি, বিশ্বে বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থাহচ্ছে মাস্ক ব্যবহার।
যাঁদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। ওমিক্রনে বিএফ.৭-এ আক্রান্ত হলে শরীরে কোন-কোন উপসর্গ প্রকাশ পায়, সেই সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। তবে যারা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ তাদেরকে আহ্বান জানাবো তারা যেন দ্বিতীয় বুস্টার অর্থাৎ চতুর্থ ডোজ নিয়ে নেন। বিশেষ করে সম্মুখ সারির ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজের টিকা নিয়ে নিতে হবে। যারা কোমরবিডিটির মধ্যে আছেন, তাদের অবশ্যই সুরক্ষা সামগ্রী যেমন মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার, নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলতে হবে। শীতের এই মৌসুমে ঘোরাঘুরি, উৎসব, অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। কিন্তু যেকোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন। উৎসব অনুষ্ঠান করতেই হলে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক মানুষকে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
চিকিৎসক ও কলাম লেখক
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মোবাইল: ০১৮২২-৮৬৯৩৮৯
B‡gBj: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।