Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডলার সঙ্কটে এভিয়েশন ও পর্যটনে ধসের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো একদিকে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলোতে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি ও ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উপর তা বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর এজেন্টরা অর্থ নিজ দেশে পাঠাতে পারছে না। ইতোমধ্যে ২০৮ মিলিয়ন ডলার ব্লক হয়ে যাওয়ায় টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডলার সংকটের আশু সুরাহা না হলে আগামী কয়েক মাসে এয়ারলাইন্সে টিকিটের মূল্য আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইটসংখ্যা কমাতে থাকলে দেশের এভিয়েশন অবকাঠামোখাতে স্থরিবতা দেখা দেবে। বিশেষত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ লক্ষ্য হারাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। দেশের এভিয়েশন ব্যবস্থার উপর বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন এবং অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। এ খাতের স্থবিরতা দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আকামা সঙ্কট, অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা এবং করোনাভাইরাস মহামারির সময়কার স্থগিতাবস্থা কাটিয়ে দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ১১ লক্ষাধিক মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। এর শতকরা ৮০ ভাগই সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সাধারণত গ্রামের নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষরাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের জন্য গিয়ে থাকেন। এমনিতেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গমনের খরচ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া এবং টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদেশে কর্মসংস্থান ব্যয় বেড়ে তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডলার সঙ্কট দূর করে প্রবাসী কর্মসংস্থানের অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে না পারলে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মীও রেমিটেন্স প্রবাহে গতি ফেরাতে পারবে না। ইতোমধ্যে তার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। গত ৮ বছরের মধ্যে গত বছর রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। টিকিটের খরচসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতার কারণে প্রবাসীরা দেশে অর্থ প্রেরণ কমিয়ে দিয়েছে অথবা হুন্ডি বা বিকল্প পথে অর্থ প্রেরণ করতে আগ্রহী হচ্ছে। ডলার সংকটের জন্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালদের বিদেশে অর্থপাচারের দায় সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, সুশাসন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন।
সিভিল এভিয়েশনের সূত্র মতে, করোনাকালীন বাস্তবতার পর ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমানসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৫৮ লাখ ৮৪ হাজারে দাঁড়িয়েছিল। ডলার সংকটের কারণে ইতোমধ্যে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে টার্কিশ এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ১৪ ফ্লাইটের পরিবর্তে ৫টিতে নামিয়েছে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ১০টি থেকে ৭টিতে নামিয়েছে, কুয়েত এয়ালাইন্স ১২টি থেকে কমিয়ে ১০টি করেছে এবং মালিন্দো এবং ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ৫টির পরিবর্তে ১টি করে ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন আমরা আমাদের বিমানবন্দরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি, এভিয়েশনে আঞ্চলিক হাবে পরিণত করতে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল করছি, তখন বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো এখানে ফ্লাইট কমিয়ে দিচ্ছে! বৃটিশ এয়ারওয়েজ, লুফ্থানসাসহ বেশ কয়েকটি এভিয়েশন কোম্পানি আগেই তাদের ফ্লাইট সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন ডলার সঙ্কটসহ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আরো বেশি সংখ্যক বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ফ্লাইট বন্ধ করে দিলে দেশের সিভিল এভিয়েশন সার্ভিসে লোকসান বেড়ে অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। দেশের পর্যটনের সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। এমনিতেই আমাদের বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি, ফ্লাইট বিপর্যয়, টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা সঙ্কট রয়েছে। ডলার সংকটের আশু সমাধানের পাশাপাশি বিমানবন্দরে সেবার মানবৃদ্ধি, যাত্রী হয়রানি বন্ধ, ইমিগ্রেশনে অহেতুক বিড়ম্বনা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে ইতিবাচক গতির সুফল পেতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিমানের টিকিট খরচসহ প্রবাসী কর্মীদের খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে এয়ারলাইন্সের টিকিটের মূল্যসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আস্থার সঙ্কট দূর করতে এবং রেমিটেন্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • Md Parves Hossain ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪৮ এএম says : 0
    দ্রৃুত এর সমাধান না করলে আমাদের বৈদেশিক শ্রম বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং রেমিটেন্স বাড়বে না।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর হাসান তনু ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪৬ এএম says : 0
    অতি দ্রুত এই সংকটের নিরসন করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪৬ এএম says : 0
    সরকারকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না...এদিকে একটু সুনজর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪৭ এএম says : 0
    লুটেরার দল যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না আরও তীব্রতর হতে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন