পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক। গত সোমবার বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক রিপোর্টে ২০২২ সালে ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১জন নিহত এবং ১২৩৫৬জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে। এর আগের বছরের চেয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে বলে এ রিপোর্টে বলা হয়েছে। দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথ ও নৌপথে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান দেয়া হলেও এর শতকরা নব্বইভাগের বেশি সংঘটিত হয়েছে সড়কপথে। গত আট বছরের মধ্যে এ হার সর্বোচ্চ। মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকের মত ক্ষুদ্র মোটর ভেহিকলের সংখ্যা চারগুণ বেড়ে যাওয়ার তথ্য থেকেই দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে এসব যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধিকেই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে যাত্রী কল্যান সমিতির এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সারাদেশে যানবাহন দুর্ঘটনা ও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা শুধুমাত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। কারণ দুর্ঘটনার সব তথ্য গণমাধ্যমে বা থানা-পুলিশের নথিতে আসে না।
গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির জন্য মটরসাইকেল, ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ৫৫ ভাগের বেশি সংঘটিত হয়েছে এসব যানবাহনের কারণে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, যানবাহনের সংখ্যাবৃদ্ধি দুর্ঘটনা বৃদ্ধির বড় কারণ হলেও মূল কারণ হচ্ছে, সড়কপথের নিরাপত্তার জন্য প্রত্যাশিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে যে সব বিধি বিধান চালু করার কথা ছিল তার সঠিক বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা এভাবে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। সড়কপথে গণপরিবহনের সংকটের কারণে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মানুষ ব্যাপক সংখ্যক মটরসাইকেল কিনে নিবন্ধিত করেছে। গত বছর নিবন্ধিত প্রায় পৌনে ৬ লাখ মটরযানের শতকরা ৮৮ শতাংশই ছিল মটরবাইক। প্রত্যাশিত চাকরি বা কর্মসংস্থান না পেয়ে একশ্রেণীর বেকার যুবক মটর সাইকেল কিনে রাইড শেয়ারিংকে কর্মসংস্থান বা আয়ের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত ঢাকার ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে শত শত বাইক চালককে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান থাকতে এবং যানজটের রাস্তায় সারি সারি মটরসাইকেল দেখা যায়। কয়েক বছর আগেও ঢাকার যানজটে এমন চিত্র ছিল না।
যাত্রি কল্যাণ সমিতির রিপোর্ট অনুসারে দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক মানুষ হতাহত হচ্ছে। একেকটি মৃত্যু পরিবারে ও সমাজে গভীর সংকট সৃষ্টি করে থাকে। বছরে ২৩ হাজার মানুষ হতাহত হওয়ার মধ্য দিয়ে দুর্ঘটনাজনিত পারিবারিক-অর্থনৈতিক সংকট সমাজে গভীর রেখাপাত করছে। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকার মাইলফলক অগ্রগতির দাবি করছে। মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চললে উন্নয়নের সাফল্য জনমনে বিরূপ প্রভাব হয়ে দেখা দিতে পারে। সড়কপথে গণপরিবহণের কাঙ্খিত শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকরা বরাবরই অগ্রাহ্য করে আসছে। একই সাথে ঢাকার রাজপথ-ফুটপাথ থেকে শুরু করে দেশের সব আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ দখলবাজি ও কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির সাথে জড়িতরাও যেন ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে গত বছরের রিপোর্টে যাত্রীকল্যাণ সমিতি ১২ দফা সুপারিশ করেছিল। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রতি, ২০১৮ সালেরসড়ক পরিবহন আইনসহ সে সব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে লাগামহীন দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যুর মিছিল বেড়ে যেত না। গণপরিবহনের ফিটনেস, রাস্তার বেদখল, ট্রাফিক আইনের স্বচ্ছ বাস্তবায়ন, চালক-মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগসহ প্রতিটি দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত বিচার এবং ক্ষতিপুরণ নিশ্চিত করা হলে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তাহীনতা সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়। পরিহন মালিক-শ্রমিক এবং বিআরটিএ সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেচ্ছাচারিতামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার এবং ডিজিটাল নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।