Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনামূল্যের বই ও মাদরাসার সিলেবাস নিয়ে প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসব হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে এদিন তুলে দেয়া হয় বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ২০১০ সাল থেকে এ কর্মসূচি চলে আসছে। সেই থেকে এ পর্যন্ত সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি বই বিতরণ করেছে। এটা বিশ্বের ইতিহাসে এক অন্যন্য নজির। নতুন বছরে নতুন বই হাতে পাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিরল আনন্দের উপলক্ষ। এ দিনটির জন্য তারা অধীর অপেক্ষায় থাকে। নতুন বইয়ের অবর্ণনাযোগ্য ঘ্রান যে কী ভালো লাগে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সঙ্গে এখন এটা বলতে হচ্ছে যে, অতীতে এমনও হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে বই পায়নি। দুয়েকটি বই প্রথম দিনে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি বই পেতে বছরের অর্ধেক পার হয়ে গেছে। এও কখনো কখনো দেখা গেছে, বইয়ের ছাপা-বাঁধাই-কাগজ অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব কারণে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যেই শুধু ব্যহত হয়নি, শিক্ষার্থীদের আনন্দেও ভাটার টান পড়েছে। আমরা জানি, করনোর কারণে দু’বছর বই উৎসব সেভাবে হতে পারেনি। গত বছর নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে বই উৎসব উদযাপিত হয়েছে। এবার সেটা হবে না, এই আশা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার শোচনীয় ব্যর্থতা ও তীর্যক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। উৎসবের দিনে রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে কোথাও পূর্ণসেট বই শিক্ষার্থীরা পায়নি। কোথাও দু’চারটি, কোথাও অর্ধেক, কোথাও বা তার কিছু বেশি সংখ্যক বই দেয়া হয়েছে। সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে বই না পেয়ে ফিরতে হওয়ার মতো অভিজ্ঞতাও অনেকের হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বইয়ের কাগজের মান অতিশয় নিম্ন। ছাপা-সেলাই-বাঁধাই যাচ্ছেতাই, হাতে নেয়ার মতো নয়। শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়ার আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। কেন এমনটি হলো, সে প্রশ্ন সঙ্গত। সরকারের কাড়ি কাড়ি টাকা গেছে, অথচ বই মানসম্পন্ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়া, সব শিশুর হাতে যেন সুন্দর কাগজের ছাপা চকচকে বই ওঠে। তার এই সদিচ্ছাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বই উৎসবের আয়োজক। বই ছাপার দায়িত্ব পালন করে পৃথক কর্তৃপক্ষ। দেখভাল বা তদারকির দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। সুতরাং বই না পাওয়া ও বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন, নানাবিধ অসঙ্গতি ও অব্যবস্থাপনার দায় দুই মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারে না। অন্যদিকে নতুন সিলেবাস নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, যার মীমাংসা ছাড়াই বই ছাপানো হয়েছে। বিশেষ করে, মাদরাসা শিক্ষা ও তার পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলেম-ওলামা, বিভিন্ন সংগঠন ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো লাগাতার অভিযোগ ও প্রতিবাদ করে আসছে। তাদের দাবি, ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারই অংশ হিসেবে তারা ইসলামী শিক্ষা উঠিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা চায়, এদেশে হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মহীন শিক্ষার বিস্তার, যা জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। মাদরাসা শিক্ষার প্রকৃতি ও ঐতিহ্য পাল্টে দেয়ার জন্য সিলেবাস এমনভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার খুব একটা পার্থক্য নেই। নজির হিসাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসের কথা বলা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পাঠ্যবই আছে ১৫টি। তার মধ্যে ৪টি বই ইসলামী ও আরবী বিষয়ের ওপর। বাকি ১১টি সাধারণ শিক্ষার। মাদরাসায় যদি সাধারণ শিক্ষাই দেয়া হয়, তাহলে স্কুল ও মাদরাসার মধ্যে কোনো তফাত থাকে না। যারা এভাবে মাদরাসার পাঠ্য বই নির্ধারণ করছেন, তারা যে কৌশলে মাদরাসাকে স্কুলে পরিবর্তিত করার দূরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করছে, তাতে কি কোনো সন্দেহ থাকে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইসলামের প্রতি অটল বিশ্বাস রয়েছে। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিনি ইসলামপ্রিয়। ইসলামী শিক্ষা বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি তার অপার অনুরাগ রয়েছে। তার সরকার মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে যা করেছে, অতীতে কোনো সরকার তা করেনি। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি শতাব্দীর একটি প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। অথচ, তারই আমলে মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করছে এবং সেই ষড়যন্ত্র তারা গোপনে সংগোপনে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি।

বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন পাঠ্যবই তুলে দেয়া নিশ্চিত করতে পারিনি, বিনা মূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের সরকারি কর্মসূচি ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে চরম ব্যর্থ হয়েছি। প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এতটা উন্নত হয়েছে যে, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পাঠবই ছেপে-সেলাই-বাঁধাই করে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া মোটেই কঠিন কোনো কাজ নয়। এ জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকিও এক্ষেত্রে জরুরি। ব্যর্থতা কোথায়, তা কারো অজানা নেই। সেখানেই হাত দিতে হবে। যাদের ব্যর্থতা, তাদের বিরুদ্ধে যথোচিৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এত বড় একটা মহৎ কাজ বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হবে, ব্যহত হবে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অনুরূপভাবে একথাও বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার এত বছরেও আমরা একটি সর্বজনগ্রাহ্য শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও কার্যকর করতে পারিনি। এ যাবৎ বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। কোনো কমিশনই জাতির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে পারেনি। যেসব শিক্ষানীতি হয়েছে, তাদের মধ্যে শিক্ষা সংকোচনের একটা প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। প্রায় সব শিক্ষানীতিতেই মাদরাসা শিক্ষার প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো হয়েছে। অথচ, মাদরাসা শিক্ষার শত শত বছরের ঐতিহ্য আছে। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো শিক্ষাব্যবস্থা আলেম-ওলামা, ইসলামবেত্তা এবং অধিকতর ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। একারণেই মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য যাতে ক্ষুণ্ন না হয় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • Sowkat Ali ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:১০ এএম says : 0
    আজ থেকে ২০/৩০ আগের বিনামূল্যের বই আর আজকের বিনামূল্যের বইয়ের প্রিন্ট ও কাগজের মান তুলনা করলে বুঝতে পারবেন কতটা স্মার্ট হচ্ছে দেশ!
    Total Reply(0) Reply
  • এম. মিজানুর রহমান ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
    আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খারাপ মানের কাগজ দিয়ে, সবচেয়ে খারাপ মানের প্রেস থেকে বই তৈরি করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Milan Halder ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
    নবম দশম শ্রেণীর বই দুই বছর পড়তে হবে, অথচ এত নিম্ন মানের নিউজ প্রিন্ট কাগজ দিয়ে বই ছাপা হয়েছে যে ছয় মাস পরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zulhass Uddin ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
    আজ থেকে ৩০ বছর আগে ক্লাস ওয়ান পাশ করেছি।তখনও বইয়ের কাগজ সাদা পৃষ্ঠার ছিলো। অথচ, এই স্মার্ট যুগে পঁচা পৃষ্ঠার বই!
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Uzzaman ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:১০ এএম says : 0
    আমার বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরেই আস্থা নেই। যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের দেশের চাকরি পাব না। সমস্ত আইটি সেক্টর ইন্ডিয়ার হাতে। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখার চেয়ে গরু পাল রাখা অনেক ভালো।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Khairuzzaman ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:১০ এএম says : 0
    আমার মেয়ে রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্কুলের ছাত্রী। সে ক্লাস সিক্স এর শুধু ইংরেজি বইটা পেয়েছে। নিউজ প্রিন্টের বই। মেয়ে আমার মন খারাপ করেছে। আমিও অবাক হয়েছি। তাহলে কি আমাদেরকে এই অব্যবস্থাপনার মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১৪ এএম says : 0
    দায়সার বই বিতরণ! এই নিম্নমানের বই বাচ্চারা তিন মাসও সংরক্ষণ করতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন